Samakal:
2025-06-16@02:38:24 GMT

ট্রাম্পের ইরান মিশন

Published: 17th, March 2025 GMT

ট্রাম্পের ইরান মিশন

শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেন্টাগনকে ইয়েমেনের হুতিদের বিরুদ্ধে ‘অপ্রতিরোধ্য প্রাণঘাতী শক্তি’ ব্যবহার করে ‘একটি চূড়ান্ত ও শক্তিশালী সামরিক অভিযান শুরু’ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ।

শনিবার শুরু হয়ে মার্কিন হামলাটি রোববারও ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও অন্যান্য এলাকায় অব্যাহত ছিল। হামলায় ৩১ জন নিহত এবং ১০১ জন আহত হয়েছে, যার বেশির ভাগই শিশু ও নারী। নিরস্ত্র নারী ও শিশুদের ওপর এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড কেবল কাপুরুষতার কাজ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। 
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে হুতিদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘তোমাদের সময় শেষ এবং আজ থেকে তোমাদের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। যদি হামলা বন্ধ না হয়, তাহলে তোমাদের ওপর এমন গজব নাজিল হবে, যা তোমরা আগে কখনও দেখনি।’
এর পর ট্রাম্প হঠাৎ ইরানকে উদ্দেশ করে বলেছেন, হুতিদের সমর্থন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তোমাদের পুরোপুরি জবাবদিহির মুখোমুখি করবে এবং আমরা এতে মোলায়েম হবো না।’

এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার কর্তৃত্ব বা অধিকার ট্রাম্পের নেই।’ তিনি বলেন, হুতিরা কেবল ‘ইসরায়েলি গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদ’-এর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডের কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান যে কোনো আক্রমণের ‘ধ্বংসাত্মক জবাব’ দেবে।
বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশের তেহরান সফরের দুই দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের এই যুদ্ধবাজ মনোভাব দেখা দিল। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে ট্রাম্পের একটি চিঠি হস্তান্তর করেন, যেখানে তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিরোধ করতে ইরানের সমর্থন নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তেহরান পারমাণবিক আলোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও তার আঞ্চলিক নীতির ব্যাপারে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

নিশ্চয় এত দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইয়েমেনের এ নিষ্ঠুর আক্রমণ প্রাপ্য নয়। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সব খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য সরবরাহের ওপর অবরোধের কারণে হুতিরা এখনও কোনো জাহাজে আক্রমণ করেনি, যদিও তারা তা করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। হুতিদের অভিযোগ, তাদের সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞার হুমকিকে ট্রাম্প প্রশাসন বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, এই নিষেধাজ্ঞা গাজার জনগণের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত কেবল ইসরায়েলি নৌযানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
স্পষ্টতই হুতিরা ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চাইছে না এবং তাদের ইরানের প্রক্সি হিসেবেও বিবেচনা করা উচিত নয়। জানুয়ারিতে গাজা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হুতিরা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। তবুও ট্রাম্প বলে বেড়াচ্ছেন, বাইডেন প্রশাসনকালে হুতিরা মার্কিন জাহাজে আক্রমণ করেছিল।
মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড শনিবারের হামলাকে একটি বৃহৎ পরিসরে পরিচালিত অভিযানের সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকতে পারে। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমেরিকান জাহাজ ও বিমানের এবং আমাদের সৈন্যদের ওপর হুতিদের আক্রমণ সহ্য করা হবে না এবং তাদের হিতৈষী ইরানকে সতর্ক করা হয়েছে, তাদের নৌপরিবহনের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা হবে।’

এ ধরনের কাল্পনিক বক্তব্যের আড়ালে হেগসেথ সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন, ট্রাম্প আগামী কয়েক মাস উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বজায় রাখবেন। কারণ, ইরানের পারমাণবিক সমস্যা একটি গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শনিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ল্যাভরভকে ফোন করে হুতিদের ওপর হামলার মার্কিন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। এতে বলা হয়েছে, জবাবে ল্যাভরভ ‘শক্তি  প্রয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এবং আরও রক্তপাত রোধে সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সব পক্ষের রাজনৈতিক সংলাপে অংশগ্রহণের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।’ আচ্ছা, পরিস্থিতি বদলে গেছে, তাই না? ১৫ মার্চের ঘটনায় ট্রাম্প তাঁর পররাষ্ট্রনীতিতে শক্তির মাধ্যমে শান্তির নেতৃত্ব দেওয়ার নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলেছেন।

এম.

কে. ভদ্রকুমার: ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট র দ র ওপর ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লো ইরান

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। রবিবার মধ্যরাতে ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর পর, সোমবার (১৬ জুন) ভোর হতে না হতেই দ্বিতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান।সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে ইরানের এটি দশম আক্রমণ।

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, সোমবার ভোরে ইরান নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরপরই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হোম ফ্রন্ট কমান্ড সাধারণ ইসরায়েলিদের বোমা শেল্টার ও আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছে।

তেহরান টাইমস জানিয়েছে, রবিবার রাতে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বন্দরনগরী হাইফায় সরাসরি আঘাত হানে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কঠোর সেন্সরশিপ সত্ত্বেও, অনলাইনে প্রচারিত ফুটেজে হাইফায় একটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগুনে পুড়ে গেছে বলে দেখা গেছে। অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। তেল আবিবের একাধিক স্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

রবিবার রাতে ইরান ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমি এবং কিরিয়াত গাটের কৌশলগত স্থানগুলোর পাশাপাশি হাইফার অন্যান্য অঞ্চলগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। এতে ইসরায়েলের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে তেহরান।

আগের দিনগুলোতে, ইরান ইসরায়েলের বৃহত্তম তেল শোধনাগার এবং ১৫০টিরও বেশি সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনায় হামলা চালানোর দাবি করেছে।

শুক্রবার ভোরে তেহরানের আবাসিক ভবন ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা চালানোর পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।

তেহরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭ জন ইরানি সামরিক কর্মকর্তা, ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ২২০ জনেরও বেশি ইরানি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

ইরান ইসরায়েলকে ‘অসহায়’ না করা পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ