Samakal:
2025-06-16@08:34:48 GMT

শঙ্খচিলের বাড়ি কই

Published: 17th, March 2025 GMT

শঙ্খচিলের বাড়ি কই

লাল-নীল আলোকবাতির শহর। সূর্যের আয়ু ফুরানোর আগেই এ শহর আলোকিত হয় নানা রঙে। দিবারাত্রি এক করে অসহ্য ছুটে চলা। শিকড়হীন এই ছুটে চলা। যেখানে সবটাই অনিশ্চিত। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুতেই সুপ্ত স্বপ্নগুলো গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে। হাজার কাঠখড় পুড়িয়ে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিজের পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত করা। যুক্ত তো হলো, এবার বাড়ি ছাড়ার পালা। একবার যে এই বাড়ি ছাড়ল, তার আর বাড়ি ফেরা হলো না। নতুন শহর, হাজারো নতুন মানুষের ভিড়ে নিজেকে বড্ড অসহায় অনুভব হতে থাকে। তারপর ক্যাম্পাসে আসতেই সিনিয়র-জুনিয়র ফ্যাক্ট। পরিবার-পরিজন ছেড়ে নতুন শহরে আসা মানুষটার অসহায়ত্বে যেন দূর থেকে চোখ রাঙানো। 
দিন যায়, মাস যায় শঙ্খচিল নিজেকে মানিয়ে নিতে থাকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। কর্মব্যস্ত দিনগুলোর শেষাংশে সে যেন সূর্যের দীর্ঘায়ু কামনা করতে থাকে। কারণ দিনশেষে মেস, হোস্টেল কিংবা হলের প্রাচীন দেয়ালগুলো তাকে বড্ড কোণঠাসা করে তোলে। একাকিত্বের চরম উপলব্ধি অনুভব করায় কর্মব্যস্ত দিন, দিনের পর রাত এক বাধ্যতামূলক ছুটে চলা। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন মায়ের স্নেহের আঁচল, বাবার যত্ন, পরিজনের অতিরিক্ত করা ব্যাপারগুলোর অবাধ প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয় আর নিজেকে জগতের সবচেয়ে অসহায়বোধ হতে থাকে। চলতি পথে সঙ্গী হয় অনেকে কিন্তু আপনজন পাওয়া এই চাকচিক্যে মুশকিল। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ একসঙ্গে নিয়ে চলা। উপলব্ধির বয়সে মানসিক চাপে জর্জরিত হয়ে পড়ে সবাই। কখনও কখনও বোধ হয় নিঃশ্বাসটাও যেন রুটিনের গ্যাঁড়াকলে পড়েছে। হতাশা, ক্লান্তি, মানসিক চাপের সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনৈতিক চাপ– সর্বোপরি লোকসমাগমে থেকেও একাকিত্বের যে ব্যাপারটা।
অনিশ্চিত এক ঘরের খোঁজে শঙ্খচিল হয় বাড়িছাড়া। সেই কাঙ্ক্ষিত ঘর কি সে পাবে? নাকি সহস্রের মতো ঝরে পড়বে সভ্যতার অতল গহ্বরে? এই উত্তর কেউ জানে না। 
এভাবেই দিবারাত্রি এক হয়ে যায় অনিশ্চিত ঘরের খোঁজে। শঙ্খচিলের আর বাড়ি ফেরা হয় না। v
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্লেষণ: ইসরায়েলিরা এখন বুঝতে পারছে ফিলিস্তিনি ও লেবানিজরা কী ভোগ করছে
  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি