ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর রাঁচিতে টেস্ট খেলতে গিয়েছিল ভারত ক্রিকেট দল। রাঁচির বিশ্রা মুন্ডা বিমানবন্দরে ভারতীয় দল অবতরণের পর শুবমান গিলের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেন ফ্রান্সিস মিঞ্জ। তিনি এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষী। গিল তখন গুজরাট টাইটানসের অধিনায়ক। আর ফ্রান্সিসের ছেলে রবিন মিঞ্জ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আইপিএলের মিনি নিলামে প্রথমবারের মতো দল পান। ৩ কোটি ৬০ লাখ রুপিতে রবিনকে সেবার কিনেছিল গিলের দল গুজরাট। বিমানবন্দরে বাবা কেন গুজরাট অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেটা এতক্ষণে পরিস্কার। কিন্তু ফ্রান্সিসের স্বপ্ন শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়।

আরও পড়ুনপ্রতিপক্ষকে ধাক্কা দিয়ে জরিমানা গুনলেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার১২ ঘণ্টা আগে

ফ্রান্সিস স্বপ্ন দেখেন, এই বিমানবন্দরে প্রতিদিন যেভাবে হাজারো লোকের যাতায়াত, তাঁর ছেলেও একদিন ভারত জাতীয় দলের হয়ে বিমানে এভাবে যাতায়াত করবে; কিন্তু সেই স্বপ্ন তো আর চাইলেই পূরণ হওয়ার নয়। কিছু ধাপ আছে এমন স্বপ্নপূরণের। তার মধ্যে একটি ধাপ যেমন আইপিএলে ভালো করা। গত বছর আইপিএলেই রবিনের সেই ‘পরীক্ষা’ দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল। কাল হয়ে দাঁড়ায় বাইক দুর্ঘটনা। যে কারণে গতবার আর আইপিএলে খেলা হয়নি। তাঁর জায়গায় বিআর শরথকে দলভুক্ত করে গুজরাট। তবে রবিনের অপেক্ষা ফুরোচ্ছে এবার। মেগা নিলামে ৬৫ লাখ রুপিতে রবিনকে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস দলভুক্ত করে গত বছর নভেম্বরে।

২২ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া আইপিএলে ২২ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান এখন মুম্বাইয়ের হয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায়। রবিন ঠিক যেদিন আইপিএলের মাঠে নামবেন, সেদিন কিন্তু নতুন ইতিহাসেরও দ্বার খুলবে। আর সেই দ্বারটা খুলবেন স্বয়ং রবিন নিজেই। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম আদিবাসী ক্রিকেটার খেলবেন রবিন।

আরও পড়ুনসেই এমবাপ্পেই এখন বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রিয়ালকে১৭ ঘণ্টা আগে

ঝাড়খন্ডের রাঁচিতে জন্ম নেওয়া রবিন মহেন্দ্র সিং ধোনির বড় ভক্ত। ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও চেন্নাই সুপার কিংস কিংবদন্তিকে দেখে শৈশব থেকে নিজেকে গড়ে তুলেছেন রবিন। ধোনির মতোই বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিংয়েও দক্ষ; কিন্তু বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হওয়ায় নিজ এলাকায় তাঁর পরিচিতি ‘রাঁচির ক্রিস গেইল’ নামে। উপমার ব্যাপ্তি বাড়তে বাড়তে কেউ কেউ তাঁকে ‘ঝাড়খন্ডের ক্রিস গেইল’ও বলেন। এ পর্যন্ত ৭টি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৮১.

০৮। স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলোয় ভালো করায় আইপিএলের স্কাউটের নজরে ছিলেন দীর্ঘদিন।

আইপিএলের গত মৌসুমেই স্বপ্নপূরণ হয়ে যেত রবিনের। কিন্তু গুজরাটের অনুশীলনে যোগ দেওয়ার আগে নিজের কাওয়াসাকি বাইক নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। বাড়ির কাছাকাছি এসে অন্য এক বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মক আঘাত পাওয়ায় তাঁর গোটা মৌসুমই শেষ হয়ে যায়। হতাশ হয়েছিল পরিবারও। মুম্বাই ২০২৪ আইপিএলেও তাঁর পিছু ছুটে গুজরাটের কাছে হেরে যাওয়ার পর এবার তাঁকে পেয়েছে। ঈষান কিষানের শূন্যতা পূরণে রবিনকে তৈরি করতে চায় ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি।

গত নভেম্বরে রবিন মুম্বাইয়ের দলভুক্ত হওয়ার পর তাঁর বাবা ফ্রান্সিস টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন, ‘সর্বোচ্চ (আইপিএল) পর্যায়ে রবিন আবারও সুযোগ পাওয়ায় আমরা অবিশ্বাস্যরকম খুশি...সে ২০ কিংবা ৩০ লাখ রুপিতে বিক্রি হলেও আমরা খুশি হতাম। পতনের পর আবারও ওঠাটা সব সময়ই ভালো। এতে সন্তুষ্টি বাড়ে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তিন অধিনায়ক কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তামিমের

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন দেশের অন্যতম সফল ব্যাটার ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সমকাল পত্রিকায় দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, জাতীয় দলের নেতৃত্বের বর্তমান কাঠামো তার কাছে কার্যকর মনে হয়নি। তার মতে, তিন সংস্করণে তিনজন অধিনায়ক থাকা দলের পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশেষ করে নাজমুল হোসেন শান্তকে সরিয়ে নতুন অধিনায়ক নিয়োগের প্রক্রিয়াকে দুঃখজনক বলেই অভিহিত করেছেন তামিম। তার কথায়, ‘বিসিবি চাইলে যে কাউকে অধিনায়ক করতে পারে। কিন্তু যেভাবে শান্তকে সরানো হয়েছে, সেটা সম্মানজনক হয়নি। তার সঙ্গে আগেই কথা বলা উচিত ছিল।’

আসন্ন টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ সামনে রেখে বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘খেলোয়াড়দের মধ্যে অনিশ্চয়তা, বোর্ডের অস্থিরতা এবং হঠাৎ করে অধিনায়ক পরিবর্তনের মতো সিদ্ধান্ত মাঠের পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলছে।’ এই অবস্থায় তামিমের পরামর্শ, বোর্ডের উচিত খেলোয়াড়দের আস্থার জায়গা তৈরি করা। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস দেওয়া যে– যা কিছুই ঘটুকু বোর্ড তোমাদের সঙ্গে আছে। ‘এই খেলোয়াড়রাই কিন্তু ২০২৬ ও ২০২৭ বিশ্বকাপে খেলবে’ বলেন তিনি।

তামিমের মতে, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগেও রয়েছে কাঠামোগত দুর্বলতা। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের একাদশ গঠনের সিদ্ধান্তে থাকা ঠিক নয়। তার অধীনে তিনজন নির্বাচক আছেন; কোচ, সহকারী কোচ আছেন। সবাইকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এর পর দল ফেল করলে জবাবদিহি চাইবেন। নিজেই সবকিছুতে জড়িয়ে গেলে নির্বাচক, কোচিং স্টাফকে প্রশ্ন করবে কে?’ 

বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান হলে তামিম কী করতেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচক প্যানেল ও কোচিং স্টাফকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতাম। ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতাম। উন্নত কোচিং অভিজ্ঞতার জন্য কাউন্টির সঙ্গে কাজ করতাম, যেন আমাদের কোচরাও বিশ্বমানের কোচিং শিখতে পারেন।’

এছাড়াও বিপিএল ও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগে খেলার বাইরে, অফ সিজনে এক-দু’জন ক্রিকেটারকে কাউন্টিতে পাঠানোর উদ্যোগকে জরুরি মনে করেন তামিম। পাশাপাশি এইচপি, ‘এ’ দল এবং টাইগার্স প্রজেক্টে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বানও জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ