রোজার দিনে এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয় যে আমরা ধন্দে পড়ে যাই, রোজাটা আসলেই নষ্ট হয়ে গেল কিনা। আসুন, এ সম্পর্কে কয়েকটি মাসআলা জেনে নিই।
মাসআলা ১: রোজা অবস্থায় মুখে জমা থুতু বা লালা গিলে ফেলার কারণে রোজার ক্ষতি হয় না। কিন্তু মুখ থেকে রক্ত বের হলে সেই রক্ত থুতুর সঙ্গে গিলে ফেললে তাতে রোজা ভেঙে যাবে। তবে থুতুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ কম হলে এবং গিলে ফেলার সময় রক্তের অনুভূতি না পেলে রোজা নষ্ট হবে না। (কিতাবুল ফিকহ, ১/৯২০)
মাসআলা ২: দাঁতের ফাঁকে গোশত বা সুপারির অংশ অথবা অন্য কোনও বস্তু কিংবা খাদ্যদ্রব্য আটকে থাকলে তা যদি খিলাল বা জিহ্বা দিয়ে বের করে ফেলা হয়, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। কিন্তু তা বের না করে যদি গিলে ফেলে এবং সেই খাদ্যদ্রব্য একটি ছোলা বুটের সমান বা এর চেয়ে বেশি পরিমাণের হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। এর কম হলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে তা যদি মুখ থেকে বের করে এনে পরে আবার গিলে ফেলে, তবে খাদ্যটি এই পরিমাণের চেয়ে কম হলেও রোজা ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি, ১/২০৮)
মাসআলা ৩: চোখের দু-এক ফোঁটা পানি মুখে চলে গেলে রোজার ক্ষতি হয় না। ইবনে আব্বাস (রা.
মাসআলা ৪: সুস্থ অবস্থায় রোজার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান, অচেতন বা পাগল হয়ে যায় তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। নাফে (রহ.) বলেন, ইবনে ওমর (রা.) নফল রোজা অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে যেতেন কিন্তু এ-কারণে রোজা ভেঙে ফেলতেন না। (বাইহাকি, সুনানুল কুবরা, ৪/২৩৫)
মাসআলা ৫: রোজা অবস্থায় প্রয়োজনে জিহ্বা দিয়ে কোনও স্বাদ নেওয়া বা প্রয়োজন হলে শিশুর জন্য খাদ্য চিবানো মাকরুহ নয়। সতর্ক থাকতে হবে, স্বাদ যেন গলার ভেতরে চলে না যায়। রোজাদার নারী তার শিশুর জন্য খাদ্য চিবানোকে ফকিহ ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) দোষের মনে করতেন না। (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক, ৪/২০৭)
মাসআলা ৬: রোজা রেখে টুথ পাউডার ইত্যাদি ছাড়া শুধু মিসওয়াক করা মাকরুহ নয়। এতে রোজার ক্ষতি হয় না; বরং অন্য সময়ের মতো রোজা রেখে মিসওয়াক করা সুন্নত। আমির ইবনে রাবিয়া (রা.) বলেন, নবীজিকে (সা.) আমি রোজা অবস্থায় বহুবার মিসওয়াক করতে দেখেছি। (বুখারি, ১/২৫৯); মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক, ৪/২০০)
মাসআলা ৭: সাহরিতে কেউ এত খেয়েছে যে, সূর্যোদয়ের পর তার ঢেকুর আসতে শুরু করেছে, সঙ্গে পানিও বের হচ্ছে, এতে রোজার ক্ষতি হবে না। (ফাতাওয়া রশিদিয়া, ৩৭১)
সুতরাং এই সকল অবস্থায় প্রথমেই রোজা নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত খাবারে মনোযোগ দেওয়া উচিত হবে না। প্রয়োজনে যোগ্য আলেমদের সহায়তা নিন।
আরও পড়ুনযে কারণে রোজা ভেঙে যায়০৪ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ য়
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।