খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা, আহত ১
Published: 19th, March 2025 GMT
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সুবি ত্রিপুরা (৩৫) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফের (প্রসীত) সদস্য। আজ বুধবার সকালে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী তাইন্দং ইউনিয়নের হেডম্যানপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সুবি ত্রিপুরা দলে অন্তিন ত্রিপুরা নামে পরিচিত। তাঁর বাড়ি হেডম্যানপাড়া এলাকাতেই। একই সময়ে তাঁর বোন তারাপাতি ত্রিপুরা (২১) গুলিতে আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপিডিএফ সূত্রে জানা গেছে। তবে বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি।
ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা প্রথম আলোকে বলেন, সকালে সাংগঠনিক কাজে গিয়ে সুবি ত্রিপুরা তাঁর বোনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ১০ থেকে ১৫ জন সশস্ত্র ব্যক্তি তাঁকে উদ্দেশ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে ঘটনাস্থলে সুবি ত্রিপুরার মৃত্যু হয়। একই সময়ে গুলিতে সুবি ত্রিপুরার ছোট বোন আহত হয়েছেন। হামলাকারী ব্যক্তিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএসের (সন্তু) নেতা-কর্মী বলে অভিযোগ করেন অংগ্য মারমা।
অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জেএসএস নেতাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বেলা দেড়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল দুর্গম এলাকায় হওয়ায় এখনো লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।
এর আগে গত রোববার রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের খামারপাড়ায় নির্মল খীসা নামের ইউপিডিএফের এক সদস্য গুলিতে নিহত হন। ৩ মার্চ পানছড়ি লোগাং সীমান্তবর্তী হাতিমারা এলাকায় ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যে গোলাগুলির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে রূপসী চাকমা নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।