গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ বাজার। গতকাল বুধবার সকাল থেকে সেখানে বেগুন নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও যেন কেনার লোক নেই। কয়েকদিন আগেই প্রতি কেজি বেগুন ৮ টাকা বিক্রি করেছেন তারা।

এখন সেটা কমিয়ে ৫ টাকা কেজি দরে ছেড়ে দিচ্ছেন, তবু কেনার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, ক্ষেত থেকে নিয়ে আসার পরিবহন খরচও উঠছে না। সব মিলে এবার বেগুনের বাম্পার ফলন হলেও বিক্রি করতে গিয়ে মাথায় হাত সুন্দরগঞ্জের কৃষকদের। 

কথা হচ্ছিল উপজেলার বেলকা চরের বেগুন চাষি হাসেন আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, যে দরে বেগুন বিক্রি করছেন, তাতে পরিবহন এবং ক্ষেত থেকে বেগুন ওঠানোর দিনমজুর খরচ উঠবে না। অথচ শীতকালে দাম ভালো হওয়ায় পাঁচ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। এতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এ পরিস্থিতি হবে, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। পাঁচ বিঘা জমির বেগুন নিয়ে তাঁকে অন্তত লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে পনেরোটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৫০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে, যার বেশির ভাগ চাষ হয়েছে তিস্তার চরে। ফলন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। 

কাপাসিয়ার বাদামের চরের আরেক চাষি আনছার আলী বলেন, শীতে বেগুনের ভালো দাম পাওয়া গেছে। বর্তমানে দাম অনেক কম। দেড় মাস আগেও ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন খরচই উঠেছে না। কাঁচাবাজারে বেগুন মজুতও করে রাখা যায় না। ফলে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। 

সুন্দরগঞ্জ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শামীম মিয়া বলেন, বর্তমানে চরের বেগুনের ব্যাপক আমদানি হয়েছে। মান অনুসারে প্রতি কেজি বেগুন ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষিদের যে খরচ, তাতে ৫ টাকা দরে কেজি বিক্রি করলে লাভ করতে পারবে না। সংরক্ষণাগার না থাকায় এক দিনের বেশি কাঁচামাল মজুত রাখা যায় না। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, শীতকালে সবজির বাজারদর অনেক বেশি হওয়ায় চরের কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষিতে সম্ভাবনাময় স্থানে পরিনত হয়েছে। ধান, গম, আলু থেকে শুরু করে সব ধরনের ফসল ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে চরে বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দরপতন হওয়ায় চাষিদের একটু কষ্ট হচ্ছে। মৌসুমভিত্তিক এসব ফসল সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষণাগার থাকলে কৃষকরা আরও ভালো দাম পেতেন। সংরক্ষাণার নির্মাণের জন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরগঞ জ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

ঝিনাইদহে কৃষকের হাত-পা ও গলা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার

নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। স্বজনরা জানান, সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল। 

আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুলালী বেগম ছাড়াও যারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে।’’ 

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সালাম আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে আবার তাকে পাশের গোয়ালঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি হয়ে গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করে।’’ 

আটক দুলালী বেগম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।’’ 

নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যে জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছে। 

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঢাকা/মাসুম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাঁকো বিড়ম্বনার ৪০ বছর 
  • গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা, নারী আটক
  • গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা