‘কুড়িগ্রামের মোস্তফা হিমাগারোত তিন দিন ঘুরি আসছি আলুর স্লিপ পাই নাই। একজনে কইলো জাগা নাই। সব স্লিপ ব্যবসায়ীরা নিয়া গেইছে। এ্যলা হামার আলুর কি হইবে। কেনার মানুষ নাই। জমিতে ফ্যালে থুইছি। অহন আল্লা ভরসা।’

হতাশার সুরে কথাগুলো বলছিলেন উলিপুরের জোয়ান সেতরা চরের কৃষক বকুল মিয়া। তিনি তিন একর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম কম। আড়তে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১১ টাকা কেজিতে। আবাদ খরচ হয়েছে ২০ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে আলু আবাদ করে লোকশান গুনতে হবে তাঁকে।

এ হক হিমাগারে আলু রাখার স্লিপ পাননি শেখের খামার চরের কৃষক ফকরুল ইসলাম। হিমাগারের মালিক আগেই মজুতদার ব্যবসায়ীদের কাছে সব স্লিপ বিক্রি করে দিয়েছেন। তিস্তা চরের কোনো কৃষকই স্লিপ পাননি। আগেরবার মহাজন ব্যবসায়ীরা জমি থেকে আলু কিনে নিয়ে গেছেন। এবার কেউ আসছেন না। বাজারেও আলুর দাম কমেছে। আগাম আলুতেও লোকসান হয়েছে। ফকরুল ভেবেছিলেন দ্বিতীয় দফা আলুর ভালো বাজার পাবেন। কিন্তু সে আশায়ও গুড়ে বালি। আলু নিয়ে তিনিও মহাবিপদে পড়েছেন।

বকুল মিয়া ও ফকরুলের মতো তিস্তার চরের শেখ ফরিদ, শাহেদুল ইসলাম, মিন্টু মিয়াসহ শতাধিক কৃষক আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে বিপদে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, ‘স্বনির্ভর আলু চাষী সমিতি’ নামে একটি ব্যবসায়ী ও মজুতদার সিন্ডিকেট আগেভাগেই হিমাগারগুলোতে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। আর তারা আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভালো ফলন হলেও লোকসানের বিপদ কাটছে না। এ অবস্থায় আগামী মৌসুমে বীজ আলু সংকটে পড়বেন তারা।

কিশোরপুর চরের কৃষক মহসিন আলি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঋণ করে চড়া দামে সার-বীজ কিনে ৫ একর জমিতে আলুর চাষ করেছি। ফলন ভালো হলেও বাজারে আলুর দাম এত কম যে, বিক্রি করে বীজের টাকা ওঠে না। একটা স্লিপের জন্য অনেক চেষ্টা করেও পাইনি। অথচ কৃষক নয় সাইদুর রহমান, মতিয়ার রহমান ও রফিকুল ইসলাম আলু সংরক্ষণের স্লিপ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে স্বনির্ভর আলু চাষী সমিতির সদস্য মতিয়ার রহমান, স্থানীয় সাইদুল ইসলাম ও রফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কেউ ফোন ধরেননি।

এ হক হিমাগারের পরিচালক মো.

তোফায়েল হোসেন বলেন, স্বনির্ভর আলু চাষী সমিতি আলু সংরক্ষণের বুকিং দিয়েছে। তাই কোনো কৃষককে স্লিপ দিতে পারিনি। 

মোস্তফা হিমাগারের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যে এসেছে তাকেই স্লিপ দিয়েছি। কে কৃষক, কে ব্যবসায়ী কীভাবে বুঝব? জেলার ৪টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪৮ হাজার টন। কিন্তু এবার ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ উৎপাদন হওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, আলু সংরক্ষণের বিষয়টি কৃষি বিপণন বিভাগের দেখার কথা। তবে আমরা উপজেলা পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের চেষ্টা করছি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল ল ইসল ম ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

নেতানিয়াহু অঞ্চলজুড়ে আগুন লাগাতে চাইছেন: ইরানের প্রেসিডেন্টকে এরদোয়ান

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন লাগাতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু ইরানে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। গতকাল শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক ফোনালাপে এরদোয়ান এ কথাগুলো বলেছেন।

এরদোয়ানের দপ্তরের দেওয়া এক বিবৃতি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় হওয়া জাতিগত হত্যার ঘটনা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরাতে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইরানি প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সৌদি আরব, পাকিস্তান, জর্ডান ও মিসরের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছেন এরদোয়ান। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি।

শনিবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান সতর্ক করে বলেন, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলই এখন এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তুরস্ক সরকারের যোগাযোগবিষয়ক দপ্তরের বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

দপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, এরদোয়ান মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। সিসিকে এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলের হামলা গভীরভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করেছে। আইনের তোয়াক্কা না করার যে মনোভাব নেতানিয়াহুর মধ্যে দেখা গেছে তা বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির।

এরদোয়ান আরও সতর্ক করেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ