যশোরে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চার বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্তকে নিয়ে থানায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। 

বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে অভিযুক্তকে ও শিশুটিকে হেফাজতে নেয় কোতয়ালি থানা পুলিশ। এসময় অভিযুক্তকে কয়েক দফায় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে একদল শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে থানার এক কনস্টেবল হামলার শিকার হন। 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিশুকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন মেয়েটির বাবা। ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত শহরের সার্কিট হাউজপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

শিশুটির বাবার অভিযোগ- তিনি, তার স্ত্রী ও ছেলে কাজের জন্য বাইরে ছিলেন। দুপুরের খাবার খেতে তিনি বাড়ি এসে দেখেন তাদের প্রতিবেশীর পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে তার মেয়ের পরিধেয় পোশাক খুলে পা বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি মেয়েকে উদ্ধার ও ছেলেটিকে আটক করেন। কিন্তু ছেলেটি তার হাত থেকে ছুটে পালিয়ে যায়।  

এদিকে, শিশুটির ভাইয়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে যশোর সরকারি এমএম কলেজ ও জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তকে আটকের চেষ্টা করে। সেখানে অভিযুক্তের বাবা ও তাদের বাড়িওয়ালার সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা থানায় এসে অবস্থান নেয়। বিকেল চারটার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়ার সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। এছাড়া বিকেল ৫ টার পর থানা ভবনের ভিতরে সংশ্লিষ্ট অভিযোগে এক ব্যক্তিকে মারধর করে তারা। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থানায় কর্তব্যরত পুলিশ তাদের ভবনের বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে এক পুলিশ সদস্যকে ধাওয়া করে বিক্ষুব্ধরা। ওসির কক্ষে হেফাজতে থাকা ওই অভিযুক্তকে কয়েকদফা ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা ও মারধর করে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় থানার ভিতরে তারা ধর্ষক বিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। 

এ অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কোতয়ালি থানায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, “চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। তার বয়স নির্ধারণে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

এদিকে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সন্ধ্যায় আসামিকে আদালতে পাঠালে বিচারক কারাগারে প্রেরণ করেছেন।

ঢাকা/রিটন/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ

এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।  
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।

আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।

বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।

বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ