ইসরায়েল-লেবাননের পাল্টাপাল্টি হামলা
Published: 22nd, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান হামলার মধ্যেই লেবাননে যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে উঠেছে। শনিবার লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলার পর ইসরায়েলও পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে দু’জন নিহত ও আটজনের বেশি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় হামলা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল-লেবানন পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এ অবস্থা চলতে থাকলে আরও বেসামরিক জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে ইসরায়েলে হামলা বন্ধ করে হিজবুল্লাহ। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় আবারও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইয়েমেনের হুতি ও লেবাননের হিজবুল্লাহ আবারও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। এ প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েক সপ্তাহ পর আজ দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ঘটল। ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহও দীর্ঘ যুদ্ধে সংগঠনটির একাধিক শীর্ষ নেতা নিহত হন।
আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দাবি, লেবাননের রকেট হামলার প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ লেবাননে কয়েক ডজন বিমান হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের ছোড়া তিনটি রকেট প্রতিহত ও পাল্টা গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ইসরায়েলের গোলা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের দুটি শহরে আঘাত হানে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, তেল আবিবের বিমান সীমান্ত সংলগ্ন আরও তিনটি শহরে হামলা চালিয়েছে।
এদিকে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যও ইসরায়েলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দেশগুলো। ইসরায়েলের জিম্মিদের মুক্তি দিতে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের প্রতিও আহ্বান জানান তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গাজায় জাতিসংঘের প্রকল্প পরিষেবা কার্যালয় ভবনে হামলার ঘটনায় তারা ‘গভীরভাবে মর্মাহত’।
গাজায় গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৬ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ১৩০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৪৯ হাজার ৭৪৭ জন নিহত ও ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এর মধ্যেই গাজার আরও এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুমকি দিয়েছেন, বাকি সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দিলে গাজা চিরতরে দখল করে নেওয়া হবে।
এদিকে আজও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জেরুজালেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ইসরায়েলের বাসিন্দারা। তারা গাজায় জিম্মি মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তাদের মূল ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শুক্রবার বাদ জুমা বিক্ষোভ দেখা যায়।
অন্যদিকে, গাজা শাসনের কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের নেই বলে জানিয়েছে হামাস। যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরায় কার্যকর করার প্রচেষ্টায় তারা প্রতিপক্ষের সব গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ল ব নন ইসর য় ল র ল ব নন র ক রব র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজ রিয়াদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ মিশনপাড়া
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশনপাড়ায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, হুমকি ও হয়রানিমূলক মামলার ভয়ঙ্কর এক চক্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রিয়াদ দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে দোকান বসানো পর্যন্ত সবকিছুতেই চাঁদা দাবি করেন তিনি ও তাঁর অনুসারীরা।
চাঁদা না দিলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা, পরে দেওয়া হয় সাজানো মামলা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রয়েছে রহস্যজনকভাবে নীরব।
স্থানীয়রা বলছেন, রিয়াদ নিজে কোনো রাজনৈতিক আদর্শের লোক না হলেও, একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাঁদের ব্যবহার করেন নিজের স্বার্থে।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রিয়াদ এতটাই দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন যে, থানায় একাধিক অভিযোগের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামিও এই রিয়াদ। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় তাঁর নামে একাধিক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা রয়েছে।
এমনকি তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তারপরও তিনি দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আদায় করে চলেছেন চাঁদা, দখল করে নিচ্ছেন জমি, দোকান।
মিশনপাড়ায় বর্তমানে যেসব ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় প্রতিটির কাজেই বাধা দেওয়া হয়েছে রিয়াদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাড়ির মালিক বলেন, “আমরা পরিবার নিয়ে এখানে থাকি।
নিজের পৈতৃক জমিতে ভবন নির্মাণ করছি। হঠাৎ একদিন ৪-৫ জন যুবক এসে জানায়, বসের অনুমতি ছাড়া কাজ হবে না। পরে রিয়াদ নিজেই ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। না দিলে মালামাল ফেলে দেওয়া, শ্রমিকদের মারধরের হুমকি দেয়।”
এই অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। অন্তত ৮-১০ জন ভবন মালিক এবং কয়েকজন ঠিকাদার একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, রিয়াদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিতভাবে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। কেউ না মানলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা-মামলা আর হয়রানির স্বীকারে।
মিশনপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিয়াদ এলাকায় একটি ভয়ঙ্কর ‘মিনি মাফিয়া নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছেন। ভবন নির্মাণ, দোকান বসানো, এমনকি ফুটপাতে ব্যবসা করতেও তাঁকে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় চলতে থাকে ভয় দেখানো, ভাঙচুর, এমনকি জীবননাশের হুমকি। অনেকেই বলেন, তাঁরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন রিয়াদ ও তাঁর চক্রের হাতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার পৈতৃক জমিতে ভবন করতে গিয়ে বিপদে পড়েছি। ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। না দিলে শ্রমিকদের মারধর করবে বলে হুমকি দিয়েছে। থানায় গিয়ে অভিযোগ করলাম, কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং রিয়াদ খবর পেয়ে হুমকি দিয়ে চাঁদার পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
একজন ঠিকাদার বলেন, “ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের এখন বেশি খরচ হয় রিয়াদকে সামলাতে। কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। যে যেখানে ইচ্ছা চাঁদা চাচ্ছে, না দিলে মামলা, মারধর। কোথাও নালিশ করতে পারি না, বরং নালিশ করলেই বিপদ আরও বাড়ে।”
আরেকজন ঠিকাদার বলেন, “রিয়াদ এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা। কাজ শুরু করলেই তার লোকজন এসে বলে, বসের অনুমতি লাগবে। চাঁদা না দিলে মালামাল উধাও, শ্রমিক পালায়, পরে থানায় গিয়ে দেখি আমার নামে নাকি মারামারির মামলা!”
ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু ভীতি ও চাঁদাবাজি নয়, রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা একটি সংঘবদ্ধ আইনি হয়রানির চক্রও তৈরি করেছেন। কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। পরবর্তীতে সেই মামলা আপোষে নিষ্পত্তির জন্য আবারও দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রিয়াদের এতোসব অপরাধ কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে, কেন এই নীরবতা? তাঁর নামে একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকার পরও কীভাবে তিনি খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ান? পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে আড়াল করছে?
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এলাকাবাসীর দাবি ভিন্ন।
তাঁরা বলছেন, শুধু অভিযোগ নয়, ভিডিও প্রমাণ, অডিও ক্লিপস, এমনকি লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি তাঁরা। বরং অভিযোগ জানানোর পর হুমকির মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বা কাজ বন্ধ রেখেছেন।
রিয়াদের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছেও বহুবার গেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কেউই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসেননি। বরং অনেকে অভিযোগ করেন, রিয়াদ একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গ্রুপের ‘অঘোষিত কার্যকর্তা’ হিসেবে কাজ করেন, এবং সেই পরিচয়ের কারণেই তাঁকে ঘিরে রয়েছে এক ধরনের অদৃশ্য নিরাপত্তা।
মিশনপাড়ার এই অবস্থা এখন পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরের নিরাপত্তা ও সুশাসনের জন্য ভয়ঙ্কর এক সংকেত হয়ে উঠেছে। নাগরিক সমাজের প্রশ্ন , যদি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একাধিক মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে আইনের শাসন কোথায়?
সচেতন মহলের দাবি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রিয়াদ ও তাঁর চক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন শুধু মিশনপাড়া নয়, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি প্রান্তেই গড়ে উঠবে এমন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।
এখনই সময় রিয়াদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার, নয়তো ঘটতে পারে ভয়ংকর অপ্রীতিকর কোন ঘটনা। আক্রান্ত হতে পারে ভুক্তভোগীরা।