ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান হামলার মধ্যেই লেবাননে যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে উঠেছে। শনিবার লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলার পর ইসরায়েলও পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে দু’জন নিহত ও আটজনের বেশি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় হামলা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল-লেবানন পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এ অবস্থা চলতে থাকলে আরও বেসামরিক জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হবে। 

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে ইসরায়েলে হামলা বন্ধ করে হিজবুল্লাহ। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় আবারও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইয়েমেনের হুতি ও লেবাননের হিজবুল্লাহ আবারও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। এ প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েক সপ্তাহ পর আজ দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ঘটল। ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহও দীর্ঘ যুদ্ধে সংগঠনটির একাধিক শীর্ষ নেতা নিহত হন।

আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দাবি, লেবাননের রকেট হামলার প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ লেবাননে কয়েক ডজন বিমান হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের ছোড়া তিনটি রকেট প্রতিহত ও পাল্টা গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ইসরায়েলের গোলা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের দুটি শহরে আঘাত হানে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, তেল আবিবের বিমান সীমান্ত সংলগ্ন আরও তিনটি শহরে হামলা চালিয়েছে।

এদিকে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যও ইসরায়েলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দেশগুলো। ইসরায়েলের জিম্মিদের মুক্তি দিতে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের প্রতিও আহ্বান জানান তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গাজায় জাতিসংঘের প্রকল্প পরিষেবা কার্যালয় ভবনে হামলার ঘটনায় তারা ‘গভীরভাবে মর্মাহত’। 

গাজায় গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৬ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ১৩০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৪৯ হাজার ৭৪৭ জন নিহত ও ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।   

এর মধ্যেই গাজার আরও এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুমকি দিয়েছেন, বাকি সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দিলে গাজা চিরতরে দখল করে নেওয়া হবে।  

এদিকে আজও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জেরুজালেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ইসরায়েলের বাসিন্দারা। তারা গাজায় জিম্মি মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তাদের মূল ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শুক্রবার বাদ জুমা বিক্ষোভ দেখা যায়। 

অন্যদিকে, গাজা শাসনের কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের নেই বলে জানিয়েছে হামাস। যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরায় কার্যকর করার প্রচেষ্টায় তারা প্রতিপক্ষের সব গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ল ব নন ইসর য় ল র ল ব নন র ক রব র

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ