Prothomalo:
2025-11-03@07:38:01 GMT

শবে কদরেও যারা ক্ষমা পাবে না

Published: 25th, March 2025 GMT

মাকাসিদে শরিয়াহ বা ইসলামি বিধানাবলির উদ্দেশ্য হলো জীবনের সুরক্ষা, সম্পদের সুরক্ষা, জ্ঞানের সুরক্ষা, বংশধারার পবিত্রতার সুরক্ষা, বিশ্বাস ও ধর্মকর্মের সুরক্ষা। এসব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসলাম সব ক্ষতিকর জিনিসকে নিষিদ্ধ করেছে। সেই আলোকেই মদ ও মাদক মাকাসিদে শরিয়াহ বা শরিয়তের উদ্দেশ্যাবলির পরিপন্থী।

মদ ও মাদক পাপাচারের শিকড় এবং অন্যতম কবিরা গুনাহ (তাবরানি ও বায়হাকি)। মদ্যপান ও মাদক সেবন এমন পাপ, যা সব ধরনের অপরাধের দরজা খুলে দেয়। এ জন্যই সব ধরনের মদ, মাদক ও নেশাদ্রব্য ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম।

মহানবী (সা.

) বলেন, ‘যেকোনো পানীয় (বা বস্তু) নেশা উদ্রেক করে, তা হারাম।’ (বুখারি: ২৪১)

ধূমপান মাদক সেবনের প্রথম ধাপ। ধূমপান ও তামাক এক পর্যায়ে আসক্তি বা নেশায় পরিণত হয়, যা ছাড়া ধূমপায়ী ও মাদকসেবী থাকতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর সম্পূর্ণ ঘৃণ্য বস্তু; শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ আদায় থেকে বিরত রাখতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ (সুরা মায়িদা, আয়াত ৯০-৯১)

জাহান্নামের তিনটি বৈশিষ্ট্য—আগুন, ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ। এই তিনটির সমাহার ঘটে ধূমপানে। মদ, মাদক, ধূমপান ও তামাক শুধু ব্যবহারকারীর নয়, বরং অন্যদেরও ক্ষতি করে। এটি দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য সর্বনাশা শত্রু। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সতর্ক থাকো এমন ফিতনার ব্যাপারে, যা শুধু জালিম অপরাধীদের ওপরই আপতিত হবে না (বরং সামগ্রিকভাবে সবার ক্ষতি হবে)। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা আনফাল, আয়াত ২৫)

মদ্যপায়ী ও মাদকসেবীদের দোয়া কবুল হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এই রাতে আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান, মুমিনদের ক্ষমা করে দেন, কাফির-মুশরিকদের তওবা করার সুযোগ দেন; কিন্তু মদ্যপায়ীদের তওবা ছাড়া ক্ষমা করেন না।’ (বায়হাকি, শুআবুল ইমান, কিতাবুস সুন্নাহ, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৮২)। শবে কদরেও তাদের দোয়া কবুল হয় না—‘মদ্যপায়ী বা মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, ইচ্ছাকৃত নামাজ পরিত্যাগকারী, শরিয়তসিদ্ধ কারণ ছাড়া মুসলমানদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, তাফসিরে কাশফুল আসরার, খণ্ড: ১, পৃ. ৫৬৪)।

ধূমপান ও তামাক সেবন ক্ষতিকর এবং অপচয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তোমরা কিছুতেই অপচয় কোরো না; নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরায়েল, আয়াত ২৬-২৭)। কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনো আদমসন্তান এক কদমও নড়তে পারবে না। যথা জীবন, যৌবন, আয়, ব্যয়, জ্ঞান। ব্যয়ের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা পানাহার করো কিন্তু অপব্যয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৩১)

ধূমপানে রোজা ভঙ্গ হয়। তাই ধূমপায়ীরাও রমজানে দিনের বেলায় ধূমপান করেন না। অনুরূপভাবে যাঁরা বিভিন্নভাবে তামাক সেবন করেন, তঁারাও রোজা অবস্থায় তা থেকে বিরত থাকেন। রমজানে প্রতিদিন দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা ধূমপান, তামাকসহ সব ধরনের মাদক থেকে দূরে থাকেন। তাই রমজান মাস ধূমপান, তামাকসহ সব ধরনের মাদক বর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল সব ধরন র ক স বন শয়ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ