প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়া অন্যদের জন্য একটি বার্তা উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন।

তিনি বলেন, “এই সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা সই হবে। যার মধ্যে অন্যতম মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, গণমাধ্যম, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও স্বাস্থ্য খাত। এছাড়া, স্থান পাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তিস্তা প্রকল্প ইস্যু।”

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন ও থাইল্যান্ড সফর সামনে রেখে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে সচিব এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকালে দেশটির সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বিষয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া, দুই দেশের নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা উঠতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, “চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। আমি মনে করি, চীনকে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে আমরা ধারণ করি, চীনও আমাদের ধারণ করে।”

এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব জানান, চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কোনো এজেন্ডাভিত্তিক নয়, নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তা ইস্যু উঠতে পারে।

“চীন সফরে রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমার ইস্যুতে চীনের ভিউ আমরা নেবো।”

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “চীনের সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বেড়েছে। কুনমিংয়ে বাংলাদেশিদের জন্য চারটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়েছে। বাংলাদেশেও তারা একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করবে।”

আগামী বুধবার (২৬ মার্চ) চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। এটাই হবে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম কোনো দেশে দ্বিপক্ষীয় সফর। চীন থেকে ফিরে আসার পর আগামী ৩ এপ্রিল বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি থাইল্যান্ড যাবেন।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, পরের দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে বলে এই সম্মেলনকেও আলাদা করে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।

বিমসটেকে ভারতের সরকারপ্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হবে কি-না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশ বৈঠকের জন্য প্রস্তুত আছে। ভারত থেকে ইতিবাচক সাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আগে আগামী ৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা  বিমসটেক ইয়াং জেনারেশন ফোরামে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন। 

সচিব বলেন, “আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ বিমসটেক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় করবেন এবং বিমসটেক অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ এই অঞ্চলকে আর্থ-সামাজিকভাবে আরও উন্নত, টেকসই ও শান্তিপূর্ণ হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবেন। বিমসটেকের আওতায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, যোগাযোগ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, জ্বালানি সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা ও মানব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, সংস্কৃতি, পর্যটনের বিকাশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনাপূর্বক শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণ সর্বসম্মতিক্রমে যৌথ ঘোষণা জারি করবেন। ”

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এবারের সম্মেলন বাংলাদেশ এবং অন্যান্য বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় এবং গভীর করবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা শীর্ষ সম্মেলন শেষে আগামী ৪ এপ্রিল বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আব্দুল মোতালেব সরকার, মোহাম্মদ নূরে আলম ও মোহাম্মদ রফিকুল আলম।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক সহয গ ত ম হ ম মদ ব মসট ক চ ন সফর র জন য সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।  

এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। 

বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ