একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়: নাহিদ ইসলাম
Published: 26th, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান এবং আমাদের একাত্তরের সংগ্রাম, আমাদের সাতচল্লিশের আজাদির লড়াই—এই সবকিছুর ভেতর দিয়ে আমরা যে স্বাধীন, সার্বভৌম, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র পেতে চেয়েছিলাম, তার একটি সুযোগ ও সম্ভাবনা আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের পর তৈরি হয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়, আমরা সেই ধারাবাহিকতাতেই আছি।’
আজ বুধবার মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেবল ক্ষমতার লোভে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই যাতে সেই সকল সম্ভাবনাকে নষ্ট করে না দিই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একদিকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একধরনের নির্বাচনকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিচার ও সংস্কারের প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে, অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনর্বাসনের জন্য নানা ধরনের পাঁয়তারা চলছে। আমরা মনে করি, এই সবকিছুকেই প্রতিহত করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।’
উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম। এই বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায়বিচার ও অধিকারের জন্য। আমরা মনে করি, আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে এবং বারবার যেটি বেহাত হয়েছে এবং আমাদের বারবার রক্ত দিতে হয়েছে, যাতে সামনের দিনগুলোতে আর রক্ত দিতে না হয় জনগণের, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা আজকের দিনে।’
আরও পড়ুনদ্বিতীয় স্বাধীনতা যাঁরা বলেন, তাঁরা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান: মির্জা আব্বাস১ ঘণ্টা আগেএর আগে আজ সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন, আজকের স্বাধীনতা দিবস প্রমাণ করে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। যাঁরা বলেন, তাঁরা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি যে একাত্তর ও চব্বিশ আলাদা কিছু নয়, বরং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই একাত্তরের স্পিরিট পুনর্জীবিত হয়েছে। একাত্তরে আমরা যেটি চেয়েছিলাম, সেটি ৫৪ বছরে অর্জিত হতে পারেনি। একটি ফ্যাসিবাদ ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে চেপে বসেছিল। তাই আরেকটি গণ–অভ্যুত্থানের প্রয়োজন হয়েছিল। একাত্তরের যে সাম্যের কথা বলা হয়েছিল, চব্বিশেও কিন্তু সেই বৈষম্যহীন সমাজের কথাই আমরা বলছি। ফলে যারা একে পরস্পরবিরোধী বা মুখোমুখিভাবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য অসৎ এবং আমরা মনে করি, তারা চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানকে, ছাত্রজনতার বিজয়কে প্রকৃতভাবে উপলব্ধি করতে পারেননি।’
সংস্কার ও বিচারবিহীন জাতীয় নির্বাচন দেওয়া হলে সেটি মেনে নেওয়া হবে না বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কেবল কোনো একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য (যদি) নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয় সংস্কার ও বিচার ছাড়া, তাহলে তা অবশ্যই মেনে নেওয়া হবে না।’
৫ আগস্টের আগে ও পরে দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্যের কিছুটা ফাটল ধরেছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতীয় ঐক্যের যে সুযোগ এবং ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, আমরা এখনো সেই ভিত্তিতেই আছি। কিন্তু এখন হয়তো বিভিন্ন দলের এজেন্ডা আলাদা হচ্ছে। তবে আমরা যদি চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে চাই, দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের একই পাটাতনে থেকে পরস্পর ভিন্ন মত ও ভিন্ন লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের সামনের দিনে একসঙ্গে এগোতে হবে। যদি কেউ আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, জনগণের যে সংস্কার ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা, তা থেকে সরে যায়, তাহলে অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে আর ঐক্যের সুযোগ থাকবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত র জন য আম দ র আজক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপগঞ্জে লিফলেট বিতরণ
আওয়ামীলীগ দেশের মানুষের অধিকার হনন করেছে। তাই, দেশে এক গণবিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে। ২৪এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ এ দেশ থেকে বিতারিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও রূপগঞ্জ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ দুলাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার এলাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণকালে মোহাম্মদ দুলাল হোসেন এসব কথা বলেন।
লিফলেট বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ, বিএনপি-যুবদলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মোহাম্মদ দুলাল হোসেন আরও বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে এ দেশের জনগণ একদলীয় শাসন ও ফ্যাসিবাদের শিকার হয়ে জিম্মি হয়ে ছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের গণজাগরণের মধ্য দিয়ে জনগণ আবারও তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। এখন সময় এসেছে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার, একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমানের ৩১ দফা দেশের পুনর্গঠনের পথনির্দেশনা। এই দফাগুলোতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”
এসময় স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দও লিফলেট বিতরণে অংশগ্রহণ করেন। তারা সাধারণ মানুষকে বিএনপির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করেন যে, দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত এবং জনগণের পাশে থাকবে।
স্থানীয়রা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার। একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করছেন তারা। এ ধরনের লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমে জনগণ আরও বেশি সচেতন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলতি বছরের শুরুতে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যেখানে রাষ্ট্র সংস্কার ও জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য তুলে ধরা হয়।