থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের আসরে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হচ্ছে না। তিনি কেবল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। গতকাল শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আগামী ৩ এপ্রিল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনার জন্য বৈঠক করবেন। থাইল্যান্ড সফরে ওটাই মোদির একমাত্র দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।

সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি যাতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন, সে জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছিল।

নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের বৈঠকে যোগ দিতে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন ৩ এপ্রিল। পরের দিন তিনি সরকারি সফরে ব্যাংকক থেকে চলে যাবেন শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়কের আমন্ত্রণে মোদি সে দেশ সফর করবেন ৪ থেকে ৬ এপ্রিল।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক না হলেও ব্যাংককে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে মোদির কিছু সময়ের জন্য সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে কি না, সে বিষয়ে সরকারি বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, দুই রাষ্ট্র নেতা একই আসরে থাকার দরুণ দুজনের মধ্যে অবশ্যই সৌজন্য বিনিময় হবে। নিভৃতে দুই নেতার মধ্যে কিছু আলাপচারিতাও হতে পারে। তবে তা হবে অনানুষ্ঠানিক। নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ। তেমন হলে সেটাও হবে এই দুই প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করেন গত বছরের আগস্টে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বার্ষিক সম্মেলনে দুই নেতার মধ্যে মুখোমুখি দেখা হয়নি। মোদি দেশে চলে আসার পর ইউনূস নিউইয়র্কে পৌঁছেছিলেন।

অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও দুই নেতা মুখোমুখিও হননি। যদিও ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউনূসকে মোদি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষেও অভিনন্দন জানিয়ে ইউনূসকে চিঠি লিখেছেন। কিন্তু এখনো দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হলো না।

ভারতের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী দুইবার স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে সে দেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিবুল আলম ভারতের সংবাদপত্র দ্য হিন্দুকে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূস প্রথম সফরে ভারতেই যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের দিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ইউনূস প্রথম সফরে এই মুহূর্তে চীনে রয়েছেন।

২০১৮ সালে বিমসটেকের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন বসেছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল ভার্চুয়্যালি। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয়। ২০২২ সালে। শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ষষ্ঠ সম্মেলন হতে চলেছে ব্যাংককে। সম্মেলনের মূল সুর ‘বিমসটেক.

..সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও মুক্ত’। এই সম্মেলনেই সংগঠনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবে বাংলাদেশ।

বিমসটেক কাঠামোর মধ্যে সদস্যদেশগুলো কীভাবে পারস্পরিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে পারে, বাণিজ্য বৃদ্ধি, লগ্নিসহ বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, শীর্ষ নেতারা সেই সব বিষয়ে আলোকপাত করবেন। একই সঙ্গে আলোকপাত করা হবে জলবায়ুর ক্ষেত্রে।

বিমসটেকের সদস্যদেশগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব মসট ক র সরক র করব ন গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।

আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।

অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ