‘স্বপ্নের জগৎটা একেবারেই বদলে গেছে’
Published: 29th, March 2025 GMT
কখনও ভাবেননি রঙিন ভুবনে পদচারণ হবে তাঁর। কিন্তু হঠাৎ করেই সামাজিক মাধ্যমে এক নির্মাতার কাছ থেকে পেয়ে যান অভিনয়ের প্রস্তাব। সাহস করে দাঁড়িয়ে যান ক্যামেরা সামনে। সেই শুরু। এরপর কাজ করতে করতে কখন যে অভিনয়ের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়ে গেছে, তা বুঝতেই পারেননি সুনেরা সিনথিয়া। যখন বুঝতে পারলেন, তখন দেখলেন স্বপ্নের জগৎটা একেবারেই বদলে গেছে। তাই অভিনয়কে আপন করে নিতে আর সময় লাগেনি। এই হলো তরুণ অভিনেত্রী ও মডেল সুনেরা সিনথিয়ার সেলুলয়ডের জগতে ব্যস্ত হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত।
২০২২ সালে ইমরাউল রাফাতের পরিচালনায় ‘ওপেন কিচেন’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় অভিষেক তাঁর। এরপর বেশ কয়েকটি নাটকে তাঁকে দেখা গেছে। অভিনয়টা ধারাবাহিক নাটক দিয়ে শুরু হলেও এখন একক নাটক নিয়ে তাঁর ব্যস্ততা। আসছে ঈদের জন্য সুজন হাবিবের পরিচালনায় ‘শালা দুলাভাই’ নামে রোমান্টিক গল্পের একটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এটি প্রচার হবে এশিয়ান টিভিতে। পরে দেখা যাবে ইউটিউবে। এ ছাড়া সম্প্রতি তিনি অভিনয় করেছেন ‘হিল্লা বর’ নামে একটি নাটকে। এটি প্রচার হচ্ছে ইউটিউবে। অভিনয়ের পাশাপাশি সুপার শপ স্বপ্নের ওভিসি ও ভিশনের বিজ্ঞাপনেও মুখ দেখিয়েছেন তিনি।
সুনেরা সিনথিয়া বলেন, মানুষ যখন সামাজিক মাধ্যমে ছবি দেখে বলত ‘তুমি তো অভিনয় করতে পারো’, তখনই মডেলিং ও অভিনয়ের স্বপ্ন দেখি। মাঝে মাঝে আমি ভাবতাম, পারব কী পারব না। যখন টুকটাক করতে করতে শিখলাম, তখন কনফিডেন্ট লেভেল বাড়ল। মনে হলো যদি লেগে থাকি, তাহলে অভিনয় করতে পারব। কতটুকু পেরেছি, দর্শকই ভালো বলতে পারবেন।’
এই সময়ে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নিয়েও সুনেরা কথা বলেন, ‘তিন বছরের অভিনয় ক্যারিয়ার হলেও পড়াশোনার জন্য অভিনয়ে বেশি মনযোগী হতে পারিনি। সম্প্রতি ম্যানেজমেন্টে বিবিএ শেষ করেছি। পড়াশোনার চাপ একটু কম। এখন পুরোদমে কাজ শুরু করব বলে ভাবছি।’ দর্শক মনে দাগ কাটার মতো আরও কিছু কাজ করতে চান সুনেরা। ছোট পর্দার পাশাপাশি ভালো গল্প ও চরিত্রের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নিজেকে মেলে ধরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।