নতুন বাংলাদেশে উগ্রবাদ উত্থানের শঙ্কা, প্রতিবেদনকে বিভ্রান্তিকর বলছে সরকার
Published: 1st, April 2025 GMT
বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উত্থানের শঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস। গতকাল সোমবার রাতে পত্রিকাটি অনলাইনে ওই সংবাদ প্রকাশ করেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আজ মঙ্গলবার এই প্রতিবেদনকে বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছে। সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ভুল চিত্র ও একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, নারীর শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে উগ্রবাদীরা বিষয়টি শুরু করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী নেতাকে উৎখাতের পর একধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতার মধ্যে একটি শহরের ধর্মীয় মৌলবাদীরা ঘোষণা দিয়েছে, তরুণীরা আর ফুটবল খেলতে পারবে না। আরেকটি শহরে এই মৌলবাদীরা এমন এক ব্যক্তিকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে বাধ্য করেছে, যিনি হিজাব না পরায় প্রকাশ্যে এক নারীকে হেনস্তা করেছিলেন। পরে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
এরপর আরও নির্লজ্জ আহ্বান জানানো হয়েছে। ঢাকায় এক সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সরকার যদি ইসলাম অবমাননাকারীদের মৃত্যুদণ্ড না দেয়, তাহলে তাঁরাই তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবেন। এর কয়েক দিন পর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে বড় মিছিল করেছে।
বাংলাদেশ যখন গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ ও সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য নতুন এক ভবিষ্যৎ তৈরির চেষ্টা করছে, তখন দীর্ঘ দিন ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ইসলামি উগ্রপন্থীরা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আগে নিষিদ্ধ ছিল—বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশকে আরও মৌলবাদী পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছেন। এই পরিবর্তন দেশের বাইরে থেকে খুব সামান্যই নজরে এসেছে।
ইসলামপন্থী নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশে এমন একটি ‘ইসলামি সরকার’ হোক, যে সরকার ইসলাম অবমাননাকারীদের শাস্তি দেবে এবং ‘শালীনতা’ প্রতিষ্ঠা করবে। এই অস্পষ্ট ধারণাগুলো অন্যান্য জায়গায় বেআইনি কর্তৃপক্ষের শাসন বা ধর্মতান্ত্রিক শাসনের পথ তৈরি করে দিয়েছে।
নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরির সঙ্গে জড়িত আছেন—এমন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, এই খসড়ায় বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়টি বাদ দেওয়া হতে পারে। সেখানে বহুত্ববাদ প্রতিস্থাপন করা হবে এবং দেশকে আরও ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্গঠন করা হবে।
দেশের নিপীড়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যেসব নারী শিক্ষার্থী পথে নেমেছিলেন, তাঁদের জন্য মৌলবাদীদের এই উত্থান বিশেষভাবে বেদনাদায়ক।
নারী শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বৈচিত্র্যপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও উন্মুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের এখন ধর্মীয় লোকরঞ্জনের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। তাদের লড়াই করতে হচ্ছে এমন এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, যারা হিন্দু ও ইসলামের ছোট ছোট সম্প্রদায়ের অনুসারীসহ নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান থেকে স্নাতক ২৯ বছর বয়সী শেখ তাসনিম আফরোজ এমি বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিলাম। আমরা রাস্তায় আমাদের ভাইদের রক্ষা করেছি। এখন পাঁচ-ছয় মাস পর দেখছি, পুরো ব্যাপারটা উল্টে গেল।’
সমালোচকেরা বলছেন, ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার চরমপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। তাঁরা অভিযোগ করছেন, অধ্যাপক ইউনূস অপেক্ষাকৃত নমনীয়, গণতান্ত্রিক সংস্কারের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া ও সংঘাতবিমুখ। তিনি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারেননি, ফলে চরমপন্থীরা আরও বেশি জনসাধারণের স্থান দখল করে নিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূসের সহকারীরা একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপের কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন জারি ছিল। এখন অবশ্যই বাক্স্বাধীনতা ও প্রতিবাদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এটি করলে মূলত চরমপন্থী দাবির জন্য একটি দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়।
শেখ হাসিনার পতনের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। তারা আজ নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না। সামরিক বাহিনী কিছু ‘পুলিশিং দায়িত্ব’ নিয়েছে বটে, তবে তারাও অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে ক্রমেই বিরোধে লিপ্ত হচ্ছে। কারণ, ছাত্ররা অতীতের নৃশংসতার জন্য কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে চায়।
বাংলাদেশে এখন যা ঘটতে শুরু করেছে, তা মৌলবাদের এক ঢেউকে প্রতিফলিত করে, যা এই অঞ্চলকে গ্রাস করে ফেলেছে।
আফগানিস্তান একটি চরম জাতিগত ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে নারীদের মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পাকিস্তানে উগ্র ইসলামপন্থীরা বছরের পর বছর ধরে সহিংসতার মাধ্যমে তাদের চাওয়া-পাওয়া বাস্তবায়ন করে আসছে। ভারতে একটি প্রতিষ্ঠিত হিন্দু ডানপন্থী দল দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ঐতিহ্যকে খাটো করেছে। বৌদ্ধ চরমপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো হচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশ চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার ‘ভয় আছে’। নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, যিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
তবে নাহিদ ইসলাম আশাবাদী, সংবিধানে পরিবর্তন আনা হলেও গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রতি ঘৃণা করার মতো মূল্যবোধগুলো টিকে থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, বাংলাদেশে এমন কোনো রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব, যা এই মৌলিক মূল্যবোধগুলোর বিরুদ্ধে যায়।’
কেউ কেউ শিল্প ও বুদ্ধিভিত্তিক বিতর্কের গভীর ঐতিহ্যের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির সংযোগের দিকে ইঙ্গিত করেন। আবার কেউ কেউ দেশের অর্থনীতির আকার নিয়ে আশার আলো দেখতে পান।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে নারীরা গভীরভাবে জড়িত। নারীদের ৩৭ শতাংশ আনুষ্ঠানিক শ্রমশক্তিতে আছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ হারের একটি। এই নারীদের জোর করে ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা এই চরমপন্থী শক্তিগুলোকে একই সঙ্গে দমন ও তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। আর এই দীর্ঘ সময়ে চরমপন্থী শক্তিগুলো তাদের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে।
শেখ হাসিনা একটি পুলিশ রাষ্ট্র চালিয়েছিলেন। তাঁর সরকার ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল, যার মধ্যে মূলধারার কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিরাও ছিলেন, যাঁরা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারেন। একই সঙ্গে তিনি হাজার হাজার অনিয়ন্ত্রিত ইসলামি ধর্মীয় মাদ্রাসা অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং শত শত মসজিদ নির্মাণে ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি ইসলামি দলগুলোর ধর্মীয় রক্ষণশীল অংশকে জয় করার চেষ্টা করেছিলেন।
শেখ হাসিনার বিদায়ের পর ছোট ছোট চরমপন্থী দলগুলো যারা এই ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে উল্টে দিতে চায় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করতে চাওয়া মূলধারার ইসলামপন্থী দলগুলো—উভয় অংশই আরও মৌলবাদী বাংলাদেশের একটি যৌথ লক্ষ্যে একত্র হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী এখন একটি বড় সুযোগ দেখছে। বিশ্লেষক ও কূটনীতিকেরা বলছেন, উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক বিনিয়োগের অধিকারী এই দল দীর্ঘমেয়াদি খেলা খেলছে। অবশ্য বছরের শেষের দিকে যে নির্বাচন প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তাতে তাদের জয়ের সম্ভাবনা কম। তারপরও দলটি মূলধারার ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর প্রতি মানুষের মনে সৃষ্ট অসন্তোষকে পুঁজি হিসেবে দেখার আশা করছে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, দলটি একটি ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্র চায়। তাদের কাছে ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণে তুরস্ক হলো সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, ‘ইসলামে নারী ও পুরুষের আচরণ ও নীতিশাস্ত্রের দিক থেকে নৈতিক দিকনির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে নারীরা যেকোনো পেশায় অংশ নিতে পারেন। যেমন খেলাধুলা, গান, থিয়েটার, বিচার বিভাগ, সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণে বাধা নেই।’
তবে বর্তমানে রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে পুরুষেরা ইসলামি শাসনব্যবস্থায় নিজস্ব ব্যাখ্যা নিয়ে আসছেন।
স্থানীয় মেয়েদের অনুপ্রাণিত করতে কৃষিনির্ভর শহর তারাগঞ্জে গত মাসে দুটি নারী দলের মধ্যে ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আয়োজকেরা। মেয়েরা যখন খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন শহরের এক মসজিদের নেতা আশরাফ আলী ঘোষণা দেন, নারী ও মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেওয়া উচিত নয়।
ক্রীড়া সংগঠকেরা সাধারণত শহরের বিভিন্ন স্থানে রিকশায় লাউডস্পিকার বেঁধে খেলার ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আশরাফ আলীও তাঁর নিজস্ব লোকদের পাঠিয়ে লাউডস্পিকার লাগিয়ে খেলা দেখতে না যেতে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে থাকেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি নারী খেলোয়াড়েরা যখন ড্রেসিংরুমে জার্সি পরছিলেন, তখন স্থানীয় কর্মকর্তারা খেলাটি নিয়ে একটি সভা করছিলেন। আয়োজকদের একজন সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করতে প্রয়োজনে আশরাফ আলী শহীদ হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।’
পরে স্থানীয় প্রশাসন নতি স্বীকার করে, খেলা বাতিল ঘোষণা করে এবং এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
ওই ম্যাচে খেলতে বাসে চার ঘণ্টা ভ্রমণ করে এসেছিলেন ২২ বছর বয়সী তসলিমা আক্তার। তিনি বলেন, তিনি অনেক গাড়ি, সেনাবাহিনী ও পুলিশ দেখেছেন। তাঁরা খেলোয়াড়দের বলেছিলেন, ম্যাচটি বন্ধ।
তসলিমা আক্তার আরও বলেন, তাঁর এক দশকের ফুটবল খেলোয়াড়ি জীবনে এই প্রথম তিনি এমন বিরোধিতার মুখোমুখি হলেন।
তসলিমা বলেন, ‘কী হতে পারে, তা নিয়ে আমি এখন একটু ভীত।’
কয়েক সপ্তাহ পর নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্যের উপস্থিতিতে আয়োজকেরা নারীদের একটি ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করেন। তবে সতর্কতা হিসেবে তাঁরা তরুণীদের তাঁদের হাফপ্যান্টের নিচে স্টকিংস পরতে বলেছিলেন।
উগ্রপন্থীদের অবিরাম হুমকির মুখে আয়োজকেরা বলেছেন, তাঁরা নিশ্চিত নন, তাঁরা আবার ঝুঁকি নেবেন কিনা।
মসজিদের ইমাম আশরাফ আলী এক সাক্ষাৎকারে গর্বভরে বলেন, তারাগঞ্জের মতো গ্রামীণ এলাকায় নারীদের ফুটবল ‘অশ্লীলতা’ বাড়াবে।
নারীদের খেলাধুলা ছিল আশরাফের সর্বশেষ লক্ষ্য। বছরের পর বছর ধরে তিনি নির্যাতিত সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ৫০০ সদস্যকে ওই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের রাতেই আহমদিয়াদের উপাসনালয়ে একদল জনতা হামলা চালায়। আহমদিয়া সম্প্রদায় এখনো ভয়ের মধ্যে আছে। তাদের প্রার্থনালয়ে উপস্থিতি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।
আহমদিয়াদের উপাসনালয়ের ধ্বংস হওয়া সাইনবোর্ড পুনর্নির্মাণ বা লাউডস্পিকার থেকে আজান দিতে দেওয়া হচ্ছে না। আশরাফ আলী এসব সহিংসতার দায় এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর মতো প্রচারকেরা ‘আহমদিয়া ধর্মদ্রোহীদের’ বহিষ্কার করা প্রয়োজন বলে ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে গেছেন।
স্থানীয় আহমদিয়া শাখার সভাপতি এ কে এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এই ধর্মীয় নেতারা আমাদের বিরোধিতা করে থাকেন।’
বিভ্রান্তিকর বলছে সরকার
সরকার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটিকে বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছে।
সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনে ধর্মীয় উত্তেজনা ও রক্ষণশীল আন্দোলনের কিছু ঘটনা তুলে ধরলেও এটি অগ্রগতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করেছে বলে মনে করে সরকার। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ‘উদ্বেগজনক ও একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি’ তুলে ধরা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় দেশটি ‘ধর্মীয় চরমপন্থার দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে। এই চিত্র কেবল দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতাকে অতিসরলীকরণই করে নয়, বরং ১৮ কোটি মানুষের পুরো জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার ঝুঁকিও তৈরি করেছে বলে মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নারীদের অবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে বিশেষভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি এমন একটি সরকার, যা নারীর অধিকার ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু বাস্তব চিত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে, যা হতাশাজনক।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘চরমপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোর পদক্ষেপ নেননি’ বলে প্রতিবেদনের আরেকটি দাবি শুধু মিথ্যাই নয়, এটি নারীর ক্ষমতায়নে তার আজীবন অঙ্গীকারকেও উপেক্ষা করে। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস নারী অধিকারের পক্ষে তাঁর অবস্থানে অবিচল ছিলেন। দুই মেয়ের বাবা অধ্যাপক ইউনূস পুরো কর্মজীবন এবং গ্রামীণ ব্যাংককে গড়ে তুলেছেন নারীর ক্ষমতায়নের গভীর বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে, যা তাঁকে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছে। নারীর অধিকারকে এগিয়ে নেওয়া ও তাঁদের স্বাধীনতা রক্ষায় আত্মোৎসর্গ তাঁর কাজ ও খ্যাতির মূল ভিত্তি।
এতে আরও বলা হয়, গত আট মাসে ৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস যে অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন, তার স্বীকৃতি কোথায়? বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। গত সপ্তাহে তাঁর চীন সফরের সময় চীন সরকার ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে ২১০ কোটি ডলার ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন হবে, যেখানে মেটা, উবার এবং স্যামসাংয়ের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৫০টি দেশের ২ হাজার ৩০০ জন অংশ নেবেন। বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্ববাসী ক্রমেই স্বীকৃতি দিচ্ছে।
ধর্মীয় সহিংসতা সম্পর্কেও প্রতিবেদনে ‘ভুল ধারণা’ তুলে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে প্রেস উইং। তারা বলছে, বাংলাদেশের মতো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ধর্মীয় সহিংসতার মধ্যে পার্থক্য করা জরুরি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের পর বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের অনেকগুলোই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে সেগুলো ছিল মূলত রাজনৈতিক। রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই সমর্থন জোরদার করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে, যা বিষয়টিকে জটিল করে তোলে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ধর্মীয় নিপীড়নের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলার ঝুঁকি তৈরি করে। পুরো পরিস্থিতিকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হিসেবে দাঁড় করানো বিভ্রান্তিকর। কারণ, এতে প্রকৃত রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক কারণগুলোকে উপেক্ষা করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষায় তার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করেছে এবং আইন প্রয়োগকারী ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টার সঙ্গে তার চলমান কাজ এই প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেয়। সামাজিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে উগ্রবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ভুল তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে চাপা দেওয়া উচিত নয়।
প্রেস উইং বলেছে, প্রবৃদ্ধির গতিপথ দিয়ে বাংলাদেশ নীরবে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউসে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি করছে। সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে, অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে। গত সাত মাসে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। রাজনৈতিক উত্থানের পরও ব্যাংকিং খাত অপরিবর্তিত রয়েছে এবং স্থানীয় মুদ্রা বিনিময় হার মার্কিন ডলার প্রায় ১২৩ টাকায় স্থির রয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেস উইংয়ের ভাষায়, উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়া একটি দেশের চিত্র তুলে ধরতে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে মুষ্টিমেয় কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। যেমন একজন নারীকে হেনস্তা করা একজন পুরুষ অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, ক্ষতিকরও। ১৮ কোটি মানুষের দেশে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে গোটা দেশকে সংজ্ঞায়িত করা অযৌক্তিক। বাংলাদেশ স্থিতিস্থাপকতা, সংস্কৃতি এবং প্রগতিশীল চিন্তার সমৃদ্ধ ইতিহাসসহ একটি বৈচিত্র্যময় এবং গতিশীল সমাজ আছে।
প্রেস উইংয়ের বক্তব্যে বলা হয়, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ একা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা অনেক দেশ নানাভাবে মোকাবিলা করে। তবে বাংলাদেশ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, সামাজিক সংস্কার ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী উদ্যোগের মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অব্যাহতভাবে কাজ করেছে। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান বা অন্য যেকোনো সম্প্রদায় তার বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে বাংলাদেশের অবিচল প্রতিশ্রুতি রয়েছে। মিছিলে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো কট্টরপন্থীরা সব সময়ই থাকবে। তবে তাঁদের ক্ষোভ মোকাবিলা করা আমাদের দায়িত্ব।’
এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস, গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রমাণ করে যে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাবে। কয়েকটি নেতিবাচক উদাহরণের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে আমাদের অগ্রগতি, স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ়তার বৃহত্তর চিত্রটি স্বীকার করা উচিত, যা আজকের বাংলাদেশকে সংজ্ঞায়িত করে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক ট ইমস ইসল মপন থ কর মকর ত গণতন ত র চরমপন থ র জন ত ক কর ছ ল ন র ইসল ম সরক র র পদক ষ প ইসল ম ব র ফ টবল মপন থ র ন সরক র উপদ ষ ট ব যবস থ এমন এক আহমদ য র পর ব ক র কর র র পর ক জ কর আম দ র র জন য করছ ন ক ষমত দলগ ল বলছ ন বছর র র একট ন একট আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীরে সংঘাতের আসল সমস্যা কী
কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনস্থল পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই নৃশংস ঘটনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এখনো অনেকটাই উপেক্ষিত থেকে গেছে।
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর ভূমি মালিকানা নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সেই উদ্বেগ কাজে লাগিয়ে বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে হামলার দায় স্বীকারকারী ‘জঙ্গি গোষ্ঠী’। তারা বলেছে, যাঁরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাঁরা ‘বহিরাগত বসতি স্থাপনকারী’।
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের সংগঠনটি—যেটিকে লস্কর-ই-তৈয়্যেবার শাখা বলে মনে করা হয়—মিডিয়ায় দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে ৮৫ হাজারের বেশি বহিরাগতকে ডোমিসাইল (স্থায়ী বাসিন্দা সনদ) দেওয়া হয়েছে। ফলে অধিবাসীদের ধরনে পরিবর্তনের পথ তৈরি করা হচ্ছে। তাঁরা পর্যটকের ছদ্মবেশে এসে ডোমিসাইল নেন, তারপর নিজেদের মালিক মনে করেন। ফলে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানো হবে।’
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান কি যুদ্ধের একেবারে কিনারায়৩০ এপ্রিল ২০২৫এ অভিযোগ যতই অযৌক্তিক হোক না কেন, ইতিহাসে দেখা গেছে, চরমপন্থী সংগঠনগুলো প্রায়ই সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করে। আশি–নব্বইয়ের দশকে পাঞ্জাবে খালিস্তানি গোষ্ঠীরাও তেমন করেই নিজেদের কার্যকলাপ বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
টিআরএফ (দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট) এখন কাশ্মীরে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই হামলা চালিয়ে অনেক কাশ্মীরির জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
কাশ্মীরে জমির মালিকানা নিয়ে ক্ষোভ ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মোদি সরকার অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর ক্ষমতা হ্রাস করার পর তা উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার নতুন জমি আইন চালু করেছে। তবে তা কেবল স্থানীয়দের জন্য নির্ধারিত জমির অধিকার বাতিল করে বহিরাগত বিনিয়োগকারীদের জমি কিনতে উৎসাহিত করে।
পেহেলগামের হামলার পর মোদি সরকারের ওপর গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও নিরাপত্তা ত্রুটির অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে সরকার যেভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা চরমপন্থী গোষ্ঠীদের পক্ষে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে সহায়তা করছে।আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে ক্ষতি হবে কার২৯ এপ্রিল ২০২৫২০২০ সালে চালু হওয়া নতুন ডোমিসাইল আইনে বলা হয়েছে, যে কেউ সেখানে ১৫ বছর বসবাস করেছে বা ৭ বছর পড়াশোনা করেছে, সে সেখানে জমির মালিক হতে পারে। সরকার বলেছে, এই আইন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের উপকারে আসবে। তবে বিরোধীরা মনে করে, এটি কাশ্মীরের জনসংখ্যাগত কাঠামো বদলে দিতে পারে।
সরকার জানিয়েছে, গত দুই বছরে ৮৩ হাজার ৭৪২ জন বহিরাগতকে ডোমিসাইল সনদ দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০১৯ সালে মাত্র ১৮৫ জন বহিরাগত জমি কিনেছিল। ২০২১-২২ সালে এই হার বেড়েছে।
এই ভূমি বিতর্ক এখন কেবল সাধারণ মানুষের মধ্যেই নয়, ব্যবসায়ী মহলেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিভিন্ন বড় প্রকল্পে সরকার জমি অধিগ্রহণ করছে। বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহ দিচ্ছে। পেহেলগামে একটি সাত তারকা হোটেল তৈরি হচ্ছে। এর মালিক নাকি এক বহিরাগত। এতে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য কতটা সক্ষম২৮ এপ্রিল ২০২৫জে কে হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুশতাক চায়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গুলমার্গের হোটেলগুলোর ৫০ বছরের লিজ নবায়নের অনুরোধ জানান। আপাতত সরকার এই লিজ বাড়ানোর কথা বলেছে। তবে সংশয় এখনো কাটেনি।
এ ছাড়া দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, তা নতুন জমি আইনগুলোর ফল।
বড় বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী জম্মু ও কাশ্মীরে জমি কেনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত ৬ হাজার ৯০০-এর বেশি আবেদন জমা পড়েছে। মুরালিধরনের কোম্পানি, ওয়েলস্পুন গ্রুপ এবং দুবাইয়ের এমার গ্রুপ ইতিমধ্যেই জমি পেয়েছে। জম্মু অঞ্চলে ৮১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার এবং কাশ্মীরে ৪১ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
এসব ঘটনা কাশ্মীর উপত্যকায় জমির মালিকানা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের চিত্র তুলে ধরছে। হিন্দুত্ববাদীরা জমি মালিকানা নিয়ে যেভাবে উল্লাস প্রকাশ করছে, তাতে কাশ্মীরিদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ছে। এসব বক্তব্যে প্রায়ই মুসলিমদের টার্গেট করা হয়।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লাগলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে২৭ এপ্রিল ২০২৫বিজেপির অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাই কাশ্মীরে জমি ‘উন্মুক্ত’ করে দেওয়াকে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ইতিবাচক বলছেন। তবে স্থানীয় লোকজন মনে করছেন, এতে কেবল ‘বহিরাগত’রা লাভবান হয়েছেন।
নতুন ওয়াক্ফ আইনও জম্মু ও কাশ্মীরে কার্যকর হয়েছে। এতে মুসলিমদের জমির অধিকার নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
পেহেলগামের হামলার পর মোদি সরকারের ওপর গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও নিরাপত্তা ত্রুটির অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে সরকার যেভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা চরমপন্থী গোষ্ঠীদের পক্ষে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে সহায়তা করছে।
প্রধানমন্ত্রীর দায় শুধু নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়েই নয়, কাশ্মীরিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পর তাঁর দল ও সমর্থকদের উল্লাস নিয়েও মোদিকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।
সরকার এখন নিজেদের সক্রিয় দেখানোর চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ, নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক, সর্বদলীয় বৈঠক এবং সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে পাকিস্তানের আকাশপথ এড়িয়ে ফেরা—সবই তার প্রমাণ।
কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই সুযোগে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা ছড়াচ্ছে। তারা কাশ্মীরিদের টার্গেট করছে এবং প্রতিশোধের ডাক দিচ্ছে।
গত পাঁচ বছরের তথ্য বলছে, সন্ত্রাসবাদী হামলা এখনো থামেনি। বরং গত দুই বছরে বেসামরিক মৃত্যুর হার বেড়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, শুধু সামরিক পথ নয়, প্রয়োজনে সরকারকে আরও গভীর সামাজিক সমাধানের পথে হাঁটতে হবে।
অজয় আশীর্বাদ মহাপ্রশস্ত দ্য ওয়্যারের রাজনৈতিক সম্পাদক
দ্য ওয়্যার থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত