মার্চে ইন্টারনেটে ২৯৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার
Published: 2nd, April 2025 GMT
গত মার্চ মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
বুধবার (২ এপ্রিল) রিউমার স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যথাক্রমে ২৭১ ও ২৬৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে গত মার্চে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকের তথ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ১০৫টি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩৫ শতাংশ। জাতীয় বিষয়ে ১০৩টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১২টি, ধর্মীয় বিষয়ে ৩৬টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে তিনটি, শিক্ষা বিষয়ে তিনটি, প্রতারণা বিষয়ে ১২টি, খেলাধুলা বিষয়ে ১৬টি ভুল তথ্য ফ্যাক্ট চেকের অনুসন্ধানে শনাক্ত হয়েছে মার্চে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, এসব ঘটনায় ভিডিও-কেন্দ্রিক ভুল ছিল সবচেয়ে বেশি ১৪৩টি। তথ্যকেন্দ্রিক ভুল ছিল ১১০টি এবং ছবিকেন্দ্রিক ভুল ছিল ৪৫টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৬৮টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৯৭টি এবং বিকৃত হিসেবে ৩১টি ঘটনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ২৭৩ টি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এছাড়া, এক্সে ৬২টি, টিকটকে সাতটি, ইউটিউবে ৪৪টি, ইন্সটাগ্রামে ২৬টি, থ্রেডসে অন্তত পাঁচটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চেও এর ধারাবাহিকতা দেখেছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধান টিম জানায়, গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে চারটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। তিনটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গত কিছু মাস ধরেই আলোচনায় আছে। মার্চে এমন ২৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এর মধ্যে অর্ধেক ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে ফ্যাক্ট চেকের অনুসন্ধান দল।
রিউমার স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুল তথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমার স্ক্যানার দুটি ভাগে ভাগ করেছে৷ সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে, এসব অপতথ্যের সবগুলোই সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে।
মার্চে ২২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে দুটি, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে একটি, ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে চারটি, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে জড়িয়ে দুটি, মো. তৌহিদ হোসেনকে জড়িয়ে একটি এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ফ্যাক্ট চেক টিম জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) জড়িয়ে গত মাসে দুটি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এই দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে গত মাসে চারটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে ছয়টি, সারজিস আলমকে জড়িয়ে তিনটি, তাসনিম জারাকে জড়িয়ে চারটি, হুমায়রা নুরকে জড়িয়ে একটি, আব্দুল হান্নান মাসউদকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধেও অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। মার্চে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে সাতটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ২৩টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো তিনটি, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে জড়িয়ে একটি করে ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানার ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান টিম জানায়, কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ফেব্রুয়ারিতে তিনটি অপতথ্যের শিকার হয়েছে। এই সময়ে সংগঠনটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে, বিভিন্ন অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্চে ১৭টি মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হয়। মার্চে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে নয়টি। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয় পাঁচটি।
রিউমার স্ক্যানার গত মাসে ধর্ষণবিষয়ক অন্তত ২৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে একক ঘটনা হিসেবে মাগুরায় আট বছরের এক শিশুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। রমজান এবং ঈদ পালনকে ঘিরে ২২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৮টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ৩৯টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৪৫টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানারের ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান দল।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র গত ম স ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট নগরে প্যাডেলচালিত রিকশা ভাড়া ন্যূনতম ২০, সর্বোচ্চ ১০০ টাকা
সিলেট নগরে প্যাডেলচালিত রিকশার ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে মহানগর পুলিশ। তালিকা অনুযায়ী ন্যূনতম ভাড়া ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন ভাড়া ২০২৭ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
আজ সোমবার সকালে মহানগর পুলিশের কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিলেট শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে যাতায়াতের জন্য নতুন করে প্রস্তাবিত রিকশা ভাড়ার হার নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাড়ার তালিকা প্রণয়নের সময় নগরের রাজনীতিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, চাকরিজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, প্যাডেল রিকশা সমিতি, সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ প্যাডেলচালিত রিকশা ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ করেছিল। তবে ওই ভাড়া তালিকা শুরু থেকে মেনে নেননি রিকশাচালকেরা। এর ১০ বছর পর পুলিশের পক্ষ থেকে রিকশা ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুনর্নির্ধারিত প্রস্তাবিত ভাড়া তালিকায় দেখা গেছে জিন্দাবাজার মোড় (পয়েন্ট) থেকে লামাবাজার, মিরাবাজার, আম্বরখানা, ভাতালিয়া পর্যন্ত ৩০ টাকা। সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, ঈদগাহ, শেখঘাট পর্যন্ত ৪০ টাকা। শিবগঞ্জ, ওসমানী মেডিকেল পর্যন্ত ৫০ টাকা। বালুচর, টিলাগড়, বাগবাড়ি, চৌকিদেখি, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট পর্যন্ত ৬০ টাকা।
কোর্ট পয়েন্ট থেকে টিলাগড় পর্যন্ত ৬০ টাকা। শিবগঞ্জ, নতুন ব্রিজ ৪০ টাকা। মিরাবাজার ও যতরপুর ৩০ টাকা। উপশহর (এ, বি, সি, ডি, ই, এফ, জি, এইচ, আই, জে, কে ব্লক) ৫০ টাকা। নতুন ব্রিজ হয়ে দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনাল ৭০ টাকা। রেলওয়ে স্টেশন, গোপশহর মকন দোকান, গোয়াবাড়ি, আখালিয়া বিজিবি ক্যাম্প গেট, ভাঙ্গাটিকর, টুলটিকর, মিরাপাড়া পর্যন্ত ৮০ টাকা। ঝেরঝেরিপাড়া, শিবগঞ্জ সোনাপাড়া, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, উত্তর কাজীটুলা, গোয়াইটুলা, আম্বরখানা, মাহিমপুর, দর্শন দেউরী, সুবিদবাজার, ভাতালিয়া, ওসমানী মেডিকেল, কুমারপাড়া (ঝরনারপাড়) ৫০ টাকা। দর্জিবন্দ, শাহী ঈদগাহ, লেচুবাগান, হাউজিং এস্টেট, লন্ডনী রোড ও পাঠানটুলা, বাগবাড়ি, বর্ণমালা পয়েন্ট, এতিম স্কুল, নবাব রোড (শেখঘাট পিচের মুখ, কলাপাড়া ডহর), ঘাসিটুলা বেতেরবাজার, আম্বরখানা, কলবাখানী, মেন্দিবাগ, সাদাটিকর ৫০ টাকা। জল্লারপাড়, তোপখানা ২০ টাকা।
এ ছাড়া কোর্ট পয়েন্ট থেকে নতুন ব্রিজ হয়ে কদমতলী, লাউয়াই, বিসিক শিল্পনগরী, বরইকান্দি, চৌকিদেখি, লাক্কাতুরা, শাপলাবাগ ৭০ টাকা। কাজীটুলা, রাজারগলি, শাহজালাল দরগাহ গেট, মিরের ময়দান, শেখঘাট, রিকাবীবাজার, দাড়িয়াপাড়া, মির্জাজাঙ্গাল, পশ্চিম কাজিরবাজার, ছড়ারপার, কুমারপাড়া পয়েন্ট, মিরাবাজার আগপাড়া, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ৩০ টাকা। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গেট ৯০ টাকা। কুমারগাঁও বাস টার্মিনাল ১০০ টাকা। খোজারখোলা, সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস, বালুচর, বাদাম বাগিচা, মদিনা মার্কেট, কানিশাইল খেয়াঘাট, পীর মহল্লা কুশিঘাট ৬০ টাকা।
আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সুবিদবাজার, শাহী ঈদগাহ, কাজীটুলা ২০ টাকা। মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, চৌকিদেখি ৩০ টাকা। লাক্কাতুরা, মিরাবাজার, নয়াসড়ক ৪০ টাকা। শিবগঞ্জ ৬০ টাকা। টিলাগড়, উপশহর (এবিসি পয়েন্ট), নতুন ব্রিজ ৬০ টাকা।
শিবগঞ্জ পয়েন্ট থেকে টিলাগড়, সেনপাড়া, খরাদিপাড়া ২০ টাকা। নতুন ব্রিজ, বালুচর ৩০ টাকা। ঈদগাহ ৫০ টাকা। আম্বরখানা, লামাবাজার, শেখঘাট ৬০ টাকা। পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, ওসমানী মেডিকেল, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, শেখঘাট, সুবিদবাজার ৭০ টাকা এবং কদমতলী বাস টার্মিনাল ৮০ টাকা।
দক্ষিণ সুরমা কিনব্রিজ থেকে রেলগেট ২০ টাকা। হুমায়ুন রশীদ চত্বর, টেকনিক্যাল, পর্যন্ত লাউয়াই ৩০ টাকা। শিববাড়ি ও গোটাটিকর পর্যন্ত ৪০ টাকা। বরইকান্দি ও আলমপুর পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং মকন দোকান পর্যন্ত ৭০ টাকা।
বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত রুটের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ গজের জন্য অতিরিক্ত ১০ টাকা ভাড়া প্রযোজ্য হবে। তবে নির্ধারিত রুটে উল্লিখিত নয় এমন নিকটবর্তী গন্তব্যে যাত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।