পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে পা ফেলারও জো নেই, লাখো পর্যটক
Published: 2nd, April 2025 GMT
চট্টগ্রামে মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। বছরজুড়ে এই সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন শহর ও আশপাশের এলাকার লোকজন। দর্শনার্থীদের মধ্যে থাকেন বাইরের জেলার মানুষও। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামে সৈকতে। ঈদের আনন্দ উদ্যাপনে সময় কাটাতে সমুদ্র দেখতে হাজির হন হাজারো মানুষ। সকাল থেকে বিকেল, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পর্যন্ত মানুষের উপস্থিতিতে মুখর সৈকত এলাকা।
আজ বুধবারও এই চিত্রের পরিবর্তন হয়নি। ঈদের দিন বিকেল থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে আসতে শুরু করেন নানা শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ। আজও পর্যটকের ভিড় লেগেই ছিল।
সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। অনেকেই সৈকতের বালুচরে নেমে সমুদ্রে স্নান করেন। কেউ কেউ স্পিডবোটে চড়েন।
চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কলেজপড়ুয়া ছয় বন্ধু আজ বিকেলে এসেছিলেন বেড়াতে। তাঁদের একজন সালেহ নকীব। তিনি বলেন, ঈদের সময় লম্বা ছুটি পাওয়া যায়। বন্ধুরাও গ্রামে আসেন। সবাই মিলে প্রতিবছর ঈদে একেক জায়গায় বেড়াতে যান। এবার অবশ্য বেশি দূরে যাননি। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে এসেছেন।
নগরের সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আউটার রিং রোড এবং পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পর এই এলাকার আগের চেনা পরিবেশ পাল্টে গেছে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে নির্মিত আউটার রিং রোডের পাশে এলাকাও দর্শনার্থীদের ঘুরে বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন চাকরিজীবী শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এবার ঈদে লম্বা ছুটি মিলেছে। তাই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, টানেল ঘুরে দেখেছেন। তাঁদের ছোটবেলার সঙ্গে এখনকার সৈকতের পরিবেশ অনেক পাল্টে গেছে।
ঈদের দিন সোমবার থেকে বুধবার পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় এক লাখের বেশি মানুষ ঘুরতে এসেছেন বলে জানান পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের ছুটিতে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে মানুষের ঢল নেমেছে। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিপুলসংখ্যক পর্যটক এলেও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। শুরু থেকে তাঁরা তৎপর ছিলেন।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে তিনটি পার্ক বন্ধ হয়ে যায়। আগ্রাবাদ, কাজীর দেউড়ি ও বহদ্দারহাট এলাকার এই তিনটি পার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দর্শনার্থীদের চাপ বেড়ে গেছে চালু থাকা বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক, কর্ণফুলী নদীর তীরেও ঘুরতে বের হওয়া মানুষের জমজমাট উপস্থিতি ছিল। চিড়িয়াখানায় তিন দিনে ৪০ হাজারের মতো মানুষ ঘুরতে এসেছিলেন। চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের বেশি আগ্রহ ছিল বাঘ, সিংহ, হরিণ, বানর নিয়ে। এসব প্রাণীর খাঁচার সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই ছিল। পশুপাখি দেখতে শিশু-কিশোরদের আগ্রহই বেশি চোখে পড়েছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবার ঈদের দিন থেকেই দর্শনার্থীদের চাপ ছিল। তিন দিনে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ঘুরতে এসেছেন। ঈদের ছুটি এখনো শেষ হয়নি। আশা করছেন, আগামী দু-তিন দিন এই ভিড় থাকবে।
চিড়িয়াখানার পাশেই রয়েছে ফয়’স লেক। সেখানেও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে ছিল। এখানে তিনটি অংশ রয়েছে—ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট, সি ওয়ার্ল্ড ও বেজক্যাম্প। সবখানে মানুষের সরব উপস্থিতি। সি ওয়ার্ল্ডের সুইমিংপুলে শত শত মানুষ আনন্দে মেতেছেন। নানা বয়সী মানুষ মেতে উঠেছেন জলকেলিতে। পার্কের রাইডগুলোতেও চড়ে বসেছে অনেক শিশু-কিশোর।
ফয়’স লেক কমপ্লেক্সের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কনকর্ডের ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, এবার নতুন করে ছয়টি রাইড যুক্ত করা হয়েছে। এতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।