হাওরে গরু চরাতে চরাতে মায়া জন্মে গেছে জহেরের মনে
Published: 3rd, April 2025 GMT
ধান কেটে নেওয়া হয়েছে সম্ভবত কয়েক মাস আগে। বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে খড় পড়ে আছে। খেতের আলে গজিয়েছে সবুজ ঘাস। এর মাঝে দুজন রাখাল আপনমনে গরু চরাচ্ছেন। হাতে থাকা লাঠি দিয়ে তাঁরা গরুদের এদিক-ওদিক সরাচ্ছেন আর ঘাস খাওয়াচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার বেলা চারটার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার রামেশ্বর গ্রামের পাশের খলারবন শান্তিনগর হাওরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। রাখলদের একজন কিশোর, অন্যজন মধ্যবয়সী। কথা হয় জহের পাত্রর (৫৫) সঙ্গে। তাঁর বাড়ি উপজেলার ঠাকুরমাটি গ্রামে।
চিকনাগুল চা-বাগানে দৈনিক ১৭৯ টাকায় জহের পাত্র পাহারাদারের কাজ করেন। তিনি বলেন, তাঁদের গ্রামে ২৪ ঘরের শতাধিক গরু আছে। এসব গরুকে প্রতিদিন দুই পরিবারের দুজন ব্যক্তি পালাক্রমে মাঠে-হাওরে নিয়ে ঘাস খাওয়ান। ১২ দিন পরপর দুই পরিবারের পালা পড়ে। তবে মাঠে আর হাওরে এখন পর্যাপ্ত ঘাস না থাকায় তাঁদের ঘাসের সন্ধানে গরুগুলোকে নিয়ে অনেকখানি পথ যেতে হয়।
জহের বলেন, তাঁর নিজের পাঁচটা গরু আছে। বাকি গরুগুলো অন্যদের। দীর্ঘদিন ধরে গরুগুলো চরাতে গিয়ে সব কটিকে আপন মনে হয়। এসব গরু রাখতে রাখতে মায়া জন্মে গেছে। তাই সব কটি গরুর পেট ভরলে বাড়ি নিয়ে যান। যদি বুঝতে পারেন, একটা গরু কম খেয়েছে, তাহলে সেটি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘাস না খাওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেন।
রোদের তীব্রতা আটকাতে জহের মাথায় ছায়া দিতে এক হাতে ছাতা ধরে ছিলেন। তাঁর অপর হাতে ছিল গরু তাড়ানোর চিকন বাঁশের লাঠি। কথায় কথায় জহের নিজ পরিবারের কথাও শোনান। তিনি বলেন, গৃহিণী স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। আর্থিক দুরাবস্থার কারণে সন্তানদের যথাযথভাবে পড়াশোনা করাতে পারেননি। বড় ছেলে সুশান্ত পাত্র মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এখন তাঁকে একটি ইজিবাইক কিনে দিয়েছেন। আরেক ছেলে মিঠুন পাত্র রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জহের পাত্র জানালেন। তিনি বলেন, ‘সংসারে তিনজন আয় করি। তবে আয়ের চেয়ে খরচ বেশি, সংসার চলে না। কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”
তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস