মুরাদনগরে আতঙ্ক কিশোর গ্যাং, নয় এলাকায় সক্রিয় ১২ গ্যাং
Published: 3rd, April 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগর সদর ও থানার সংলগ্ন এলাকাগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাটে দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ কিশোররা ঘোরাফেরা করছেন, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠা এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের ‘আল্লাহ চত্বরে’ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পথচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক এবং বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। গত দুই মাসে এমন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে আহত হয়েছেন প্রায় ২৯ জন। যার মধ্যে গ্যাংয়ের সদস্যও রয়েছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে কোনো ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার সাহস পায়না ভুক্তভোগীরা।
বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলা সদরের নয়টি পারা মহল্লায় ১২টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। যার মধ্যে পাত্তরবাড়ী, দক্ষিণপাড়া, মধ্যপাড়া, মাস্টারপাড়া, নিমাইকান্দিৎ, চৌধুরীকান্দি, নয়াকান্দিতে একটি করে, রহিমপুরে দুইটি ও উত্তরপাড়ায় তিনটি। পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠা এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সামান্য কথাকাটাকাটি কিংবা ব্যক্তিগত বিরোধ হলেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে। হাতে দা, ছুরি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে আসে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষ আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী মুরাদনগর থানা পুলিশের প্রতি টহল জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। এলাকাবাসী মনে করেন, পুলিশের নিয়মিত টহল ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা রাতে স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছি না। কিশোর গ্যাংদের দৌরাত্ম্যে এলাকায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দ্রুত যদি পুলিশ টহল না বাড়ায়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ডি আর হাই স্কুল এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, সন্ধ্যার পর ডি আর হাই স্কুল থেকে পশ্চিম দিকে মুরাদনগর কেন্দ্রিয় কবরস্থান পর্যন্ত এবং পূর্ব দিকে চৌধুরীকান্দি পর্যন্ত, মাস্টারপাড়া রোডে ও সদরের নিমাইকান্দি এলাকায় কিশোররা দল বেধে ঘোরাফেরা করে। সুযোগ বুঝে পথচারির সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়। এজন্য সন্ধ্যার পর সেই জনপদ দিয়ে চলাফেরার সময় এলাকাবাসী খুব আতঙ্কে থাকে।
বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন ধরে সন্ধ্যার পর দোকান বন্ধ করে বের হতেই ভয় লাগে। পুলিশের টহল বাড়ালে অন্তত আমরা একটু স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারবো।
উপজেলা সদরের নিমাইকান্দি এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বলেন, এলাকায় ইদানিং চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মোবাইল চুরি হচ্ছে বেশি। দিনের বেলায়ও বাসা-বাড়ির জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। প্রতিমূহুর্তে চোরের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তাদের মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসার সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। তাই তারা তাদের মেয়েদের স্কুল কলেজে পাঠিয়ে এক প্রকার চিন্তায় থাকেন।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, আমরা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। খুব শিগগিরই টহল জোরদার করা হবে এবং যেসব কিশোর অপরাধে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র দনগর য় র সদস এল ক য় অপর ধ সদর র আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত
নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার মুরাদনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম মো. ইদন মিয়া (৬০)। তিনি মুরাদনগর এলাকার বাসিন্দা। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে মোস্তাকিম (৩০) ও আবুল হোসেন (৬০) নামের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেলে সেখানে বিএনপির দুটি পক্ষকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। একটি পক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী এবং আরেক পক্ষে সদ্য বহিষ্কৃত সদস্যসচিব আবদুল কাইয়ুম মিয়া নেতৃত্ব দেন। মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি দলীয় পদ থেকে বহিষ্কৃত হন আবদুল কাইয়ুম। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয় থাকার বিষয়টি মানতে পারছিল না শাহ আলম পক্ষ।
অভিযোগ আছে, আবদুল কাইয়ুমকে ঠেকাতে শাহ আলম চৌধুরীর ইন্ধন ও হস্তক্ষেপে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের আবার এলাকায় ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়। এর অংশ হিসেবে আজ ভোর পাঁচটার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে এলাকায় ফিরতে শুরু করে আত্মগোপনে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ খবর পেয়ে আবদুল কাইয়ুমের সমর্থকেরা বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষ টেঁটা, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ইদন মিয়াসহ অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ইদন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানারা কবীর। তিনি জানান, ইদন মিয়াকে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনায় হয়। ওই সময় তিনি মৃত ছিলেন। মরদেহ এই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে শাহ আলম চৌধুরী ও আবদুল কাইয়ুম মিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।