কুমিল্লার মুরাদনগর সদর ও থানার সংলগ্ন এলাকাগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাটে দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ কিশোররা ঘোরাফেরা করছেন, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠা এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের ‘আল্লাহ চত্বরে’ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পথচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক এবং বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। গত দুই মাসে এমন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে আহত হয়েছেন প্রায় ২৯ জন। যার মধ্যে গ্যাংয়ের সদস্যও রয়েছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে কোনো ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার সাহস পায়না ভুক্তভোগীরা। 

বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলা সদরের নয়টি পারা মহল্লায় ১২টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। যার মধ্যে  পাত্তরবাড়ী, দক্ষিণপাড়া, মধ্যপাড়া, মাস্টারপাড়া, নিমাইকান্দিৎ, চৌধুরীকান্দি, নয়াকান্দিতে একটি করে, রহিমপুরে দুইটি ও উত্তরপাড়ায় তিনটি। পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠা এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সামান্য কথাকাটাকাটি কিংবা ব্যক্তিগত বিরোধ হলেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে। হাতে দা, ছুরি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে আসে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষ আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী মুরাদনগর থানা পুলিশের প্রতি টহল জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। এলাকাবাসী মনে করেন, পুলিশের নিয়মিত টহল ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা রাতে স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছি না। কিশোর গ্যাংদের দৌরাত্ম্যে এলাকায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দ্রুত যদি পুলিশ টহল না বাড়ায়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

ডি আর হাই স্কুল এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, সন্ধ্যার পর ডি আর হাই স্কুল থেকে পশ্চিম দিকে মুরাদনগর কেন্দ্রিয় কবরস্থান পর্যন্ত এবং পূর্ব দিকে চৌধুরীকান্দি পর্যন্ত, মাস্টারপাড়া রোডে ও সদরের নিমাইকান্দি এলাকায় কিশোররা দল বেধে ঘোরাফেরা করে। সুযোগ বুঝে পথচারির সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়। এজন্য সন্ধ্যার পর সেই জনপদ দিয়ে চলাফেরার সময় এলাকাবাসী খুব আতঙ্কে থাকে। 

বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন ধরে সন্ধ্যার পর দোকান বন্ধ করে বের হতেই ভয় লাগে। পুলিশের টহল বাড়ালে অন্তত আমরা একটু স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারবো।

উপজেলা সদরের নিমাইকান্দি এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বলেন, এলাকায় ইদানিং চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মোবাইল চুরি হচ্ছে বেশি। দিনের বেলায়ও বাসা-বাড়ির জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। প্রতিমূহুর্তে চোরের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তাদের মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসার সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। তাই তারা তাদের মেয়েদের স্কুল কলেজে পাঠিয়ে এক প্রকার চিন্তায় থাকেন।

এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, আমরা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। খুব শিগগিরই টহল জোরদার করা হবে এবং যেসব কিশোর অপরাধে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র দনগর য় র সদস এল ক য় অপর ধ সদর র আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ