ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলেন ৪১ বছর বয়সী নারী নান সিন হেইন। ২১ বছর বয়সী ছেলেকে বাঁচাতে পাঁচ দিন ধরে ধসে পড়া ভবনের সামনে সাহায্যের আশায় বসে আছেন তিনি। যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভবনটিতে শুরু হয়নি উদ্ধারকাজ। হেইনের ভাষ্য, আমি বিশ্বাস করি আমার সন্তান বেঁচে আছে। যদিও এটা সত্য যে, ওর বেঁচে থাকার আশা খুবই কম। কিন্তু আজকের মধ্যে যদি উদ্ধার করা যায়, আমি হয়তো ওকে জীবিত ফিরে পাব।
শুধু হেইন নয়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে পুরো মান্দালয় শহরে ধ্বংসস্তূপ থেকে এমনভাবে উদ্ধারের আকুতি জানানো হচ্ছে। ভূমিকম্পবিধ্বস্ত মিয়ানমারে পর্যাপ্ত উদ্ধার তৎপরতার অভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েও মৃত্যু এড়াতে পারছেন না আটকে পড়া মানুষ। অপ্রতুল সাহায্যে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে আহতদের। বাসস্থান, চিকিৎসা সামগ্রীর সঙ্গে অনেক এলাকায় যুক্ত হয়েছে খাদ্য ও নিরাপদ পানির অভাব।
বিবিসি জানিয়েছে, ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে মান্দালয় শহরের উত্তর ও মধ্যাংশের প্রতিটি রাস্তায় কমপক্ষে একটি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ভবনের দেয়ালে গভীর ফাটল দেখা গেছে। শহরের প্রধান হাসপাতালের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় গুরুতর আহত রোগীদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫ জনে। ভূমিকম্পের আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল মিয়ানমারে। ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানালেও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে থাকায় সাহায্য আসতে সময় লেগেছে। বাংলাদেশ, ভারত, চীন এবং রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সহায়তা করলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল।
আধুনিক প্রযুক্তি ও লোকবল সীমিত হওয়ায় চলমান উদ্ধারকাজে বিপুলসংখ্যক লোক আটকা পড়া জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যেমন মান্দালয়ের স্কাই ভিলা কনডোমিনিয়াম কমপ্লেক্স এবং উ হ্লা থেইন বৌদ্ধ বিহার। সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে ভারতীয় উদ্ধারকারী দলের নেতা নীরাজ সিং জানিয়েছেন, বৌদ্ধ একাডেমি ‘প্যানকেকের মতো’ এক স্তরের ওপর আরেক স্তর পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাঁর মতে, এখানে জীবিতদের পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৫ জনে পৌঁছেছে, আহত ৪ হাজার ৭১৫ জন এবং এখনও নিখোঁজ ৩৪১ জন। তবে উদ্ধারকারীরা এখনও অনেক স্থানে পৌঁছাতে না পারায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
মিয়ানমারে এই ধ্বংসযজ্ঞের ওপর নতুন বিপর্যয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে ভূমিকম্পের আফটার শক। ভূমিকম্প-পরবর্তী গত পাঁচ দিনে প্রায় ৭০ বার আফটার শকের তথ্য দিয়েছে দেশটির মেটিওরোলজি এবং হাইড্রোলজি বিভাগ। এখন পর্যন্ত হওয়া এসব আফটার শকের রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ২.
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কাজ করছে উদ্ধারকারী ও মেডিকেল দল
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বাংলাদেশের উদ্ধারকারী ও মেডিকেল দলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল দেশটির রাজধানী নেপিদোতে জুবু থিরি টাউনশিপ এবং নেপিদো এলাকার কয়েকটি ভবনে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, অভিযানে মিয়ানমারের স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগ সর্বাত্মক সহায়তা করছে। এ ছাড়া, উদ্ধারকারী দলের জন্য খাদ্য ও পানি সরবরাহ করে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন মিয়ানমারের স্থানীয় লোকজন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ভ ম কম প র
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।
মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ।
এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা।
কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক