Samakal:
2025-08-02@11:15:15 GMT

ধ্বংসস্তূপে বাঁচার আকুতি 

Published: 4th, April 2025 GMT

ধ্বংসস্তূপে বাঁচার আকুতি 

ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলেন ৪১ বছর বয়সী নারী নান সিন হেইন। ২১ বছর বয়সী ছেলেকে বাঁচাতে পাঁচ দিন ধরে ধসে পড়া ভবনের সামনে সাহায্যের আশায় বসে আছেন তিনি। যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভবনটিতে শুরু হয়নি উদ্ধারকাজ। হেইনের ভাষ্য, আমি বিশ্বাস করি আমার সন্তান বেঁচে আছে। যদিও এটা সত্য যে, ওর বেঁচে থাকার আশা খুবই কম। কিন্তু আজকের মধ্যে যদি উদ্ধার করা যায়, আমি হয়তো ওকে জীবিত ফিরে পাব। 

শুধু হেইন নয়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে পুরো মান্দালয় শহরে ধ্বংসস্তূপ থেকে এমনভাবে উদ্ধারের আকুতি জানানো হচ্ছে। ভূমিকম্পবিধ্বস্ত মিয়ানমারে পর্যাপ্ত উদ্ধার তৎপরতার অভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েও মৃত্যু এড়াতে পারছেন না আটকে পড়া মানুষ। অপ্রতুল সাহায্যে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে আহতদের। বাসস্থান, চিকিৎসা সামগ্রীর সঙ্গে অনেক এলাকায় যুক্ত হয়েছে খাদ্য ও নিরাপদ পানির অভাব। 

বিবিসি জানিয়েছে, ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে মান্দালয় শহরের উত্তর ও মধ্যাংশের প্রতিটি রাস্তায় কমপক্ষে একটি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ভবনের দেয়ালে গভীর ফাটল দেখা গেছে। শহরের প্রধান হাসপাতালের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় গুরুতর আহত রোগীদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। 

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫ জনে। ভূমিকম্পের আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল মিয়ানমারে। ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানালেও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে থাকায় সাহায্য আসতে সময় লেগেছে। বাংলাদেশ, ভারত, চীন এবং রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সহায়তা করলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। 

আধুনিক প্রযুক্তি ও লোকবল সীমিত হওয়ায় চলমান উদ্ধারকাজে বিপুলসংখ্যক লোক আটকা পড়া জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যেমন মান্দালয়ের স্কাই ভিলা কনডোমিনিয়াম কমপ্লেক্স এবং উ হ্লা থেইন বৌদ্ধ বিহার। সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে ভারতীয় উদ্ধারকারী দলের নেতা নীরাজ সিং জানিয়েছেন, বৌদ্ধ একাডেমি ‘প্যানকেকের মতো’ এক স্তরের ওপর আরেক স্তর পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাঁর মতে, এখানে জীবিতদের পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। 

মিয়ানমারের সামরিক সরকার বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৫ জনে পৌঁছেছে, আহত ৪ হাজার ৭১৫ জন এবং এখনও নিখোঁজ ৩৪১ জন। তবে উদ্ধারকারীরা এখনও অনেক স্থানে পৌঁছাতে না পারায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।

মিয়ানমারে এই ধ্বংসযজ্ঞের ওপর নতুন বিপর্যয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে ভূমিকম্পের আফটার শক। ভূমিকম্প-পরবর্তী গত পাঁচ দিনে প্রায় ৭০ বার আফটার শকের তথ্য দিয়েছে দেশটির মেটিওরোলজি এবং হাইড্রোলজি বিভাগ। এখন পর্যন্ত হওয়া এসব আফটার শকের রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ২.

৮ থেকে ৭.৫। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কাজ করছে উদ্ধারকারী ও মেডিকেল দল
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বাংলাদেশের উদ্ধারকারী ও মেডিকেল দলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল দেশটির রাজধানী নেপিদোতে জুবু থিরি টাউনশিপ এবং নেপিদো এলাকার কয়েকটি ভবনে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

আইএসপিআর জানায়, অভিযানে মিয়ানমারের স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগ সর্বাত্মক সহায়তা করছে। এ ছাড়া, উদ্ধারকারী দলের জন্য খাদ্য ও পানি সরবরাহ করে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন মিয়ানমারের স্থানীয় লোকজন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ভ ম কম প র

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।

ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ