“যে টিউশনিটা আছে, সেটাও ছেড়ে দাও, তারপর আমার গরিব বর সন্ধ্যের আগেই বাড়ি ফিরে আসবে আর আমার কোনো অনুশোচনা থাকবে না।”— সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমায় অপর্ণার এই সংলাপ আজও দর্শক হৃদয়ে গেঁথে আছে। ১৪ বছরের কিশোরী ‘অপর্ণা’ আর কেউ নন, তিনি হলেন ভারতীয় সিনেমার দাপুটে অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর।
গত ৮ ডিসেম্বর ৮০ পূর্ণ করে একাশিতে পা দেন এক সময়ের স্বপ্নের নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর। ২০১০ সালের পর অভিনয় থেকে দীর্ঘ বিরতি নিয়ে ২০২৩ সালে ‘গুলমোহর’ সিনেমা দিয়ে পর্দায় ফিরেন। গত বছরও মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ‘আউট হাউজ’ সিনেমা। সর্বশেষ বাংলা ভাষার ‘পুরাতন’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী।
এর আগে ভারতীয় বাংলা ‘অন্তহীন’ সিনেমায় অভিনয় করেন শর্মিলা ঠাকুর। এটি ২০০৯ সালে মুক্তি পায়। চৌদ্দ বছর পর ‘পুরাতন’ সিনেমার মাধ্যমে বাংলা সিনেমায় অভিনয় করলেন। এ বিষয়ে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, “একেবারেই তাই। বাংলা ভাষায় অভিনয় করে খুব আনন্দ পেয়েছি। বাংলা আমার মাতৃভাষা। নিজের ভাষায় কাজ করার আলাদা একটা আনন্দ আছে, যেটা হিন্দি বা ইংরেজি সিনেমার ক্ষেত্রে নেই। তাই আমার কাছে এই সিনেমার আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। অনেক দিন ধরেই একটা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করতে চাইছিলাম।”
এই বয়সেও শরীরি সৌন্দর্য, লাবণ্যতা, মাধুর্যতা কীভাবে ধরে রেখেছেন? এ প্রশ্ন রাখতেই শর্মিলা ঠাকুর বলেন, “এ নিয়ে তো আপনারাই বলেন। পরিমিত আহার, একটু শরীরচর্চা আর ইতিবাচক মনোভাব। খারাপ চিন্তাভাবনা যত কম করা যায় ততই ভালো।”
বয়স বাড়লেও সব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখেন শর্মিলা ঠাকুর। অথচ এ বয়সে এমন কর্মময় থাকাটা বেশ কঠিন। শর্মিলা ঠাকুর বলেন, “সে তো একটু থাকতেই হয়। না হলে কথা বলার মতো কোনো বিষয় থাকে না।”
এখন কীভাবে দিন কাটান শর্মিলা ঠাকুর? তার স্পষ্ট জবাব, “আমার অনেক বন্ধুবান্ধব রয়েছে। আমার একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। সিনেমা দেখতে ভালোবাসি। দিল্লি শহরে অনেক সেমিনার, প্রদর্শনী, সংগীতানুষ্ঠান প্রায়ই কিছু না কিছু হয়। আমি এগুলো ভীষণ ভালোবাসি। এখানে ব্রিটেন, কানাডাসহ নানা দেশের দূতাবাস রয়েছে। এসব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ হয়, নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। মোটামুটি দিনগুলো ভালোই কেটে যায়।”
বৃদ্ধ বয়সে মানুষের স্মৃতিভ্রংশ দেখা দেয়। বিষয়টি কী শর্মিলা ঠাকুরকে চিন্তিত করে? জবাবে এ অভিনেত্রী বলেন, “ভেবে কোনো লাভ নেই। নিজেকে ব্যস্ত রাখা উচিত। তরুণদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা উচিত। নিজের পরিসর বাড়ানো উচিত। কোনো পছন্দের বিষয় নিয়ে একটু পড়াশোনা করা উচিত। কিন্তু স্মৃতিভ্রংশ অনেক সময় জিনগত কারণেও হয়ে থাকে। তবে এখন অনেক কিছু করা যায়। ভয়ের উদ্রেক হওয়াটা স্বাভাবিক, তারপরও বিভিন্নভাবে কিছুটা ঠেকিয়ে রাখা যায় বোধহয়, আমি ঠিক জানি না।”
ক্রিকেটার নবাব মনসুর আলী খান পতৌদির সঙ্গে ঘর বাঁধেন শর্মিলা। ২০১১ সালে গত হয়েছেন মনসুর আলী। বিখ্যাত পরিবার, ছেলে, পুত্রবধূও তারকা। সবাইকে কীভাবে একসঙ্গে রেখেছেন? জবাবে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, “ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। কারো বিষয়ে যেচে গিয়ে মতামত দিই না। সাইফকে কিছু বললে ও শুনবেই বা কেন? কারিনা আমার পরিবারের বউ। ও আমার কাছে, আমাদের পরিবারে এসেছে। সেই সম্মান দিয়েছি। আমিও আমার শাশুড়ির কাছে সেই সম্মান পেয়েছি। বাচ্চারা তাদের সময়মতো আমার কাছে আসে, সময় কাটায়। এটাই তো পাওয়া।”
১৯৪৬ সালের ৮ ডিসেম্বর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বংশধর গীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ইরা ঠাকুরের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন শর্মিলা। তার মা ইরা ঠাকুর ছিলেন আসামের বিখ্যাত লেখক জ্ঞানদাভিরাম বড়ুয়ার মেয়ে। শর্মিলা ঠাকুরের মায়ের পরিবারের দিক থেকেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। ইরা ঠাকুরের মা লতিকা বড়ুয়া ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতনি।
ঠাকুর পরিবারের বংশধর শর্মিলা ১৯৫৯ সালে বাংলা থেকে রুপালি জগতের যাত্রা করলেও কয়েক বছর পরই তৎকালীন বম্বে পাড়ি জমান। মাত্র ২০ বছর বয়সে শক্তি সামন্ত পরিচালিত ‘কাশ্মীর কি কলি’ সিনেমা দিয়ে তার মুম্বাই অভিযান শুরু হয়। প্রথম সিনেমায় তার অনবদ্য অভিনয় নজর কাড়ে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের। সেই সময় রুপালি পর্দায় শর্মিলা ঠাকুর মানেই সিনেমা সুপারহিট। একের পর এক মুক্তি পায় ‘ওয়াক্ত’, ‘অনুপমা’, ‘দেবর’, ‘শাওয়ান কি ঘাটা’-এর মতো ব্যবসাসফল সিনেমা।
শর্মিলা ঠাকুর প্রতিবার ভিন্নভাবে পর্দায় হাজির হয়েছেন। ১৯৬৬ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ সিনেমায় উত্তমকুমারের বিপরীতে ভিন্নভাবে দেখা যায় তাকে। নিজেকে ভাঙতে ভালোবাসেন শর্মিলা। তাই তো শাড়ি ছেড়ে প্রথা ভেঙে বিকিনি পরেও সাবলীল ছিলেন ক্যামেরার সামনে; যা কেউ ভাবতেও পারেননি। অথচ তা তিনি অবলীলায় করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে শক্তি সামন্তের ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’ সিনেমায় বিকিনি পরে তার পর্দায় আবির্ভাব রীতিমতো আলোড়ন তুলেছিল।
রুপালি পর্দায় বিকিনি পরার আগে অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের জন্য বিকিনি ফটোশুট করেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। মূলধারার নায়িকাদের মধ্যে বলতে গেলে তিনিই প্রথম এমনটি করেন, যা সেই সময় হইচই ফেলে দেয়। এক সাক্ষাৎকারে শর্মিলা ঠাকুর বলেছিলেন, “জীবনে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করেছি, অতীতে কখনোই ফিরে দেখিনি। এগুলো আমার কাছে রীতিবিরুদ্ধ। ফিল্মফেয়ারের বিকিনি ফটোশুটটাও তেমনি, তবে মানুষ এটি আমাকে ভুলতে দেবে না।”
শুধু পর্দায় নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও প্রথা ভাঙেন শর্মিলা ঠাকুর। ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকা অবস্থায় পতৌদি নবাব বংশের সন্তান, ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মনসুর আলী খান পতৌদির সঙ্গে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে ধর্ম নিয়ে। তবে সব বাধা এক পাশে রেখে ১৯৬৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। এ নিয়েও অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। বিয়ের আগে শর্মিলা ধর্ম পরিবর্তন করেন। নাম বদলে রাখেন বেগম আয়েশা সুলতানা।
১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত ব্যবসাসফল সিনেমাগুলো হলো— ‘আমনে সামনে’, ‘হামসায়া’, ‘সত্যকাম’, ‘তালাশ’। তবে ১৯৬৯ সালে পূর্বের রেকর্ড ভাঙেন ‘আরাধনা’ সিনেমা দিয়ে। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ১৯৭১ সালে ‘সীমাবদ্ধ’। দুটি সিনেমাতেই অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এবং সাফল্য পান তিনি।
শর্মিলা অভিনীত উল্লেখযোগ্য বলিউড সিনেমাগুলো হলো— ‘সফর’, ‘অমর প্রেম’, ‘রাজারানি’, ‘দাগ’, ‘আ গালে লাগ যা’, ‘দাস্তান’ প্রভৃতি। ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘মৌসুম’। এটি পরিচালনা করেন গুলজার। সিনেমাটিতে সঞ্জীব কুমারের বিপরীতে অসাধারণ অভিনয়ের কারণে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শর্মিলা ঠাকুর। ২০০৩ সালে ‘আবার অরণ্যে’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৩ সালে লাভ করেন ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ব র র ঠ ক র বল ন আম র ক ছ পর দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
শিকারি ইসরায়েলকেই ভুক্তভোগী দেখাচ্ছে পশ্চিমারা
ইসরায়েল শুক্রবার সকালে কোনো উস্কানি ছাড়াই ইরানের অভ্যন্তরে ইস্পাহান ও তেহরানকে নিশানা করে বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় বিজ্ঞানী, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, নারী-পুরুষসহ অনেক বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারায়। অথচ পশ্চিমা নেতৃত্ব ও মিডিয়া ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ‘প্রিএম্পটিভ’ তথা সম্ভাব্য বিপদ ঠেকাতে আগাম হামলা হিসেবে দেখাচ্ছে। মার্কিন সিনেটের নেতা জন থুন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ইরানি আগ্রাসন’ বন্ধ ও আমেরিকার সুরক্ষার জন্যই ইসরায়েল হামলা করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনের পরও পশ্চিমা বিশ্ব শিকারি ইসরায়েলকে তারই শিকারদের দ্বারা আক্রান্ত এক ‘ভিকটিম’ বা ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল যখন বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গঠন করেছে, তখন থেকেই পশ্চিমাদের এ প্রবণতা স্পষ্ট। ইসরায়েল যতই ভূমি দখল করছে ও মানুষকে নিপীড়ন করছে, ততই পশ্চিমারা তাকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখাচ্ছে। এই উপস্থাপনা আকস্মিক বা কোনো দুর্ঘটনা নয়।
১৯৬৭ সালের জুন মাসের যুদ্ধে পশ্চিমারা ইসরায়েলকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখায়। তাকে ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। এর ফলে পশ্চিমা খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দাঁড়ায় বহু গুণ, যারা আরব ও ফিলিস্তিনিদের অত্যাচারী হিসেবে দেখে। ইসরায়েলের ভূমি দখলের বিষয়টি আত্মরক্ষার সাহসী ভূমিকা হিসেবে উদযাপন করা হয়। এর মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিমা বিশ্ব ‘ভুক্তভোগী’ ও ‘আগ্রাসী’র যে চরিত্র অঙ্কন করেছিল, তা এখনও চলমান।
১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল ৫০০ ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করে সেখানে ইহুদি উপনিবেশ বানায়। এই দখলকে পশ্চিমা বিশ্ব অলৌকিক ঘটনা হিসেবে স্বাগত জানায়। ফিলিস্তিনিদের হারানো ভূমিতে জায়নবাদীরা যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে, পশ্চিমারা কখনোই তার সমালোচনা করেনি। উল্টা ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের জন্য ইসরায়েলকে মহিমান্বিত করার পাশাপাশি পশ্চিমারা তাদের ছোট্ট রাষ্ট্রের জন্য বিলাপ করেছে। তারা ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকে সমর্থন দিয়েছে এবং ভালোভাবেই এ দখলকর্ম চলছিল। ভাবটা এমন যে, ভুক্তভোগী হিসেবে ইসরায়েলের আরও ভূমি দখল করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলের পশ্চিম তীর সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে সমর্থন করে দাবি করেছেন, ‘এটি (ইসরায়েল) ছোট্ট একটি দেশ… ভূমির পরিমাণের দিক থেকে এটি ছোট দেশ।’
২৯ জুন ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম জেরুজালেমের সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে গ্রহণ করে পরে ফিলিস্তিনি-জর্ডানি মেয়রকে বরখাস্ত করে। এভাবে পৌর পরিষদ ভেঙে পুরো শহরকে ইহুদীকরণ করে। দখলের পরপরই শহরটিকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে সব রকম নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ করে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তখন ইহুদি উপাসনালয় আবিষ্কার করতে সেখানে প্রত্নস্থল খনন এবং এ কাজ করতে গিয়ে ফিলিস্তিনি অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করে, যার মধ্যে ছিল চতুর্দশ শতাব্দীর ফখরিয়া হাসপাতাল ও আল তানজিকিয়া স্কুল। ১৯৮০ সালে ইসরায়েল অফিসিয়ালি শহরটিকে দখল করে নেয়, যদিও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনে একে বেআইনি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মুসলমানদের পবিত্র স্থাপনাগুলোর নিচে ও আশপাশে তারা খননকার্য চালাতে থাকে এ আশায়– সেখানে ইহুদিদের প্রথম উপাসনালয় পাওয়া যাবে, যা আসলে পাওয়া যায়নি। এর পর শুরু হয় জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি উচ্ছেদ কার্যক্রম। দখলকৃত এলাকায় তারা সময়ে সময়ে কারফিউ জারি করে এবং গণহারে মানুষকে শাস্তি দেয়। ইসরায়েলিরা এমনকি পশ্চিম তীরের নাম বদলে বাইবেলের কল্পিত নাম অনুসারে ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ রাখে, এভাবে শহর ও সড়কের নাম পাল্টে দেয়।
এ পথ ধরেই চলমান জেনোসাইড ঘটানো হচ্ছে ফিলিস্তিনে। ইসরায়েলের পশ্চিমা সমর্থক ও তহবিলদাতারা এগুলোকে হয় প্রশংসা করেছে, না হয় এদের ব্যাপারে উদাসীন থেকেছে।
এভাবে ইসরায়েল যতই তার শিকারদের ওপর নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে ততই যেন পশ্চিমা সমর্থন তার প্রতি বাড়ছে। আশ্চর্যের কিছু নেই– ইসরায়েলের সর্বশেষ ইরান হামলার পরই শুধু নয়; গাজায় গণহত্যামূলক অভিযান, পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানোর সময়েও তার পশ্চিমা মিত্ররা সমর্থনের এই ধারা অব্যাহত রেখেছে। তাদের দৃষ্টিতে ইসরায়েল শুধু আত্মরক্ষাই করছে না, বরং পশ্চিমাদের প্রক্সি হিসেবেও কাজ করছে। ইসরায়েলের এই চলমান ধ্বংসযজ্ঞ আবারও স্পষ্টভাবে দেখায়– পশ্চিমারা কীভাবে ‘শিকার’ হিসেবে ভান করে; অ-পশ্চিমা শিকারদের ওপর সর্বোচ্চ বর্বরতা চালায় এবং তার পক্ষে সম্মতি আদায় করে।
জোসেফ মাসাদ: অধ্যাপক, মডার্ন আরব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টেলেকচুয়াল হিস্টোরি, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক