আল্লাহর নবী (সা.) অমুসলিমদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতেন, সে-সম্পর্কে জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদিন আমাদের পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাচ্ছিল। দেখে রাসুল (সা.) দাঁড়িয়ে গেলেন। তার দেখাদেখি আমরাও দাঁড়ালাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আল্লাহর রাসুল, এটা তো এক ইহুদির লাশ। রাসুল (সা.) বললেন, ‘যখন কোনো লাশ নিতে দেখবে, তখন দাঁড়াবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩১১)

ইসলাম অমুসলিমের সঙ্গে সুন্দর, সদয় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে নির্দেশ দেয়। কোরআনে আছে, ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৮)

মদিনা সনদের একটি ধারা ছিল—প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং মদিনা রাষ্ট্রকে হেফাজত করবার জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করবে। মুসলমানদের ওপর বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে মুসলমানদের পক্ষ হয়ে ইহুদিরা লড়বে, ইহুদিদের ওপর আক্রমণ হলে মুসলমানরা মদিনা রাষ্ট্রকে হেফাজত করবার জন্য ইহুদিদের পক্ষ হয়ে বহিঃশত্রূ মোকাবিলা করবে।

আরও পড়ুনআত্মহত্যা অনুচিত ও মহাপাপ২২ জানুয়ারি ২০২৫

এ রকম আরও অনেক চুক্তি ছিল, যা থেকে বোঝা যায়, যে ভূখণ্ডে বিভিন্ন ধর্ম-গোত্রের মানুষ একত্রে বসবাস করে, সেখানে নিরাপত্তার ক্ষেতে একে অন্যের সহযোগী হবে।

ইসলামের বিধান হলো, ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ে সাধারণ অবস্থায় তো বটেই, যুদ্ধাবস্থায়ও হামলা করা যাবে না। কোনো উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেওয়া যাবে না। রাসুল (সা.

) কোনো জনপদে সৈন্য দল পাঠানোর সময় বলতেন, ‘আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিচ্ছি: (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, কারও চেহারা বিকৃত করবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো গাছ উৎপাটন করবে না।’ (মুসান্নাফ আবদির রাজ্জাক, হাদিস: ৯৪৩০)

অমুসলিমের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে এবং তার থেকে বৈধ, হালাল খাবারও গ্রহণ করতে বাধা নেই। রাসুল (সা.) নিজে অমুসলিমদের ঘরে খাবার খেয়েছেন এবং তিনি নিজেও তাদের খাইয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর ঘটনা। একদিন তার ঘরে একটি বকরি জবাই করা হলো। খাবার রান্না হলে তিনি তার দাসকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে কি খাবার দিয়েছ?’ এরপর তিনি বললেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিবেশীর বিষয়ে জিবরাইল (আ.) আমাকে এত উপদেশ দিচ্ছিলেন, আমি মনে করছিলাম, তিনি হয়তো তাদের ওয়ারিশই বানিয়ে দেবেন।’ (তিরমিজি হাদিস: ১,৯৪৩)

আরও পড়ুনআল্লাহর রহমত হিসেবে বৃষ্টি আসে ০৩ জানুয়ারি ২০২৫

রাসুল (সা.) ভিন্ন ধর্মের মানুষকে প্রাপ্য সম্মান দিতেন। একজন অবিশ্বাসী নেতাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে এনে মসজিদে নববীর খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হলো। রাসুল (সা.) এসে দেখেন, তার হাত শক্ত করে বাঁধা, এতে তার কষ্ট হচ্ছে। তিনি বললেন, তার বাঁধন হালকা করে দাও। সাহাবিরা তা-ই করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,২৯১)

অমুসলিমদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা নিষেধ। যেসব অমুসলিম মুসলিম দেশে জিম্মি হিসেবে (মুসলিম রাষ্ট্রের আইন মেনে) বসবাস করে, তাদের তাদের আঘাত করা অন্যায়। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করল, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না, অথচ তার সুগন্ধি ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (বুখারি হাদিস: ৩,১৬৬)

আরও পড়ুনঋণ থেকে মুক্তির জন্য যে আমল করবেন২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ

একজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ করেছেন একদল ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মুরাদনগর উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী জনতা’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে মুরাদনগর থেকে আসা সনাতন ধর্মের কয়েকজন কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভযোগ করা হয়। তা ছাড়া পুলিশকে ব্যবহার করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলে এই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এলাকার সাবেক একজন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ‘সর্ব ধর্ম মিশন’র প্রচারক পরিচয় দিয়ে দুলাল দেবনাথ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ইউসুফ আবদুল্লাহর (আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন) নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা আওয়ামী লীগের দোসরেরা আজ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ও ভাইয়ের নেতৃত্বে মুরাদনগরে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং কায়কোবাদ (বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ) সাহেবের সুনামকে নষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে আমরা তার (উপদেষ্টার) পদত্যাগ চাই।’

অভিযোগ করে দুলাল দেবনাথ আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ ভুঁইয়ার বাবা আজকে আমার বাড়িতে দুজন হিন্দু কমিউনিটির লোক পাঠিয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি যেন এই প্রোগ্রামে না আসতে পারি। এ ছাড়া আমরা মুরাদনগর থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজায় গাড়ির কাগজপত্র চেকের (যাচাই বাছাই) নামে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সহসভাপতি দীন দয়াল পাল। তিনি বলেন, মুরাদনগর উপজেলায় যানজট নিরসনে সাবেক পাঁচবারের এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেন। তবে পুলিশকে ব্যবহার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা, চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মারধর করায়। পরে এই স্বেচ্ছাসেবকদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং সেদিন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে রাতভর সালিসও চলে। অথচ রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সালিসে বসে বিষয়টি সমাধান করতে আসা বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দেয় এবং পবিত্র ঈদ ও রমজানজুড়ে পুরো মুরাদনগরে পুলিশ ও ডিবি আতঙ্ক বিরাজ করে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুরাদ নগর ইউনিয়ন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন রায়, কামাল্লা দেবপরি মন্দির কমপ্লেক্সের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার সাহা, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, দয়ানন্দ ঠাকুর।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এর আগেও একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে, কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাকে সামনে রেখে এটি করা হচ্ছে, যারা সাবেক এমপি কায়কোবাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেককে এসি বাসে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থ দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কায়কোবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘বরং কায়কোবাদ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক এমপি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু উত্তোলন, মাটি উত্তোলনের অবৈধ কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করছেন এবং সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একটা ভিডিওতে দেখেছি, যারা এক সময় কায়কোবাদের ফাঁসি চেয়ে মিছিল করেছিল, তারা এখন কায়কোবাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেন। যদি আপনি মুরাদনগরের সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন কী অবস্থা এলাকার? তাহলে তারা চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের যে অত্যাচার, সে কথা আপনাদের বলবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অফিসে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটা করার অভিযোগ
  • মাওলানা রঈস উদ্দিন হত্যার বিচার দাবি ১০৪ নাগরিকের
  • গোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
  • শারীরিক শাস্তি শিশুর বিকাশে বড় বাধা, বিলোপ জরুরি
  • সন্তানের বন্ধু হতে চাইলে
  • উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ
  • সবুজ এলাকায় পুলিশের প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কম হয়
  • গোবিপ্রবিতে কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলাবিষয়ক কর্মশালা শুরু
  • মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা সম্পৃক্ত করা দরকার: শিক্ষা উপদেষ্টা
  • মেয়েদের সবকিছুতেই জ্বালা: রাতাশ্রী