পৃথিবীতে খারাপ মানুষ আছে—এটা বুঝতে পেরে অকালে ঝরেছে যে আর্জেন্টাইন প্রতিভা
Published: 4th, April 2025 GMT
‘সব সময়ের জন্য তোমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ছিল এটা বুঝতে না পারা যে পৃথিবীতে খারাপ মানুষও আছে।’
বড় ভাই মিরকো সারিচের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে লেখা আবেগমথিত চিঠিতে এ কথা লিখেছেন মার্টিন সারিচ। মার্টিন বোঝাতে চেয়েছেন, মিরকো এতটাই সৎ ও ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ যে কখনো বিশ্বাসই করতে পারতেন না, কেউ খারাপ হতে পারে বা কারও মন্দ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সরলতা ও বিশ্বাসই ছিল তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
দুই ভাই–ই ছিলেন ফুটবলার। দুজনই মিডফিল্ডার। বয়সে এক বছরের বড় ভাইয়ের সঙ্গে আর্জেন্টিনার ক্লাব সান লরেঞ্জোর বয়সভিত্তিক দলে মার্টিনের বেড়ে ওঠা। কিন্তু ভাইয়ের মতো নাম কামাতে পারেননি। আর্জেন্টাইন ফুটবলে এখনো তাঁর ভাইকে স্মরণ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন অনেকেই।
সেই সময়ে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিময় তরুণ ফুটবলারদের একজন হয়ে উঠেছিলেন মার্টিনের ভাই মিরকো। আর্জেন্টিনা তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল। এই ছেলে দেশের খ্যাতি বয়ে আনবে, ইউরোপে নাম কামাবে—এমন সব আলোচনা হতো তাঁকে ঘিরে।
কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করতে কিছু সময় তো লাগবে। দুর্ভাগ্য, মিরকো সারিচ নিজেকে সেই সময়টুকু দেননি। তাঁর ভাই মার্টিনের লেখা চিঠির সেই বাক্য ধরেই বলা হয়, পৃথিবীতে খারাপ মানুষও আছে—মিরকো এটা বুঝতে পারার পরই আত্মহত্যা করে বসেন মাত্র ২১ বছর বয়সে!
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে ক্রোয়াট মা–বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া মিরকো দেখতে সুদর্শন ছিলেন। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ক্লারিনের ভাষায়, অসাধারণ ফুটবলার তো ছিলেনই, পাশাপাশি তাঁকে দেখে মনে হতো, এইমাত্রই কোনো বড় ব্র্যান্ডের মডেল হিসেবে মঞ্চে ক্যাটওয়াক শেষ করে এলেন।
দুই ভাই মিরকো সারিচ (ডানে) ও মার্টিন সারিচ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন
তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের।
দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত।
আরো পড়ুন:
রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন
টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়
প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।
তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।
গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে।
সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে।
২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে
ঢাকা/লিপি