উন্মুক্ত পার্ক যেন বিসিসির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান
Published: 5th, April 2025 GMT
বরিশাল নগরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বেলস পার্ক মাঠের পূর্ব অংশে গড়ে উঠেছে মুখরোচক খাবারের ১৩০টি অস্থায়ী দোকান। সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) অনুমোদনহীন এসব দোকান অবৈধ। তবে দোকানগুলো থেকে বৈধভাবে চাঁদা নেওয়া শুরু করেছে বিসিসি। ‘সেবা ফি’ নামে প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা রসিদ দিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, ৯ বছর আগে স্থাপিত বেলস পার্ক লাগোয়া ‘গ্রিন সিটি পার্ক’ শিশুদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। গত ৩১ মার্চ থেকে এ পার্কে প্রবেশে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বিসিসির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনারের সিদ্ধান্তে অবৈধ দোকান থেকে টাকা তোলা হচ্ছে এবং শিশু পার্কে প্রবেশে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা।
বেলস পার্ক মাঠটি নগরের সবচেয়ে বড় উদ্যান। আগে এ মাঠে রাজনৈতিক দলের বড় সমাবেশ, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা হতো। গত এক দশকে এটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুর সমাগম ঘটে। সাপ্তাহিক ছুটি ও জাতীয় উৎসবের দিনগুলোতে উদ্যান উপচে আশপাশের সড়কও লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মাঠের পূর্ব পাশে ফুটপাতে মুখরোচক বিভিন্ন খাবারে দোকান বসেছে।
বেলস পার্ক মাঠে ফুচকা বিক্রি করে সাত সদস্যের সংসার চালান সুবর্ণা-জুয়েল দম্পতি। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এতে তাদের লাভ থাকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। গত বুধবার থেকে বিসিসির কর্মীরা প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন।
ফুচকা বিক্রেতা মাসুম হাওলাদার, কামাল, শরবত বিক্রেতা মিম ও কামরুল জানান, রমজান মাস শুরুর আগে বিসিসি প্রশাসক বেলস পার্ক মাঠে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেন। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মাঠ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রতিদিন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা করে নেওয়া হবে। গত বুধবার থেকে বিসিসির কর্মীরা শরবতের দোকান থেকে ৩০ টাকা এবং খাবারের দোকান থেকে ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন।
বিসিসির অর্থায়নে বেলস পার্ক মাঠের উত্তর পাশে নির্মিত শিশু পার্কটি উদ্বোধন হয় ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি। তখন মেয়র ছিলেন আহসান হাবিব কামাল (প্রয়াত)। এর পর আরও দু’জন মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও কেউ শিশু পার্কটিতে প্রবেশ ফি রাখেননি। পার্কে দোলনা ও বসার বেঞ্চ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো রাইড নেই। গেল ঈদুল ফিতর থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা করে প্রবেশ ফি নেওয়া হচ্ছে। বিসিসির কর্মীরা প্রধান ফটকে টিকিট বিক্রি করছেন এবং নিরাপত্তাকর্মীরা টিকিট দেখে শিশুদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। প্রধান ফটকে লাগানো কাগজে লেখা রয়েছে– ‘প্রবেশমূল্য ১০/-, আদেশক্রমে– প্রশাসক বরিশাল সিটি করপোরেশন’। যে টিকিট দেওয়া হচ্ছে, তা বাস টার্মিনালে গাড়ি পার্ক ফি আদায়ে ব্যবহার হয়।
বরিশাল বেতারের ঘোষক নান্নু মোল্লা বলেন, ঈদুল ফিতরের পরদিন পরিবারের পাঁচ শিশুকে নিয়ে প্রথমে বেলস পার্ক মাঠ ও পরে শিশু পার্কে যাই। শিশু পার্কে ঢুকতে আমাকে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়েছে। ৯-১০ বছর ধরে উন্মুক্ত পার্কটিতে প্রবেশ ফি ধার্য করা শিশু অধিকার খর্ব করার শামিল।
বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, শিশুবান্ধব নগরী গড়ার লক্ষ্যে ইউনিসেফের অর্থায়নে প্রায় ১০ বছর আগে শিশু পার্কটি স্থাপন করা হয়। সিটি করপোরেশন সেটিকে দেখভাল করবে। এখন সেটাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি শিশুবান্ধববিরোধী কাজ। তাছাড়া বেলস পার্ক মাঠে ভাসমান দোকানগুলো অবৈধ। মানবিক কারণে ব্যবসা করতে দেওয়া হলেও দোকানিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিসিসি কর্তৃপক্ষ হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী সমকালকে বলেন, ‘সেবা ফি হিসেবে শিশু পার্কে প্রবেশে টিকিট ও ভাসমান দোকানিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসি। আদায় করা টাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা প্রহরীদের জন্য ব্যয় করা হবে।’
এদিকে গতকাল রাত ৮টার দিকে বেলস পার্ক মাঠে গিয়ে শিশু পার্কের প্রধান ফটক উন্মুক্ত করে দেয় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তারা প্রবেশ টিকিট ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনার পর বিসিসি প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার ঘটনাস্থলে যান। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পার্ক ও মাঠের আগাছা পরিষ্কার করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। এর ব্যয় মেটাতে প্রবেশমূল্য ধার্য করেছি।’ ছাত্র-জনতা উন্মুক্ত করার পর আবারও প্রবেশমূল্য নেওয়া হবে কিনা, তা স্পষ্ট না করে তিনি বলেন, প্রবেশ ফির টাকা বিসিসির তহবিলে জমা হবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব লস প র ক ম ঠ প রব শ ফ কর ম র ৫০ ট ক বর শ ল ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।
আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।
তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল