বরিশাল নগরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বেলস পার্ক মাঠের পূর্ব অংশে গড়ে উঠেছে মুখরোচক খাবারের ১৩০টি অস্থায়ী দোকান। সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) অনুমোদনহীন এসব দোকান অবৈধ। তবে দোকানগুলো থেকে বৈধভাবে চাঁদা নেওয়া শুরু করেছে বিসিসি। ‘সেবা ফি’ নামে প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা রসিদ দিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, ৯ বছর আগে স্থাপিত বেলস পার্ক লাগোয়া ‘গ্রিন সিটি পার্ক’ শিশুদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। গত ৩১ মার্চ থেকে এ পার্কে প্রবেশে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বিসিসির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনারের সিদ্ধান্তে অবৈধ দোকান থেকে টাকা তোলা হচ্ছে এবং শিশু পার্কে প্রবেশে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা।

বেলস পার্ক মাঠটি নগরের সবচেয়ে বড় উদ্যান। আগে এ মাঠে রাজনৈতিক দলের বড় সমাবেশ, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা হতো। গত এক দশকে এটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুর সমাগম ঘটে। সাপ্তাহিক ছুটি ও জাতীয় উৎসবের দিনগুলোতে উদ্যান উপচে আশপাশের সড়কও লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মাঠের পূর্ব পাশে ফুটপাতে মুখরোচক বিভিন্ন খাবারে দোকান বসেছে। 

বেলস পার্ক মাঠে ফুচকা বিক্রি করে সাত সদস্যের সংসার চালান সুবর্ণা-জুয়েল দম্পতি। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এতে তাদের লাভ থাকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। গত বুধবার থেকে বিসিসির কর্মীরা প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন।

ফুচকা বিক্রেতা মাসুম হাওলাদার, কামাল, শরবত বিক্রেতা মিম ও কামরুল জানান, রমজান মাস শুরুর আগে বিসিসি প্রশাসক বেলস পার্ক মাঠে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেন। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মাঠ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রতিদিন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা করে নেওয়া হবে। গত বুধবার থেকে বিসিসির কর্মীরা শরবতের দোকান থেকে ৩০ টাকা এবং খাবারের দোকান থেকে ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন।

বিসিসির অর্থায়নে বেলস পার্ক মাঠের উত্তর পাশে নির্মিত শিশু পার্কটি উদ্বোধন হয় ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি। তখন মেয়র ছিলেন আহসান হাবিব কামাল (প্রয়াত)। এর পর আরও দু’জন মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও কেউ শিশু পার্কটিতে প্রবেশ ফি রাখেননি। পার্কে দোলনা ও বসার বেঞ্চ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো রাইড নেই। গেল ঈদুল ফিতর থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা করে প্রবেশ ফি নেওয়া হচ্ছে। বিসিসির কর্মীরা প্রধান ফটকে টিকিট বিক্রি করছেন এবং নিরাপত্তাকর্মীরা টিকিট দেখে শিশুদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। প্রধান ফটকে লাগানো কাগজে লেখা রয়েছে– ‘প্রবেশমূল্য ১০/-, আদেশক্রমে– প্রশাসক বরিশাল সিটি করপোরেশন’। যে টিকিট দেওয়া হচ্ছে, তা বাস টার্মিনালে গাড়ি পার্ক ফি আদায়ে ব্যবহার হয়।

বরিশাল বেতারের ঘোষক নান্নু মোল্লা বলেন, ঈদুল ফিতরের পরদিন পরিবারের পাঁচ শিশুকে নিয়ে প্রথমে বেলস পার্ক মাঠ ও পরে শিশু পার্কে যাই। শিশু পার্কে ঢুকতে আমাকে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়েছে। ৯-১০ বছর ধরে উন্মুক্ত পার্কটিতে প্রবেশ ফি ধার্য করা শিশু অধিকার খর্ব করার শামিল।

বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, শিশুবান্ধব নগরী গড়ার লক্ষ্যে ইউনিসেফের অর্থায়নে প্রায় ১০ বছর আগে শিশু পার্কটি স্থাপন করা হয়। সিটি করপোরেশন সেটিকে দেখভাল করবে। এখন সেটাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি শিশুবান্ধববিরোধী কাজ। তাছাড়া বেলস পার্ক মাঠে ভাসমান দোকানগুলো অবৈধ। মানবিক কারণে ব্যবসা করতে দেওয়া হলেও দোকানিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিসিসি কর্তৃপক্ষ হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী সমকালকে বলেন, ‘সেবা ফি হিসেবে শিশু পার্কে প্রবেশে টিকিট ও ভাসমান দোকানিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসি। আদায় করা টাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা প্রহরীদের জন্য ব্যয় করা হবে।’

এদিকে গতকাল রাত ৮টার দিকে বেলস পার্ক মাঠে গিয়ে শিশু পার্কের প্রধান ফটক উন্মুক্ত করে দেয় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তারা প্রবেশ টিকিট ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনার পর বিসিসি প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার ঘটনাস্থলে যান। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পার্ক ও মাঠের আগাছা পরিষ্কার করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। এর ব্যয় মেটাতে প্রবেশমূল্য ধার্য করেছি।’ ছাত্র-জনতা উন্মুক্ত করার পর আবারও প্রবেশমূল্য নেওয়া হবে কিনা, তা স্পষ্ট না করে তিনি বলেন, প্রবেশ ফির টাকা বিসিসির তহবিলে জমা হবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল ব লস প র ক ম ঠ প রব শ ফ কর ম র ৫০ ট ক বর শ ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

অতিরিক্ত গরমে পেট ঠান্ডা রাখবেন যেভাবে

শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না

গরমে পেটের পীড়া তৈরির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে পানিশূন্যতা। গ্রীষ্মকালে প্রয়োজনের তুলনায় যেমন বেশি পানি খাওয়া হয়, তেমনি তা দ্রুত ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়েও যায়। যে কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি খাওয়া প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পানির অভাবে খাবারও ঠিকঠাক হজম হয় না। তৈরি হতে পারে কোষ্টকাঠিন্য ও অ্যাসিডিটি।

অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার ও পানীয় খাবেন না

গরমে ঠান্ডা পানি ও খাবারের লোভ সামলানো দায়। বাইরে থেকে এসে আইসক্রিম, ঠান্ডা পানি কিংবা জুস দেখলেই অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এমন সময় ঠান্ডা খাবার ও পানীয় হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আরও পড়ুনঠান্ডা-কাশি হলে কি টুথব্রাশ বদলানো জরুরি১০ এপ্রিল ২০২৫বাইরের খাবার বাদ দিন

গরমকালে রাস্তার পাশে দেখা যায় শরবত, জুস কিংবা কুলফি মালাইয়ের দোকান। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো এ ধরনের পানীয় বা খাবার থেকে তৈরি হতে পারে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রকম পেটের পীড়া।

খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম করবেন না

গ্রীষ্মকালে খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম পেট একেবারেই নিতে পারে না। বিশেষ করে কিছুক্ষণ পরপর পানি খাওয়ার ফলে পেট সারা দিন ভরা ভরা লাগে। ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় খাবারের অনিয়মে। এই অনিয়ম থেকে হতে পারে পেটের পীড়া।

সূর্যের তীব্রতা থেকে নিজেকে আড়াল রাখুন

সারা বছর যাঁরা ছোটখাটো পেটের পীড়ায় ভোগেন, গ্রীষ্মকালে তাঁদের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। কারণ, গ্রীষ্মকালে সূর্যের তীব্র আলো শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। সেই প্রদাহ থেকে পেটে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

আরও পড়ুনগরমে যেসব রঙের পোশাক পরলে আরাম পাবেন২২ এপ্রিল ২০২৫গরমেও সুস্থ থাকার উপায়

পর্যাপ্ত পানি খান: গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। এই পানির অভাব পূরণ করতে প্রতিদিন তেষ্টা বুঝে পানি খান। পানির পরিবর্তে ডাবের পানি, ঘরে তৈরি জুস, লেবুর শরবত খেতে পারেন। তবে কৃত্রিম মিষ্টি থেকে দূরে থাকাই ভালো।

মৌসুমি ফল খান: আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু থেকে শুরু করে তরমুজ, বেল, বাঙি—বাহারি ফলের মৌসুম গ্রীষ্মকাল। এসব ফল পেট শান্ত রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ফলের রস পানিশূন্যতা দূর করতেও সহায়ক।

বাসার খাবার খান: গরমে বাইরের খাবার শরীরে বেশ বাজে প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত ঝাল, তেল, মসলা শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গ্রীষ্মকালে চেষ্টা করুন ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার। এতে পেটের ওপর চাপ কম পড়বে।

ঠান্ডা খেতে চাইলে: ঘরের বাইরে থেকে এসেই ঠান্ডা কিছু খাওয়া কখনোই ভালো নয়। খাইতে চাইলে কিছুটা সময় নিন। তবে ঠান্ডা খাবার বলতে কেবল আইসক্রিম কিংবা ঠান্ডা পানীয়ই নয়, বেছে নিতে পারেন দই, ঘরে তৈরি লাচ্ছি অথবা মালাই।

খাবারে অনিয়ম করবেন না: গ্রীষ্মকালে যতই পেট ভরা লাগুক না কেন, সময়মতো তিন বেলা খাবার খেতে ভুলবেন না। সময়মতো খাবার খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায় সহজে।

সূত্র: জেম হসপিটাল ও কাইজেন গ্যাস্ট্রো কেয়ার

আরও পড়ুনগরমে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়া কি ঠিক০৬ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে উপকারী ছাতুর নানা পানীয়
  • অতিরিক্ত গরমে পেট ঠান্ডা রাখবেন যেভাবে