প্রাণ বাঁচাতে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আমিনুল
Published: 5th, April 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারায় চায়ের দোকানে ঢুকে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর দৌড়ে এক বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম (২২)। খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধারে চেষ্টা চালায় পুলিশ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে নিহত হন তিনি।
গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের রনশিবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এর আগে বিকেলে মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাককে (৩৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন আমিনুল।
আরও পড়ুনচায়ের দোকানে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত, অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা, ৬ পুলিশ আহত২০ ঘণ্টা আগেনিহত আবদুর রাজ্জাক ও আমিনুল ইসলামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গোয়ালবাড়ি গ্রামে। তাঁদের বাড়ি আত্রাই উপজেলায় হলেও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে পাশের বাগমারার রনশিবাড়িতে। গোয়ালবাড়ি ও রনশিবাড়ি পাশাপাশি গ্রাম।
আজ শনিবার সকালে রনশিবাড়ি ও গোয়ালবাড়ি গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। গোয়ালবাড়ি এলাকার লোকজন বলেন, আমিনুল এলাকায় মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মাদকের টাকার জন্য বিভিন্ন মানুষের কাছে টাকা দাবি করতেন, না দিলে গালাগাল ও হুমকি দিতেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল ছিল রনশিবাড়ি হাটবার। সেখানে মাছ বিক্রি করতে গিয়েছিলেন রাজ্জাক। বিকেলে তাঁর কাছে টাকা চেয়েছিলেন আমিনুল। দেড় শ টাকা দিয়েছিলেনও। তবে আরও টাকা চাইছিলেন আমিনুল। আর না দিতে পারায় পাশের কামারের দোকান থেকে ছুরি নিয়ে রাজ্জাকের পেটে ঢুকিয়ে দেন আমিনুল।
রনশিবড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, এরপর তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আমিনুল। রাত আটটা পর্যন্ত তাঁকে রক্ষা করতে পারলেও পরে জনতার ক্ষোভের কারণে আর সম্ভব হয়নি। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আমিনুলকে ছিনিয়ে নেন লোকজন। এরপর অনেকেই ভিডিও করে তাঁর স্বীকারোক্তি নেন।
এসব ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ জনতা আমিনুলকে ধরে জানতে চাইছেন, কেন তিনি আবদুর রাজ্জাককে হত্যা করেছেন। জবাবে আমিনুল বলেন, তাঁকে জুমার নামাজ পড়তে দেননি রাজ্জাক। এ সময় জনতা আমিনুলকে শাসাতে থাকেন। আর কাঁদতে শুরু করেন আমিনুল। আরেকটি ভিডিওতে ইট দিয়ে আমিনুলের থেঁতলানো মাথা দেখা যায়। একপর্যায়ে আমিনুলের মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন বিক্ষুব্ধ লোকজন।
আমিনুলকে হত্যার অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে বলে জানান বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় এক উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শকসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ল ন আম ন ল আবদ র র ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।