Samakal:
2025-06-16@06:20:09 GMT

আমরা এখনও এশিয়ায় শীর্ষে

Published: 5th, April 2025 GMT

আমরা এখনও এশিয়ায় শীর্ষে

কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে যৌতুকও দিতে হয় কম। তাই অভিভাবকরা মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিতে উৎসাহিত হন। বগুড়া ও জামালপুর অঞ্চলে পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, যেখানে ১৬ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দিলে গড়ে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিতে হচ্ছে, সেখানে মেয়ের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর হলে যৌতুকের টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার এবং মেয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর হলে মা-বাবাকে দিতে হচ্ছে গড়ে এক লাখ টাকা। : পপুলেশন কাউন্সিলের অ্যাকসেলারেটিং অ্যাকশন টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারিজ ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের জরিপের ফল

চিত্র এক: নোয়াখালী জেলার কবিরহাট সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছে শাহীনুর বেগম। বয়স ১৭। লেখাপড়া শেষ করে কী করবে– জিজ্ঞেস করলে শাহীনুর জানায়, ‘সংসার করব হয়তো। মা-বাবা ছেলে দেখছে বিয়ের জন্য। আমার বেশির ভাগ বান্ধবীই স্কুলে থাকতে বিয়ে হয়ে গেছে। আমাকে কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। কারণ আমার এখনও বিয়ে হয়নি। বিয়ে হলে হয়তো লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যাবে।’
চিত্র দুই: নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ দলিত কলোনির ঋষি সম্প্রদায়ের মেয়েদের ১২ থেকে ১৩ বছরের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায়। কারণ মেয়েরা বেশির ভাগ স্কুলে যায় না। ছেলেরা তাদের প্রথাগত কাজ শুরু করে অল্প বয়সে। তারা খুব তাড়াতাড়ি বিয়েও করে। এ ছাড়া কলোনির মধ্যে সবার কাছাকাছি থাকা ও কমন ওয়াশরুম ব্যবহার, উৎসব অনুষ্ঠান সব একসঙ্গে হয়। ফলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যোগাযোগ বেশি হয়। ফলে কম বয়সে নিজেরাই বিয়ে করে অথবা পালিয়ে বিয়ে করে।
চিত্র তিন: কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী ও মিঠামইন উপজেলার বেশির ভাগ স্কুলের ছাত্রীর দশম শ্রেণিতে ওঠার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। দেখা যায়, ঈদ বা বড় কোনো ছুটির পর ছাত্রী কমে যায় স্কুলে। কারণ বড় ছুটিতে এ বিয়েগুলো হয়। মাদ্রাসার ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা আরও বেশি। 
সমাজে নারীর অবস্থান উন্নতি যে হয়নি, তা নয়। নারীরা এখন সব ধরনের কাজেই অংশ নিচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র নারীরা এখনও পিতৃতন্ত্রের ফাঁদ থেকে বের হতে পারেননি। জন্ম, বিয়ে, বহু সন্তানের মা হওয়া, অল্প বয়সে রোগে, রক্তস্বল্পতায় ভোগে মৃত্যু– এটিই মোটামুটি তাদের নিয়তি। পাশাপাশি বেড়েছে জনপরিসরে নারীর চলাচলের অনিরাপত্তা। নারী শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ে বন্ধ না হওয়ার একটা বড় কারণ কন্যাশিশুর নিরাপত্তাহীনতা। নারীর ওপর ধর্ষণ, অপহরণ বা অপবাদসহ অন্যান্য শারীরিক নির্যাতন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে বের হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এসব পরিস্থিতি মেয়েশিশুর বাল্যবিয়ের হার আশঙ্কাজনক বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয় এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে। গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ইউনিসেফ, ইউএনউইমেন এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের একটি যৌথ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘গার্লস গোলস: হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস? অ্যাডলসেন্ট গার্লস রাইটস ওভার থার্টি ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীর মধ্যে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর হওয়ার আগে।
দেশের হাওর ও চরাঞ্চলের মতো অনগ্রসর এলাকায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি। বাল্যবিয়ে নিরোধে সরকারের করা জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি ধীর। সম্প্রতি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের (সিএসডাব্লিউ-৬৯) উনিশতম অধিবেশনে বাংলাদেশের দলিত নারীর প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন চা বাগানের দলিত নেত্রী তামান্না সিং বাড়াইক। তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ বেইজিং ঘোষণা’য় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নারীর সার্বিক উন্নয়নে যেসব অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি কোনো দেশ। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের কিশোরী মেয়েদের বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করে শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়েই নয়, দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক সুফল লাভ করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। কেননা এখানে প্রতিনিয়তই নানা বৈষম্য, সহিংসতা, বাল্যবিয়ে, শিক্ষার সুযোগের ঘাটতি এবং সুযোগ স্বল্পতার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে কিশোরীদের।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ড.

আইনুন নাহার বলেন, ‘বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত হয়ে গেছে, কেবল আইন করে এ থেকে বের হওয়া মুশকিল। কারণ, এটির একদিকে আছে দারিদ্র্য, অন্যদিকে কাঠামোগত বৈষম্য। এলাকাভেদে, শ্রেণিভেদে এই হারের পার্থক্য হয়ে থাকে। যেমন– অপেক্ষাকৃত ধনী, শিক্ষিত পরিবারে বাল্যবিয়ে কম হয়; আবার দরিদ্র ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার বেশি। কারণ সেখানে মেয়েকে পরিবারের বোঝা মনে করা হয়। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার অভাবেও মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়। হাওরাঞ্চলে মেয়েরা বছরের ছয় মাস ঘরে বসে থাকে। তারা গার্মেন্টসে বা বাসাবাড়ির কাজেও ঢাকায় আসে না। ফলে বসিয়ে বসিয়ে মেয়েকে কে খাওয়াবে! মেয়ের বয়স যত বেশি হবে তত বেশি যৌতুক দিতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে ঘাড়ের বোঝা নামান মা-বাবা।’
সাতক্ষীরা, বরিশাল অঞ্চলে ভিন্নচিত্র। এখানে মেয়েশিশুর শিক্ষার হার বেশি হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেয়েদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়, মুখে দাগ পড়ে যায়। ফলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চান মা-বাবা।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) সহযোগী অধ্যাপক সাথী দস্তিদার বলেন, ‘বাল্যবিয়ের কারণে কী যে হয় না সেটি বলা মুশকিল। মা-বাবার দারিদ্র্য বা সামাজিক নিরাপত্তার কারণে অথবা ছেলেমেয়ের নিজের ইচ্ছাতেই হয়তো বাল্যবিয়ে হয়েছে। এর ফল ভয়াবহ। বাল্যবিয়ের ফলে মেয়েটি অল্প বয়সে মা হয়। এটি মা ও সন্তানদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বিকাশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অপরিণত হওয়ার কারণে সন্তান জন্মদানের সময় মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভধারণজনিত নানা সমস্যা যেমন– অবস্টেট্রিক ফিস্টুলার শিকার হতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা নারীর তুলনায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুঝুঁকি থাকে পাঁচগুণ বেশি।’
২০১৭ সালের বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে বলা হয়, পুরুষের ক্ষেত্রে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১ এবং নারীর ক্ষেত্রে ১৮। এর কম বয়সী কারও বিয়ে হলে সেটি হবে বাল্যবিয়ে। কিন্তু এখানে একটি বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’ অর্থাৎ ঘুর পথে আইনেও বাল্যবিয়ের বিধান নথিবদ্ধ করা আছে।
২০১৭ সালের শেষ দিকে পপুলেশন কাউন্সিলের অ্যাকসেলারেটিং অ্যাকশন টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারিজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় করা জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে যৌতুকও দিতে হয় কম। তাই অভিভাবকরা মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিতে উৎসাহিত হন। বগুড়া ও জামালপুর অঞ্চলে পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, যেখানে ১৬ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দিলে গড়ে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিতে হচ্ছে, সেখানে মেয়ের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর হলে যৌতুকের টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার এবং মেয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর হলে মা-বাবাকে দিতে হচ্ছে গড়ে এক লাখ টাকা।
একটি দেশের কন্যাশিশুর নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কার্যত সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্দেশ করে। মেয়ে শিশুদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দেওয়ার পর দেশে মেয়েদের শিক্ষার হার এমনকি উচ্চশিক্ষার হারও বেড়েছে। এ কথা আমরা সবাই জানি, যখন মেয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় থাকে, তখন তাদের বাল্যবিয়ে কম হয়। বাংলাদেশে এখনও অনেক কন্যাশিশু স্কুলে যায় না। এটা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘বাল্যবিয়ের একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে আমাদের সমাজে। তারা রুগ্‌ণ, অসুস্থ শিশুর জন্ম দিচ্ছে। তারা পড়াশোনায় থাকছে না, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে থাকছে না। ফলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার যে অবদান থাকার কথা, তা সে দিতে পারছে না নাগরিক হিসেবে। সে যে শ্রমটা দিচ্ছে পরিবারে তার কোনো মূল্যায়ন থাকছে না। সংসারে তার প্রাপ্য সম্মানটুকুও থাকছে না। ফলে সে পরনির্ভরশীল হয়ে থাকছে। এতে যৌতুক, নারী নির্যাতন বাড়বে। পরবর্তী প্রজন্মে নারীর প্রতি সম্মান করা, সমতাভিত্তিক সমাজের যে চিন্তা আমরা করি, তা ভয়াবহভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।’ 

লেখক: কান্ট্রি ফোকাল পয়েন্ট-বাংলাদেশ
এশিয়া দলিত রাইটস ফোরাম (এডিআরএফ)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম য় র বয়স বছর হল বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বপ্নে হলো দেখা

কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে। 
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়। 
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র‍্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র‍্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের পাল্টা আঘাতে কাঁপল ইসরায়েল
  • জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
  • আলীকদমে ২ পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ‘ট্যুর এক্সপার্টের’ বর্ষা গ্রেপ্তার
  • ইরানে এখনও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল: আইডিএফ
  • স্বপ্নে হলো দেখা