কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে যৌতুকও দিতে হয় কম। তাই অভিভাবকরা মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিতে উৎসাহিত হন। বগুড়া ও জামালপুর অঞ্চলে পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, যেখানে ১৬ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দিলে গড়ে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিতে হচ্ছে, সেখানে মেয়ের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর হলে যৌতুকের টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার এবং মেয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর হলে মা-বাবাকে দিতে হচ্ছে গড়ে এক লাখ টাকা। : পপুলেশন কাউন্সিলের অ্যাকসেলারেটিং অ্যাকশন টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারিজ ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের জরিপের ফল
চিত্র এক: নোয়াখালী জেলার কবিরহাট সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছে শাহীনুর বেগম। বয়স ১৭। লেখাপড়া শেষ করে কী করবে– জিজ্ঞেস করলে শাহীনুর জানায়, ‘সংসার করব হয়তো। মা-বাবা ছেলে দেখছে বিয়ের জন্য। আমার বেশির ভাগ বান্ধবীই স্কুলে থাকতে বিয়ে হয়ে গেছে। আমাকে কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। কারণ আমার এখনও বিয়ে হয়নি। বিয়ে হলে হয়তো লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যাবে।’
চিত্র দুই: নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ দলিত কলোনির ঋষি সম্প্রদায়ের মেয়েদের ১২ থেকে ১৩ বছরের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায়। কারণ মেয়েরা বেশির ভাগ স্কুলে যায় না। ছেলেরা তাদের প্রথাগত কাজ শুরু করে অল্প বয়সে। তারা খুব তাড়াতাড়ি বিয়েও করে। এ ছাড়া কলোনির মধ্যে সবার কাছাকাছি থাকা ও কমন ওয়াশরুম ব্যবহার, উৎসব অনুষ্ঠান সব একসঙ্গে হয়। ফলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যোগাযোগ বেশি হয়। ফলে কম বয়সে নিজেরাই বিয়ে করে অথবা পালিয়ে বিয়ে করে।
চিত্র তিন: কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী ও মিঠামইন উপজেলার বেশির ভাগ স্কুলের ছাত্রীর দশম শ্রেণিতে ওঠার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। দেখা যায়, ঈদ বা বড় কোনো ছুটির পর ছাত্রী কমে যায় স্কুলে। কারণ বড় ছুটিতে এ বিয়েগুলো হয়। মাদ্রাসার ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা আরও বেশি।
সমাজে নারীর অবস্থান উন্নতি যে হয়নি, তা নয়। নারীরা এখন সব ধরনের কাজেই অংশ নিচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র নারীরা এখনও পিতৃতন্ত্রের ফাঁদ থেকে বের হতে পারেননি। জন্ম, বিয়ে, বহু সন্তানের মা হওয়া, অল্প বয়সে রোগে, রক্তস্বল্পতায় ভোগে মৃত্যু– এটিই মোটামুটি তাদের নিয়তি। পাশাপাশি বেড়েছে জনপরিসরে নারীর চলাচলের অনিরাপত্তা। নারী শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ে বন্ধ না হওয়ার একটা বড় কারণ কন্যাশিশুর নিরাপত্তাহীনতা। নারীর ওপর ধর্ষণ, অপহরণ বা অপবাদসহ অন্যান্য শারীরিক নির্যাতন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে বের হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এসব পরিস্থিতি মেয়েশিশুর বাল্যবিয়ের হার আশঙ্কাজনক বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয় এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে। গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ইউনিসেফ, ইউএনউইমেন এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের একটি যৌথ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘গার্লস গোলস: হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস? অ্যাডলসেন্ট গার্লস রাইটস ওভার থার্টি ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীর মধ্যে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর হওয়ার আগে।
দেশের হাওর ও চরাঞ্চলের মতো অনগ্রসর এলাকায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি। বাল্যবিয়ে নিরোধে সরকারের করা জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি ধীর। সম্প্রতি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের (সিএসডাব্লিউ-৬৯) উনিশতম অধিবেশনে বাংলাদেশের দলিত নারীর প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন চা বাগানের দলিত নেত্রী তামান্না সিং বাড়াইক। তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ বেইজিং ঘোষণা’য় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নারীর সার্বিক উন্নয়নে যেসব অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি কোনো দেশ। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের কিশোরী মেয়েদের বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করে শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়েই নয়, দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক সুফল লাভ করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। কেননা এখানে প্রতিনিয়তই নানা বৈষম্য, সহিংসতা, বাল্যবিয়ে, শিক্ষার সুযোগের ঘাটতি এবং সুযোগ স্বল্পতার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে কিশোরীদের।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ড.
সাতক্ষীরা, বরিশাল অঞ্চলে ভিন্নচিত্র। এখানে মেয়েশিশুর শিক্ষার হার বেশি হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেয়েদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়, মুখে দাগ পড়ে যায়। ফলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চান মা-বাবা।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) সহযোগী অধ্যাপক সাথী দস্তিদার বলেন, ‘বাল্যবিয়ের কারণে কী যে হয় না সেটি বলা মুশকিল। মা-বাবার দারিদ্র্য বা সামাজিক নিরাপত্তার কারণে অথবা ছেলেমেয়ের নিজের ইচ্ছাতেই হয়তো বাল্যবিয়ে হয়েছে। এর ফল ভয়াবহ। বাল্যবিয়ের ফলে মেয়েটি অল্প বয়সে মা হয়। এটি মা ও সন্তানদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বিকাশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অপরিণত হওয়ার কারণে সন্তান জন্মদানের সময় মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভধারণজনিত নানা সমস্যা যেমন– অবস্টেট্রিক ফিস্টুলার শিকার হতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা নারীর তুলনায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুঝুঁকি থাকে পাঁচগুণ বেশি।’
২০১৭ সালের বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে বলা হয়, পুরুষের ক্ষেত্রে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১ এবং নারীর ক্ষেত্রে ১৮। এর কম বয়সী কারও বিয়ে হলে সেটি হবে বাল্যবিয়ে। কিন্তু এখানে একটি বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’ অর্থাৎ ঘুর পথে আইনেও বাল্যবিয়ের বিধান নথিবদ্ধ করা আছে।
২০১৭ সালের শেষ দিকে পপুলেশন কাউন্সিলের অ্যাকসেলারেটিং অ্যাকশন টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারিজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় করা জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে যৌতুকও দিতে হয় কম। তাই অভিভাবকরা মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিতে উৎসাহিত হন। বগুড়া ও জামালপুর অঞ্চলে পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, যেখানে ১৬ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দিলে গড়ে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিতে হচ্ছে, সেখানে মেয়ের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর হলে যৌতুকের টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার এবং মেয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর হলে মা-বাবাকে দিতে হচ্ছে গড়ে এক লাখ টাকা।
একটি দেশের কন্যাশিশুর নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কার্যত সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্দেশ করে। মেয়ে শিশুদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দেওয়ার পর দেশে মেয়েদের শিক্ষার হার এমনকি উচ্চশিক্ষার হারও বেড়েছে। এ কথা আমরা সবাই জানি, যখন মেয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় থাকে, তখন তাদের বাল্যবিয়ে কম হয়। বাংলাদেশে এখনও অনেক কন্যাশিশু স্কুলে যায় না। এটা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘বাল্যবিয়ের একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে আমাদের সমাজে। তারা রুগ্ণ, অসুস্থ শিশুর জন্ম দিচ্ছে। তারা পড়াশোনায় থাকছে না, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে থাকছে না। ফলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার যে অবদান থাকার কথা, তা সে দিতে পারছে না নাগরিক হিসেবে। সে যে শ্রমটা দিচ্ছে পরিবারে তার কোনো মূল্যায়ন থাকছে না। সংসারে তার প্রাপ্য সম্মানটুকুও থাকছে না। ফলে সে পরনির্ভরশীল হয়ে থাকছে। এতে যৌতুক, নারী নির্যাতন বাড়বে। পরবর্তী প্রজন্মে নারীর প্রতি সম্মান করা, সমতাভিত্তিক সমাজের যে চিন্তা আমরা করি, তা ভয়াবহভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।’
লেখক: কান্ট্রি ফোকাল পয়েন্ট-বাংলাদেশ
এশিয়া দলিত রাইটস ফোরাম (এডিআরএফ)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম য় র বয়স বছর হল বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।
এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।
বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?
দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।
মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা
এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।
এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ:
নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা
নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।
এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।
মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক
মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।
এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা।
লেখক পরিচিতি:
মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]