পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রত্যাশাকে ‘অর্থহীন’ বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে রোববার এ মন্তব্য করলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এরপর ট্রাম্প গত সপ্তাহে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি তারা চুক্তিতে না আসে, তাহলে বোমাবর্ষণ করা হবে।’

এই পরিস্থিতিতে সমঝোতার বিষয়ে ওয়াশিংটনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আরাগচি। তিনি বলেছেন, ‘যদি আপনারা সমঝোতা চান, তাহলে হুমকি দেওয়ার মানে কী?’

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে চাইছে না বলে দাবি করে আসা তেহরান দৃশ্যত ওয়াশিংটনের আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করেছে। তবে পরোক্ষ কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি বলে অবস্থান ব্যক্ত করেছে তারা, এই অবস্থানই আরাগচির রোববারের বিবৃতিতে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি পক্ষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যারা ক্রমাগত বলপ্রয়োগের হুমকি দিয়ে আসছে, যেটা জাতিসংঘের সনদের পরিপন্থী। তিনি বলেছেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমান অবস্থানে থেকে আলোচনা করতে চায়।

এর আগে ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ বাতিল করেছিলেন, যেটা ইরান ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে পারমাণবিক একটি চুক্তি ছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী পারমাণবিক কর্মসূচিতে লাগাম টেনে নিষেধাজ্ঞার খড়্গ থেকে মুক্তি পেয়েছিল ইরান।

ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের পর ইরান চুক্তি মেনে চলা থেকে সরে আসে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তথ্যমতে, ইরান বহু পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রসদ সংগ্রহ করেছে। আইএইএ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেছে।

এদিকে ট্রাম্পের সরাসরি যুদ্ধের হুমকির জবাবে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের প্রধান হোসেইন সালামি শনিবার বলেন, দেশটি যুদ্ধের জন্য ‘প্রস্তুত’ আছে।

সালামিকে উদ্ধৃত করে ইরানের প্রধান বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, ‘আমরা যুদ্ধ নিয়ে চিন্তিত নই। আমরা যুদ্ধের সূচনাকারী না হলেও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি।’

এদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধ, লেবাননে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ধ্বংসে ইসরায়েলি হামলা এবং ২০২৪ সালে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাশার আল-আসাদের পতন ইরানকে এ অঞ্চলে দুর্বল করে তুলেছে। পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রমের বিষয়ে দেশটি বারবার বলে আসছে এ কার্যক্রম শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্রদেশ ইসরায়েলের কাছে অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট নগরে প‌্যাডেলচা‌লিত রিকশা ভাড়া ন্যূনতম ২০, সর্বোচ্চ ১০০ টাকা

সিলেট নগরে প্যাডেলচালিত রিকশার ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তা‌লিকা প্রকাশ করেছে মহানগর পুলিশ। তালিকা অনুযায়ী ন্যূনতম ভাড়া ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন ভাড়া ২০২৭ সা‌ল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

আজ সোমবার সকালে মহানগর পু‌লিশের ক‌মিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী স্বাক্ষ‌রিত গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিলেট শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে যাতায়াতের জন্য নতুন করে প্রস্তাবিত রিকশা ভাড়ার হার নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাড়ার তালিকা প্রণয়নের সময় নগরের রাজনীতিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, চাকরিজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, প্যাডেল রিকশা সমিতি, সাধারণ জনগণের প্রতি‌নিধিদের মতামত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২০১৫ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ প‌্যাডেলচা‌লিত রিকশা ভাড়ার তালিকা ‌নির্ধারণ করে‌ছিল। তবে ওই ভাড়া তা‌লিকা শুরু থেকে মেনে নেন‌নি রিকশাচালকেরা। এর ১০ বছর পর পু‌লিশের পক্ষ থেকে রিকশা ভাড়া পু‌ন‌র্নির্ধারণ করা হয়েছে।

পুন‌র্নির্ধা‌রিত প্রস্তাবিত ভাড়া তালিকায় দেখা গেছে জিন্দাবাজার মোড় (পয়েন্ট) থেকে লামাবাজার, মিরাবাজার, আম্বরখানা, ভাতালিয়া পর্যন্ত ৩০ টাকা। সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, ঈদগাহ, শেখঘাট পর্যন্ত ৪০ টাকা। শিবগঞ্জ, ওসমানী মেডিকেল পর্যন্ত ৫০ টাকা। বালুচর, টিলাগড়, বাগবাড়ি, চৌকিদেখি, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট পর্যন্ত ৬০ টাকা।

কোর্ট পয়েন্ট থেকে টিলাগড় পর্যন্ত ৬০ টাকা। শিবগঞ্জ, নতুন ব্রিজ ৪০ টাকা। মিরাবাজার ও যতরপুর ৩০ টাকা। উপশহর (এ, বি, সি, ডি, ই, এফ, জি, এইচ, আই, জে, কে ব্লক) ৫০ টাকা। নতুন ব্রিজ হয়ে দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনাল ৭০ টাকা। রেলও‌য়ে স্টেশন, গোপশহর মকন দোকান, গোয়াবাড়ি, আখালিয়া ‌বি‌জি‌বি ক্যাম্প গেট, ভাঙ্গাটিকর, টুলটিকর, মিরাপাড়া পর্যন্ত ৮০ টাকা। ঝেরঝেরিপাড়া, শিবগঞ্জ সোনাপাড়া, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, উত্তর কাজীটুলা, গোয়াইটুলা, আম্বরখানা, মাহিমপুর, দর্শন দেউরী, সুবিদবাজার, ভাতালিয়া, ওসমানী মেডিকেল, কুমারপাড়া (ঝরনারপাড়) ৫০ টাকা। দর্জিবন্দ, শাহী ঈদগাহ, লেচুবাগান, হাউজিং এস্টেট, লন্ডনী রোড ও পাঠানটুলা, বাগবাড়ি, বর্ণমালা পয়েন্ট, এতিম স্কুল, নবাব রোড (শেখঘাট পিচের মুখ, কলাপাড়া ডহর), ঘাসিটুলা বেতেরবাজার, আম্বরখানা, কলবাখানী, মেন্দিবাগ, সাদাটিকর ৫০ টাকা। জল্লারপাড়, তোপখানা ২০ টাকা।

এ ছাড়া কোর্ট পয়েন্ট থেকে নতুন ব্রিজ হয়ে কদমতলী, লাউয়াই, বিসিক শিল্পনগরী, বরইকান্দি, চৌকিদেখি, লাক্কাতুরা, শাপলাবাগ ৭০ টাকা। কাজীটুলা, রাজারগলি, শাহজালাল দরগাহ গেট, মিরের ময়দান, শেখঘাট, রিকাবীবাজার, দাড়িয়াপাড়া, মির্জাজাঙ্গাল, পশ্চিম কাজিরবাজার, ছড়ারপার, কুমারপাড়া পয়েন্ট, মিরাবাজার আগপাড়া, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ৩০ টাকা। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গেট ৯০ টাকা। কুমারগাঁও বাস টার্মিনাল ১০০ টাকা। খোজারখোলা, সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস, বালুচর, বাদাম বাগিচা, মদিনা মার্কেট, কানিশাইল খেয়াঘাট, পীর মহল্লা কুশিঘাট ৬০ টাকা।

আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সুবিদবাজার, শাহী ঈদগাহ, কাজীটুলা ২০ টাকা। মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, চৌকিদেখি ৩০ টাকা। লাক্কাতুরা, মিরাবাজার, নয়াসড়ক ৪০ টাকা। শিবগঞ্জ ৬০ টাকা। টিলাগড়, উপশহর (এবিসি পয়েন্ট), নতুন ব্রিজ ৬০ টাকা।

শিবগঞ্জ পয়েন্ট থেকে টিলাগড়, সেনপাড়া, খরাদিপাড়া ২০ টাকা। নতুন ব্রিজ, বালুচর ৩০ টাকা। ঈদগাহ ৫০ টাকা। আম্বরখানা, লামাবাজার, শেখঘাট ৬০ টাকা। পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, ওসমানী মেডিকেল, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, শেখঘাট, সুবিদবাজার ৭০ টাকা এবং কদমতলী বাস টার্মিনাল ৮০ টাকা।

দক্ষিণ সুরমা কিনব্রিজ থেকে রেলগেট ২০ টাকা। হুমায়ুন রশীদ চত্বর, টেকনিক্যাল, পর্যন্ত লাউয়াই ৩০ টাকা। শিববাড়ি ও গোটাটিকর পর্যন্ত ৪০ টাকা। বরইকান্দি ও আলমপুর পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং মকন দোকান পর্যন্ত ৭০ টাকা।

বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত রুটের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ গজের জন্য অতিরিক্ত ১০ টাকা ভাড়া প্রযোজ্য হবে। তবে নির্ধারিত রুটে উল্লিখিত নয় এমন নিকটবর্তী গন্তব্যে যাত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ