মাদারীপুরে হামলায় আহত ইউপি সদস্য বোরহান মোল্লার (৪০) মৃত্যুর জেরে প্রতিপক্ষের চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। এ সময় দুটি বসতঘরসহ তিনটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মনদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বোরহান মোল্লার মৃত্যু হয়। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার চর ব্রাহ্মনদী এলাকার বাসিন্দা ও ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। আধিপত্য বিস্তারের জেরে গত শনিবার দুপুরে মাদারীপুর শহরের চৌরাস্তা এলাকায় তিনি হামলার শিকার হন। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বোরহান মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশ এ সময় পর্যন্ত কাউকে আটকও করতে পারেনি। সংঘর্ষ এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চর ব্রাহ্মনদী এলাকার শিমুল সরদারের সঙ্গে বোরহানের বিরোধ চলছিল। গত শনিবার দুপুরে শহরের পুরানবাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন বোরহান। চৌরাস্তা এলাকায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান শিমুল সরদার ও তাঁর লোকজন। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে বোরহানকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসক। সেখান থেকে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, বোরহানের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁর অনুসারীরা ব্রাহ্মনদী এলাকায় শিমুলের অনুসারী হেলাল ফকিরের দুটি বসতঘরসহ চারটি বাড়িতে হামলা চালান। লুটপাট ও ভাঙচুরের একপর্যায়ে তিনটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ক্ষতিগ্রস্ত হেলাল ফকির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা কোনো হামলা মারামারির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তবু মেম্বারের লোকজন আমাগো বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দিছে। সবকিছু শ্যাষ আমার। পরিবার নিয়ে থাকার জায়গাটুকু নাই।’

এদিকে গ্রেপ্তার–আতঙ্কে প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ঝাউদি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড। অভিযুক্তরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে প্রধান অভিযুক্ত শিমুলকে একাধিকবার কল দিলেও তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সোহেল সরদার নামের তাঁর এক অনুসারী বলেন, ‘মেম্বার বোরহান কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি নন, তিনি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এলাকায় বহু মানুষের ক্ষতি করেছেন। এলাকায় লোকজন তাই ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর ওপর হামলা করেন। এলাকায় যেহেতু মার্ডার হইছে, তাই আমাগো লোকজন এলাকায় নাই। পরিস্থিতি এখন গরম, শান্ত হলেই এলাকায় সবাই ফিরে আসবে।’

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোকছেদুর রহমান আজ মঙ্গলবার সকালে বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির পরিবার এখনো ঢাকায়। তাই তারা থানায় মামলা করতে আসতে পারেনি। এজাহার দিলেই মামলা গ্রহণ করা হবে। আর যারা প্রকাশ্যে ইউপি সদস্যকে কুপিয়েছে, তাদের একটি সিসিটিভির ফুটেজ আমরা পেয়েছি। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল টপ ট এল ক য় ল কজন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ