মাদারীপুরে হামলায় আহত ইউপি সদস্যের মৃত্যুর জেরে প্রতিপক্ষের বসতঘরে আগুন, লুটপাট
Published: 8th, April 2025 GMT
মাদারীপুরে হামলায় আহত ইউপি সদস্য বোরহান মোল্লার (৪০) মৃত্যুর জেরে প্রতিপক্ষের চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। এ সময় দুটি বসতঘরসহ তিনটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মনদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বোরহান মোল্লার মৃত্যু হয়। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার চর ব্রাহ্মনদী এলাকার বাসিন্দা ও ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। আধিপত্য বিস্তারের জেরে গত শনিবার দুপুরে মাদারীপুর শহরের চৌরাস্তা এলাকায় তিনি হামলার শিকার হন। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বোরহান মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশ এ সময় পর্যন্ত কাউকে আটকও করতে পারেনি। সংঘর্ষ এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চর ব্রাহ্মনদী এলাকার শিমুল সরদারের সঙ্গে বোরহানের বিরোধ চলছিল। গত শনিবার দুপুরে শহরের পুরানবাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন বোরহান। চৌরাস্তা এলাকায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান শিমুল সরদার ও তাঁর লোকজন। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে বোরহানকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসক। সেখান থেকে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, বোরহানের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁর অনুসারীরা ব্রাহ্মনদী এলাকায় শিমুলের অনুসারী হেলাল ফকিরের দুটি বসতঘরসহ চারটি বাড়িতে হামলা চালান। লুটপাট ও ভাঙচুরের একপর্যায়ে তিনটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ক্ষতিগ্রস্ত হেলাল ফকির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা কোনো হামলা মারামারির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তবু মেম্বারের লোকজন আমাগো বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দিছে। সবকিছু শ্যাষ আমার। পরিবার নিয়ে থাকার জায়গাটুকু নাই।’
এদিকে গ্রেপ্তার–আতঙ্কে প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ঝাউদি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড। অভিযুক্তরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে প্রধান অভিযুক্ত শিমুলকে একাধিকবার কল দিলেও তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সোহেল সরদার নামের তাঁর এক অনুসারী বলেন, ‘মেম্বার বোরহান কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি নন, তিনি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এলাকায় বহু মানুষের ক্ষতি করেছেন। এলাকায় লোকজন তাই ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর ওপর হামলা করেন। এলাকায় যেহেতু মার্ডার হইছে, তাই আমাগো লোকজন এলাকায় নাই। পরিস্থিতি এখন গরম, শান্ত হলেই এলাকায় সবাই ফিরে আসবে।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোকছেদুর রহমান আজ মঙ্গলবার সকালে বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির পরিবার এখনো ঢাকায়। তাই তারা থানায় মামলা করতে আসতে পারেনি। এজাহার দিলেই মামলা গ্রহণ করা হবে। আর যারা প্রকাশ্যে ইউপি সদস্যকে কুপিয়েছে, তাদের একটি সিসিটিভির ফুটেজ আমরা পেয়েছি। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল টপ ট এল ক য় ল কজন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চুলার ধোঁয়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা, স্বজনদের হামলায় যুবক নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় চুলার ধোঁয়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ভাই-ভাবি-ভাতিজার হামলায় আহত হয়ে মনির হোসেন (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের উড়শিউড়ার নন্দ দিঘিরপাড় গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত মনির হোসেন উড়শিউড়ার নন্দ দিঘিরপাড় গ্রামের মৃত খুরশিদ মিয়ার ছেলে। মনির পেশার দিনমজুর ছিলেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী এবং সাত ও দেড় বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে।
নিহতের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে মনিরের বড় ভাই বাবুল মিয়ার (৫৫) স্ত্রী জুবায়দা বেগম (৪৫) একটি মাটির চুলা নিয়ে মনিরের বসতঘরের দরজার সামনে রান্না বসান। মাটির চুলার ধোঁয়া বসতঘরে প্রবেশ করলে মনির আপত্তি জানান। এতে বাবুলের স্ত্রী উচ্চস্বরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। মনির প্রতিবাদ করলে বাবুল মিয়ার ছেলে শাওন মিয়া (১৫) এগিয়ে এসে চাচা মনিরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে শাওন দা নিয়ে মনিরকে মারতে এগিয়ে এলে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় বড় ভাই বাবুল, সাচ্চু, সাচ্চুর স্ত্রী হালিমা বেগম (৪৩) ও ছেলে ইমন (২৬) এবং শাওন লাঠি ও কাঠ দিয়ে মনিরকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ইট দিয়ে মনিরের মাথায় আঘাত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন মনিরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে শহরের বেসরকারি সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে মনিরের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সাতটার দিকে ইসিজি পরীক্ষায় কোনো স্পন্দন না পাওয়ায় ওই রোগীকে মৃত ঘোষণা করি।’
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জুলেখা বেগম বলেন, ‘বসতঘরের সামনে মাটির চুলা এনে রান্না শুরু করেন বাবুল ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বকবক করছিলেন। আমার স্বামী পাল্টা কথা বলেন। এতে ভাতিজা শাওন দা নিয়ে স্বামীকে মারতে এগিয়ে আসে। স্বামীর বড় ভাই বাবুল ছেলেরে বলেছে, “ওরে ধর বেশি করে বাইরা।” তখন বাকিরা লাঠি, কাঠ ও ইট দিয়ে মারধর করে। শাওন আগেও স্বামীকে মারতে এসেছিল।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাটির চুলার ধোঁয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ঝগড়ার উৎপত্তি। নিরীহ ছেলেটাকে একা পেয়ে তারা সবাই মারধর করে মেরে ফেলেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাবুল মিয়াসহ অন্যদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে সদর থানা-পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম রকীব উর রাজা ওই বেসরকারি হাসপাতালে যান। সদর থানার কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।