বেজেছে প্লুং বাঁশি আর ঢোল, পাহাড় মেতেছে উৎসবে
Published: 8th, April 2025 GMT
শহরের সড়কে ম্রো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্লুং বাঁশির সুরের মূর্ছনা। সঙ্গে বাজছে ঢোল। বাদ্যের তালে তালে বিচিত্র বর্ণিল পোশাকে শোভিত নারী-পুরুষেরা এগিয়ে যাচ্ছেন একটি বার্তা নিয়ে। বার্তাটি বর্ষবরণের। চৈত্রের প্রখর আলোয় উৎসবে মেতেছে গোটা পাহাড়।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ার থেকে সর্বজনীন বৈসাবি উদ্যাপন কমিটির ব্যানারে এমন শোভাযাত্রা শুরু হয়। পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী ঢোল, প্লুং বাঁশি বাজিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে পানখাইয়াপাড়ার নিউজিল্যান্ড মোড়ে এসে বেলা সাড়ে ১১টায় শেষ হয় এই শোভাযাত্রা। চাকমা, মারমা, ম্রো, চাক, ত্রিপুরা, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর প্রায় এক হাজার নারী-পুরুষ তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে খাগড়াছড়িতে এখন সাজ সাজ রব। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে নানা আয়োজন। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও চাংক্রান উৎসব ঘিরে পাহাড়িরা মিলিত হচ্ছেন মিলনমেলায়। অনেকে কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে এরই মধ্যে বাড়িতে এসেছেন। প্রাণের এই উৎসবের রং লেগেছে সব বয়সের মানুষের মনে।
১২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে পাহাড়িদের প্রধান এই সামাজিক উৎসব। এই উৎসব ঘিরে সব সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটছে। তাই একে প্রাণের উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আজ সকালের বর্ণিল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে জেলায় বৈসাবির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল।
আগামীকাল বুধবার থেকে শহরের পানখাইয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হবে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আয়োজন। এ জন্য মারমা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ঐতিহ্যবাহী পোশাকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শোভাযাত্রা। আজ সকালে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কয়ারে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনগ ষ ঠ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’