শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে আগেই ধারণা দেওয়া হয়েছিল, এবার বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু একপর্যায়ে এই দেরি মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়। বই পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। অবশেষে শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাসের মাথায় সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ মার্চ সর্বশেষ পাঠ্যবই সরবরাহের অনুমোদন বা পিডিআই দেওয়া হয়েছে। তাঁদের তথ্যমতে, সব শিক্ষার্থীই বই পেয়ে যাওয়ার কথা। না পাওয়ার অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। তবে, কোথাও কোথাও কারিগরি স্তরের নবম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী সব বই পেতে কিছু অসুবিধায় পড়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন।

আগামী বছর যাতে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা সব বই পেতে পারে, সে জন্য এখন থেকে বই ছাপানোর কাজের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী, সদস্য (শিক্ষাক্রম), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড

পাঠ্যবই ছাপা হওয়ার পর সেগুলোর মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। সেগুলো উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বই সংগ্রহ করে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করে। ফলে পাঠ্যবই সরবরাহ করার পরে শিক্ষার্থীদের হাতে তা বিতরণ করতে কয়েক দিন লেগে যায়। এবার যখন সর্বশেষ পাঠ্যবই সরবরাহ হয়েছে তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ছিল।

পবিত্র রমজান এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লম্বা ছুটি শেষে গতকাল অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখনো কিছু বিদ্যালয় খোলেনি। গতকাল রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক জানালেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা সব শিক্ষার্থীর জন্য বই পেয়ে তা বিতরণও করেছেন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ওবাইদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ছুটি শেষে আগামীকাল বুধবার তাঁদের বিদ্যালয় খুলবে। তবে ইতিমধ্যে তাঁদের বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের বই পেয়েছেন।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার গতকাল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁদের বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছাত্রী ৫৩৬ জন। সব শিক্ষার্থীই ঈদের আগে বই পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, ছুটির কারণে সব বিদ্যালয়ের সব তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

এনসিটিবির সূত্রমতে, চলতি শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৩৯ কোটির বেশি বই ছাপানো হয়। এর মধ্যে মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৪০ লাখ ৪১ হাজার ৬৯২টি। অন্যদিকে প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। এনসিটিবির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কর্মকর্তারা সবাই পাঠ্যবই সরবরাহ করার তথ্য দিয়েছেন।

দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। তবে গত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। সব বই দিতে কিছুদিন দেরি হয়েছিল। কিন্তু এবার বই দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি হয়েছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই ছাপানো হয়। পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে বই ছাপার কাজ দেরি হবে, তা বোঝাই যাচ্ছিল ছিল। কিন্তু দরপত্র, অনুমোদন, চুক্তির মতো কাজগুলোও যথাসময়ে না করায় এবং কাগজসংকটের কারণে আরও বেশি দেরি হয়।

গত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। সব বই দিতে কিছুদিন দেরি হয়েছিল। কিন্তু এবার বই দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি হয়েছে।

বর্তমানে এনসিটিবির নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। সম্প্রতি অবসরে গেছেন এত দিন চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। বর্তমানে চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থাটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে সব বই সরবরাহ করা হয়েছে। আগামী বছর যাতে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা সব বই পেতে পারে, সে জন্য এখন থেকে বই ছাপানোর কাজের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ র থ র জন য প ঠ যবই সরবর হ সব শ ক ষ র থ র বছর র শ র ত প রথম আল ক শ ক ষ বর ষ এনস ট ব র বই ছ প ন বই দ ত হয় ছ ল বই প ত গতক ল ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার