চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দুর্দান্ত দুই ফ্রি-কিক করে রাতটা নিজের করে নিয়েছিলেন আর্সেনালের ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেকলান রাইস। যা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে রীতিমতো বিরল এক কীর্তি। রিয়ালের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এমন পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে গোটা ফুটবল বিশ্বে।

ম্যাচ শেষে অ্যামাজন প্রাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাইস বলেন, ‘ম্যানেজারের পক্ষ থেকে আমাদের বারবার বলা হচ্ছিল আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে। দলের সবাই বিশ্বাস করেছিল আমরা এই ম্যাচ জিততে পারি। দ্বিতীয়ার্ধে গোল করতেই হতো।’

প্রথম ফ্রি-কিক নিয়ে রাইস বলেন, ‘আগে অনেকবার এমন চেষ্টায় বল দেয়ালে লেগেছে কিংবা বাইরে চলে গেছে। শুরুতে আমরা সেটি ক্রস করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ দেয়াল আর গোলকিপারের অবস্থান দেখে সিদ্ধান্ত নেই সরাসরি মারার।’

রাইস যোগ করেন, একই ম্যাচে যখন দ্বিতীয়টি পেয়ে গেলাম, সেটা আসলে কেমন অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। তবে সেসময় আত্মবিশ্বাসটা একটু বেশিই ছিল। এখনও ঠিক উপলব্ধি করতে পারছি না আমি কী করলাম। আমি উচ্ছ্বসিত, আমি খুশি, আমি আনন্দে আত্মহারা।’

ম্যাচ শেষে জানালেন, এই অসাধারণ মুহূর্তের পেছনে অনুপ্রেরণাদাতা ছিলেন সতীর্থ বুকায়ো সাকা। মাঠে নামার আগে সাকা বলেছিলেন, ‘মুহূর্তটা অনুভব করো’। ওই কথা শুনে সাহস পেয়েছিলাম। দ্বিতীয়টি মারার সময় তাই আত্মবিশ্বাস ছিল বেশি।

রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এই জয় আর্সেনালকে সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। ফিরতি লেগে যদি তারা এই ব্যবধান ধরে রাখতে পারে, তাহলে প্রতিযোগিতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বপ্নটাও বাস্তব রূপ নিতে পারে।

তবে ফিরতি লেগ সামনে রেখে এখনই উচ্ছ্বাসে ভাসতে চাইছেন না রাইস, ‘এই প্রতিযোগিতায় রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলকে হারানো, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বড় একটি রাত। তবে আমরা এই প্রতিযোগিতা জিততে চাই। ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলে জিততে হবে।’

আগামী ১৬ এপ্রিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ফিরতি লেগ। তার আগে প্রিমিয়ার লিগে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ম্যাচে রাইসকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে। সেমিফাইনালে উঠলে আর্সেনালের প্রতিপক্ষ হবে অ্যাস্টন ভিলা অথবা প্যারিস সেন্ট জার্মেইন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর স ন ল

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে: সলিমুল্লাহ খান

লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষের মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল; ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং মেন্ডেট নিতে হবে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচন যে খুব নিখুঁত হয়েছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষের সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার–যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না গণ্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।

তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ