ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের ‘অস্ত্রের’ মোকাবিলায় কি জিততে পারবে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 9th, April 2025 GMT
একটি দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের শুরু করা এই বাণিজ্যযুদ্ধে দেশটি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে দিতে পারে।
শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে উত্তেজনা শুধু বাড়িয়েই চলেছেন। দেশটি থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশ করতে অন্তত ১০৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। ট্রাম্প শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সারা বিশ্বে যে আক্রমণ শুরু করেছেন, এটা এখন পর্যন্ত তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর।
এই শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যমূল্যের যে চরম ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার মূলেও হয়তো চীনের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চীন নানাভাবে সুযোগের অপব্যবহার করছে, যা রোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বের ওপর চীনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশটি একটি ‘সুপার-পাওয়ার’ হয়ে উঠেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই উত্থান সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ঐতিহাসিক চীন সফরের সময় থেকে এর শুরু হয়েছে।
১৯৭২ সালে চীন সফরে গিয়ে মাও সে–তুংয়ের সঙ্গে দেখা করেন নিক্সন। একটি বিচ্ছিন্ন ও দারিদ্র্যপীড়িত জাতিকে ‘বিশ্বদরবারে তুলে আনতে’ নিক্সনের ওই সফর—এমনটা বলা হলেও চীনের কমিউনিস্ট নেতাদের সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট ভাইদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলাও নিক্সনের সফরের লক্ষ্য ছিল।
বিভিন্ন দেশের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যমূল্যের যে চরম ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার মূলেও হয়তো চীনের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।প্রায় ২৫ বছর আগে চীনের বিষয়ে আরও একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি চীনকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় নিয়ে আসে। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয় চীন।
চীনকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল। সেই সঙ্গে সেখানে নিয়মভিত্তিক পশ্চিমা ধাঁচের একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিল।
চীনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের খাঁড়া এড়াতে অনেক দেশ তার দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী হবে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু চীন সেই দলে নেই। বরং চীন বলেছে, তারা এই বাণিজ্যযুদ্ধের শেষ দেখতে প্রস্তুত।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। দেশটির পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে ট্রাম্প দ্রুতই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। নিজের সেই হুমকির বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে ট্রাম্পকে চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করতেই হতো। ট্রাম্পের ওই শুল্কারোপের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন।
আপনি মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সংকোচন দেখতে চলেছেন, যা শ্রমবাজার হ্রাস করবে। আপনাকে মুদ্রাস্ফীতির চাপে পড়তে হবে। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, এ কৌশলের বিষয়ে কোনো যুক্তিসংগত চিন্তাভাবনা বা দিকনির্দেশনা নেইঅ্যালেক্স জ্যাকেজ, জো বাইডেন প্রশাসনের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্র্যাটেজির বিশেষ সহকারীগতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন, ‘চীনের মতো দেশ যারা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা বেছে নিয়েছে এবং আমেরিকার কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার দ্বিগুণ করার চেষ্টা করছে, তারা ভুল করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেরুদণ্ড ইস্পাত কঠিন এবং তিনি ভাঙবেন না, তাঁর নেতৃত্বে আমেরিকা ভেঙে পড়বে না।’
গত ২ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে বসে সর্বশেষ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তার পর থেকে সি চিং পিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন ট্রাম্পকে তাঁর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সক্ষমতার একটি বড় অংশ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে চীন এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে এবং এ লড়াইয়ে ট্রাম্পকে ছাপিয়ে যাওয়ার সব লক্ষণ দেশটি প্রকাশ করতে শুরু করেছে।
১৯৭২ সালে চীন সফরে গিয়ে মাও সে–তুংয়ের সঙ্গে দেখা করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।