বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে পতন ঘটে আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের দু:শাসনের। গত ৫ আগষ্ট থেকে ৮ আগষ্ট পর্যন্ত সারাদেশে কোনো সরকার ব্যবস্থা না থাকায় কতিপয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পরিচয়ে চলতে থাকে ব্যাপক লুটপাট ও চাঁদাবাজি।

নানা হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ ব্যবসায়ী ও জনসাধারণকে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ব্যবসা কেন্দ্রিক অঞ্চল হিসেবে খ্যাত আদমজী এলাকাতে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চলতে থাকে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপক চাঁদাবাজি।

 টাকা না দিলে কেড়ে নেয়া হতো পণ্য, করা হতো মারধর। এসব মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধে মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা রাস্তায় নেমে হ্যান্ড মাইকে কাউকে চাঁদা না দেয়ার আহ্বান জানান। কেউ চাঁদাবাজি করতে এলে সবাই মিলে তাকে আটকে রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জানানোর অনুরোধও করেন তারা। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের কঠোর অবস্থানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম। নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের কাপড় ব্যবসায়ী জয়নাল জানান, আগস্টের দিকে প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই আমাদের কাছে চাঁদা নিতে আসতো। চাঁদা না দিলে মারধর করতো।

দোকান থেকে কাপড় নিয়ে যেতো। আল্লাহর রহমতে এখন আমরা ভালো আছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আমাদের পাশে থাকায় এখন আর কাউকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে না। 

আদমজী নতুন বাজার এলাকার দোকানদার জিল্লুর জানান, আমাদের দোকানগুলোর মালিক আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় ৫ আগস্টের পর প্রতিমাসে একেক গ্রুপ জোরপূর্বক তার সকল দোকান ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যেতো।

কিন্তু আমরা চাইতাম প্রকৃত মালিককে ভাড়া দিতে। পরবর্তীতে গত নভেম্বরে আমাদের দোকান মালিকের স্ত্রী রোকেয়া রহমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন নেতৃবৃন্দের সহায়তায় এখন তার কাছে আমরা প্রতিমাসের ভাড়া তুলে দিতে পারছি। এটাই আমাদের অনেক স্বস্তির বিষয়। আমরা এখন নিরাপদে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারছি।

এ বিষয়ে রোকেয়া রহমান বলেন, গত ১২/১৩ বছর ধরে রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ নিয়ে এই জমিতে আমরা দোকানঘর নির্মান করে ভাড়া দিয়েছি। কিন্ত ৫ আগস্ট এর পর কিছু লোক জোর করে ভাড়া উঠিয়ে নিয়ে যায়, এবং ভাড়াটিয়াদের ভয়ভীতি দেখায়। পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আমাদের পাশে দাঁড়ায়। তাঁদের সহযোগিতায় আমরা ভাড়া বুঝে পাচ্ছি।

ওদিকে এবার ঈদে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর নতুনবাজার হকার্স মার্কেট ও ফুটপাতের ব্যবসায়িরা চাঁদাবাজি মুক্ত থাকায় খুশি হলেও মন খারাপ চিহ্নিত চাঁদাবাজ চক্রের। এই চাঁদাবাজ চক্রটি বছরের পর বছর ধরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে। ঈদ আসলে তাদের চাঁদার রেট বেড়ে যায়।

এবার তারা ব্যাপক চাঁদাবাজির প্রস্তুতি নিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত চাঁদা তুলতে পারেনি। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে মাইকিং করে কাউকে চাঁদা না দেয়ার আহবান জানিয়ে ব্যবসায়িদের পাশে দাঁড়ায়। এতে করে ছাত্রদের কাছে পেয়ে ব্যবসায়িরাও সাহসী হয়ে ওঠে। 

ব্যবসায়ি ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত ১৫/১৬ বছর ধরে প্রতি শুক্রবার আদমজী নতুন বাজার এলাকায় রেলওয়ের জমিতে হকার্স মার্কেট ও নতুন সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে বিভিন্ন এলাকার কয়েকশত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি দোকার বসায়। নতুনবাজার ও সোনামিয়া বাজার এলাকার একটি চিহ্নিত চাঁদাবাজ চক্র এই সকল ব্যবসায়িদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতো। 

৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজদের একটি অংশ পালিয়ে যায়। কিন্তু আরেকটি অংশ নব্য চাঁদাবাজদের সাথে নিয়ে চাঁদা উঠানো শুরু করে। ৫ আগস্টের পর ৬ মাস ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে তারা। এক পর্যায়ে ঈদকে সামনে রেখে ব্যাপক চাঁদাবাজির ছক আঁকে চাঁদাবাজ চক্রটি। এবং ৭ মার্চ  শুক্রবার রমজানের মধ্যে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে চক্রটি। 

এ নিয়ে ব্যবসায়িদের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা দেয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেনি। বিষয়টি জানতে পেরে ৮ মার্চ শনিবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠে নামে। এবং মাইকিং করে কাউকে চাঁদা না দেয়ার আহবান জানায়। ছাত্রদের আহবানে সাড়া দিয়ে ব্যবসায়িরা চাঁদা দেয়া থেকে বিরত থাকে। 

এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসব ভূমিকাকে ভালো ভাবে নিতে পারেননি এক শ্রেণির  কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও চাঁদাবাজরা। কারণ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কঠোর অবস্থানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁদের চাঁদাবাজি ও লুটপাট।

যার ফলে ওই চাঁদাবাজ চক্র বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে নেমেছে। তাঁদেরকে বিতর্কিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম আহবায়ক মেহরাব হোসেন প্রভাত বলেন, এই অন্তর্র্বতীকালীন সরকার একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দেশব্যাপী নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও বৈষম্য মুক্ত করতে ছাত্ররা রাজপথে প্রাণ দিয়েছে।

ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। কোন দলকে চাঁদাবাজি আর নৈরাজ্যের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেনি। 

লুটপাট আর চাঁদাবাজির সাথে কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকে জনতার সহায়তায় আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে। তাই দেশের স্বার্থে সরকারকে সহযোগীতার আহবান জানান তিনি।

কোথাও কোন অন্যায় সংঘটিত হলে বৈষম বিরোধী ছাত্ররা তা প্রতিহত করবে। কোনো অপপ্রচার আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ব যবস য় ন র য়ণগঞ জ ব যবস য় দ র ব যবস য় র ৫ আগস ট র আহব ন আগস ট র র ব যবস কর ম র আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ