বাংলাদেশের বাজার গতিশীল ব্যবসার সুযোগও বেশি
Published: 10th, April 2025 GMT
সমকাল: বাংলাদেশে এ নিয়ে কতবার এলেন? এ দেশ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
মাইক ওরগিল: বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে এসেছি। এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছি। ২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রথম আসি গুগলের হয়ে কাজের অংশ হিসেবে। এবার এসেছি উবারের হয়ে। এক দশকেরও বেশি সময় বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতি দেখে সত্যিকার অর্থে আমি আপ্লুত।
সমকাল: কী ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?
মাইক ওরগিল: বড় বড় ভবন হয়েছে। হাইওয়ে, ব্রিজ, মেট্রোরেলসহ নানা অবকাঠামো হচ্ছে। ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এর অর্থ হলো, এ দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক হারে বেড়েছে। এর ফলে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়া দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ বেশ ভালো গন্তব্য। আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছে এবং উপার্জনও বেড়েছে। বড় বড় কোম্পানি হচ্ছে। ফলে মানুষের যাতায়াতের চাহিদাও বেড়েছে।
সমকাল: বাংলাদেশে উবার বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসার দিক বিবেচনা করলে, আপনাদের অভিজ্ঞতা কী?
মাইক ওরগিল: বাংলাদেশের বাজারটি বেশ গতিশীল। তাছাড়া এখানকার মানুষ নতুন কিছুকে গ্রহণ করায় বেশ আগ্রহী। উবারের মতো অনলাইনভিত্তিক যাতায়াত প্ল্যাটফর্মের এখানে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ আছে।
সমকাল: সম্প্রতি উবার বাংলাদেশে এর কার্যক্রমের ‘ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, এখানে সাড়ে তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গত বছর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে উবার।
মাইক ওরগিল: ঠিক তাই। এখানকার বিপুল সংখ্যক ড্রাইভার রেজিস্ট্রেশন করে উবারের সঙ্গে যাত্রী সেবা দিচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উবার সরাসরি ভূমিকা রেখেছে। উবারের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রাইভেট কার এবং মোটরসাইকেলের বাজার বড় হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৯০ কোটি টাকার বাজার হয়েছে। উবারের ড্রাইভারদের অনেকে যেমন সার্বক্ষণিক সেবায় যুক্ত, তেমনি কেউ কেউ স্বল্পকালীন সময়ের জন্য উবার সেবা দিয়ে বাড়তি আয় করছেন। অন্যদিকে অফিসগামী মানুষকে দ্রুততম সময়ে এবং সাধ্যের মধ্যে ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করছে উবার। গবেষণায় দেখেছি, বাংলাদেশে উবারের কার্যক্রমে যাত্রীদের ১১ লাখ কর্মঘণ্টা সাশ্রয় করেছে, যার বাজারমূল্য ৯৪ কোটি টাকা।
সমকাল: এ প্রতিবেদেন দেখেছি, ৩৩ শতাংশ যাত্রী বলেছেন, উবারের ভাড়া সাশ্রয়ী। অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ যাত্রী হয়তো এ বিষয়ে একমত নন.
মাইক ওরগিল: আসলে তা নয়। জরিপে আমাদের যাত্রীসেবা গ্রহণকারীদের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘উবার মোটো’ সুবিধাটি আপনি কেন অন্য প্ল্যাটফর্মের সেবা থেকে বেশি পছন্দ করেন?’ এ প্রশ্নের উত্তরে ৩৩ শতাংশ বলেছেন, তারা এর ভাড়াকে সাশ্রয়ী মনে করেন। এর অর্থ এই নয় যে, অন্যরা ভাড়া বেশি বলে মনে করেন। কেউ সময় সাশ্রয়ের কারণে, কেউ যানজট এড়ানোর জন্য পছন্দ করছেন। আবার যাত্রীদের আমরা এমন প্রশ্নও করেছিলাম, কেন তারা উবারের ‘রাইড’ সেবা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে কেউ নিরাপত্তা ইস্যু, কেউ সহজপ্রাপ্যতা, বাসা থেকে তুলে আবার বাসায় বা অফিসে পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন ‘অপশন’ থেকে নিজেদের পছন্দের কথা বলেছেন।
সমকাল: কিন্তু যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, উবারের ভাড়া বেশি।
মাইক ওরগিল: দেখুন, আমরা এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করছি, যেখানে কিছু খরচ আছে। এই খরচ বিবেচনা করে স্থানীয় বাজারের মানুষের সাধ্যের মধ্যে ভাড়া নির্ধারণের চিন্তা করি। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশে কারও কারও জন্য প্রাইভেটকারে গন্তব্যে পৌঁছানো কিছুটা খরুচে বলে মনে হতে পারে। এ জন্য ‘উবার মোটো’ এবং উবার থ্রি-হুইলার অর্থাৎ সিএনজিচালিত অটোরিকশার রাইডের ব্যবস্থাও করেছি। সবার ভাড়া প্রদান সক্ষমতা যেমন এক নয়, আবার সবার স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যেও পার্থক্য আছে। ফলে যারা প্রিমিয়াম সেবা চান, তাদের খরচ বেশি।
সমকাল: ঢাকায় উবার ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, অনেকে স্বল্প দূরত্বে যাত্রী নিতে চান না, ‘রাইড অনুরোধ’ বাতিল করেন। গাড়ির মান ভালো না। এ সব অভিযোগ কী পান?
মাইক ওরগিল: হ্যাঁ। অভিযোগগুলো যাতে কমে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সমকাল: বাংলাদেশে উবারের পরিকল্পনা কী?
মাইক ওরগিল: আগেই বলেছি, এ দেশের অর্থনীতি ও বাজার বেশ গতিশীল এবং ক্রমে বাড়ছে। উবার এ সুযোগটি নিতে চায়। এখানকার যাত্রীদের আরও আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী মূল্যে যাত্রীসেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি