সমকাল: বাংলাদেশে এ নিয়ে কতবার এলেন? এ দেশ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মাইক ওরগিল: বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে এসেছি। এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছি। ২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রথম আসি গুগলের হয়ে কাজের অংশ হিসেবে। এবার এসেছি উবারের হয়ে। এক দশকেরও বেশি সময় বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতি দেখে সত্যিকার অর্থে আমি আপ্লুত।

সমকাল: কী ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?

মাইক ওরগিল: বড় বড় ভবন হয়েছে। হাইওয়ে, ব্রিজ, মেট্রোরেলসহ নানা অবকাঠামো হচ্ছে। ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এর অর্থ হলো, এ দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক হারে বেড়েছে। এর ফলে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়া দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ বেশ ভালো গন্তব্য। আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছে এবং উপার্জনও বেড়েছে। বড় বড় কোম্পানি হচ্ছে। ফলে মানুষের যাতায়াতের চাহিদাও বেড়েছে।

সমকাল: বাংলাদেশে উবার বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসার দিক বিবেচনা করলে, আপনাদের অভিজ্ঞতা কী?

মাইক ওরগিল: বাংলাদেশের বাজারটি বেশ গতিশীল। তাছাড়া এখানকার মানুষ নতুন কিছুকে গ্রহণ করায় বেশ আগ্রহী। উবারের মতো অনলাইনভিত্তিক যাতায়াত প্ল্যাটফর্মের এখানে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ আছে।

সমকাল: সম্প্রতি উবার বাংলাদেশে এর কার্যক্রমের ‘ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, এখানে সাড়ে তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গত বছর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে উবার।

মাইক ওরগিল: ঠিক তাই। এখানকার বিপুল সংখ্যক ড্রাইভার রেজিস্ট্রেশন করে উবারের সঙ্গে যাত্রী সেবা দিচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উবার সরাসরি ভূমিকা রেখেছে। উবারের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রাইভেট কার এবং মোটরসাইকেলের বাজার বড় হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৯০ কোটি টাকার বাজার হয়েছে। উবারের ড্রাইভারদের অনেকে যেমন সার্বক্ষণিক সেবায় যুক্ত, তেমনি কেউ কেউ স্বল্পকালীন সময়ের জন্য উবার সেবা দিয়ে বাড়তি আয় করছেন। অন্যদিকে অফিসগামী মানুষকে দ্রুততম সময়ে এবং সাধ্যের মধ্যে ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করছে উবার। গবেষণায় দেখেছি, বাংলাদেশে উবারের কার্যক্রমে যাত্রীদের ১১ লাখ কর্মঘণ্টা সাশ্রয় করেছে, যার বাজারমূল্য ৯৪ কোটি টাকা।

সমকাল: এ প্রতিবেদেন দেখেছি, ৩৩ শতাংশ যাত্রী বলেছেন, উবারের ভাড়া সাশ্রয়ী। অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ যাত্রী হয়তো এ বিষয়ে একমত নন.

..।

মাইক ওরগিল: আসলে তা নয়। জরিপে আমাদের যাত্রীসেবা গ্রহণকারীদের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘উবার মোটো’ সুবিধাটি আপনি কেন অন্য প্ল্যাটফর্মের সেবা থেকে বেশি পছন্দ করেন?’ এ প্রশ্নের উত্তরে ৩৩ শতাংশ বলেছেন, তারা এর ভাড়াকে সাশ্রয়ী মনে করেন। এর অর্থ এই নয় যে, অন্যরা ভাড়া বেশি বলে মনে করেন। কেউ সময় সাশ্রয়ের কারণে, কেউ যানজট এড়ানোর জন্য পছন্দ করছেন। আবার যাত্রীদের আমরা এমন প্রশ্নও করেছিলাম, কেন তারা উবারের ‘রাইড’ সেবা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে কেউ নিরাপত্তা ইস্যু, কেউ সহজপ্রাপ্যতা, বাসা থেকে তুলে আবার বাসায় বা অফিসে পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন ‘অপশন’ থেকে নিজেদের পছন্দের কথা বলেছেন।

সমকাল: কিন্তু যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, উবারের ভাড়া বেশি।

মাইক ওরগিল: দেখুন, আমরা এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করছি, যেখানে কিছু খরচ আছে। এই খরচ বিবেচনা করে স্থানীয় বাজারের মানুষের সাধ্যের মধ্যে ভাড়া নির্ধারণের চিন্তা করি। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশে কারও কারও জন্য প্রাইভেটকারে গন্তব্যে পৌঁছানো কিছুটা খরুচে বলে মনে হতে পারে। এ জন্য ‘উবার মোটো’ এবং উবার থ্রি-হুইলার অর্থাৎ সিএনজিচালিত অটোরিকশার রাইডের ব্যবস্থাও করেছি। সবার ভাড়া প্রদান সক্ষমতা যেমন এক নয়, আবার সবার স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যেও পার্থক্য আছে। ফলে যারা প্রিমিয়াম সেবা চান, তাদের খরচ বেশি। 

সমকাল: ঢাকায় উবার ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, অনেকে স্বল্প দূরত্বে যাত্রী নিতে চান না, ‘রাইড অনুরোধ’ বাতিল করেন। গাড়ির মান ভালো না। এ সব অভিযোগ কী পান?

মাইক ওরগিল: হ্যাঁ। অভিযোগগুলো যাতে কমে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সমকাল: বাংলাদেশে উবারের পরিকল্পনা কী?

মাইক ওরগিল: আগেই বলেছি, এ দেশের অর্থনীতি ও বাজার বেশ গতিশীল এবং ক্রমে বাড়ছে। উবার এ সুযোগটি নিতে চায়। এখানকার যাত্রীদের আরও আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী মূল্যে যাত্রীসেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পছন দ সমক ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ