বহুদিনের ইচ্ছা ছিল ভোলার ‘চর কুকরি–মুকরি’ ও আশপাশের চরগুলোর নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করা। ওখানকার প্রকৃতি-পাখি-প্রাণী দেখা। তবে নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ১২ ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগটা এসে গেল। ‘নাইকন ফ্যান ক্লাব’ আয়োজিত ‘চর কুকরি-মুকরি ও ঢালচর প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ অভিযান’-এ অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ পেলাম। সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না।
রাত আটটায় লঞ্চ। সদরঘাট থেকে প্রথমে চরফ্যাশনের বেতুয়া ও পরে কচ্ছপিয়া ঘাটে যেতে হবে। কিন্তু প্রচণ্ড যানজটের কারণে সদরঘাট পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেল। ফলে আমিসহ আরও তিনজন লঞ্চ ধরতে ব্যর্থ হলাম। তাই রাত দশটার ইলিশার লঞ্চে উঠলাম। ভোরে ইলিশা ঘাটে নেমে অটোরিকশায় ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন পেরিয়ে ৭২ কিলোমিটার দূরের বেতুয়ায় পৌঁছলাম দুই ঘণ্টা পর। এরপর বাকিদের সঙ্গে অটোযোগে কচ্ছপিয়া ঘাটে গিয়ে ঢালচরের উদ্দেশে ট্রলারে উঠলাম। ট্রলার ছাড়ল দুপুর বারোটায়।
ট্রলার ছুটে চলল উপকূলীয় খাল-নদী, বাদাবন ও বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে। বাদাবনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল যেন সুন্দরবনের ভেতর দিয়েই যাচ্ছি। পথে নানা প্রজাতির পরিযায়ী ও আবাসিক পাখির দেখা মিলল। বেলা সোয়া একটায় কুকরি-মুকরির ওয়াচ টাওয়ার পেরিয়ে আবারও বঙ্গোপসাগরে পড়লাম। ঢালচরের তারুয়া সমুদ্রসৈকতে পৌঁছাতে একটা ৫০ বেজে গেল। এখানেই ক্যাম্প করব।
তারুয়া সৈকতে নামার সময় ঘাটের খুঁটিতে একটি সাদাবুক মাছরাঙার দেখা পেলাম। সৈকতজুড়ে যেন লাল কাঁকড়ার মেলা বসেছে! কী সুন্দর সে দৃশ্য! কিন্তু ছবি তোলার জন্য কাছাকাছি যেতেই ওরা গর্তের ভেতর লুকিয়ে পড়ল। ট্যুর অপারেটরসহ কয়েকজন ক্যাম্পের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে গেলেন। মালপত্রসহ বাকিরা অপেক্ষা করতে লাগলেন একটি বাবলাগাছের নিচে।
ভ্রমণসঙ্গী তরিকুল রনি ও নির্মল সরদারকে নিয়ে ক্যামেরা হাতে আশপাশটায় পাখির খোঁজ করতে লাগলাম। বাবলাগাছের সামনের মাঠে ঝুঁটি ও গোশালিকের দেখা মিলল। মাঠজুড়ে গোটা পঞ্চাশেক কইতরি চ্যাগা (সোনা বাটান) বিচরণ করছিল। হাঁটতে হাঁটতে একটি সরু খালের পাড়ে গিয়ে লাল-পা পিউ, কানিবক, সাধারণ আবাবিল, বাদামি কসাই, মালা চ্যাগা ও লাল লতিকা হট্টিটির দেখা পেলাম। মালা চ্যাগার পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে ছোট গুলিন্দা, ছোট বগা ও হলুদ খঞ্জনের সঙ্গে দেখা হলো। এরপর সৈকতপানে তাকাতেই বড় বদরকৈতর ও কালোমাথা কাস্তেচরা উড়ে যেতে দেখলাম। ওদের ছবি তুলছি এমন সময় রনির ডাক এল। ক্যাম্পের জন্য উপযুক্ত স্থান পাওয়া গেছে। দ্রুত বাবলাগাছের তলায় গিয়ে মালপত্র নিয়ে ক্যাম্পসাইটে চলে গেলাম।
তারুয়া সৈকতের পাশে সরু খালের ওপর উড়ন্ত ছোট বগা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।
গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’
এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’
সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।
গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।
আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’
ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।