লক্ষ্মীপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলা, ১৬ নেতা-কর্মী বহিষ্কার
Published: 10th, April 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাইজুদ্দিন দেওয়ান (৪৫) নামের এক প্রবাসী নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাঁর বড় ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে রায়পুর থানায় মামলাটি করেন।
এদিকে এ ঘটনায় উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৬ জন নেতা-কর্মীকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনবিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রবাসীর মৃত্যুর জের ধরে ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর০৮ এপ্রিল ২০২৫মামলায় রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবিরাজকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তাঁর ছোট ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ১৬০ জনকে।
নিহত ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ বৃহস্পতিবারও চরবংশী ইউনিয়নে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
খুন, বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিষয়ে গতকাল রাতে রায়পুর উপজেলা বিএনপির নেতারা জরুরি বৈঠক করেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৬ জন নেতা-কর্মীকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। রাত ১১টার দিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহম্মদ ও সদস্যসচিব শফিকুর রহমান ভূঁইয়ার সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখতে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মেহেদী কবিরাজ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবাদ উল্লাহ গাজী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিক রাঁড়ি, ৮ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ হোসেন, উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ফারুক সর্দার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ফারুক গাজী প্রমুখ।
আরও পড়ুনলক্ষ্মীপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১৫০৭ এপ্রিল ২০২৫এর আগে গত সোমবার বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাইজুদ্দিন নিহত হন। এ ছাড়া আরও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। ওই দিন বিকেলে উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের মধ্য চরবংশী বেড়িবাঁধ ও খাসেরহাট বাজারে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাঁর নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকার বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা চরবংশী গ্রামের ১৫টি বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে বলে জানান রায়পুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জামিলুল হক। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকাটিতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স র চরব শ র ঘটন য় সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।