ক্যারিয়ারের দুই যুগ পার করেছেন সংগীতশিল্পী শরিফুজ্জামান সোহাগ। এ সময়ে একক, মিক্সডসহ এই গায়কের অ্যালবামের সংখ্যা ৫৮, গানের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০–এর বেশি। ঝুলিতে আছে ‘ও কন্যা’, ‘কাইন্দো না’, ‘কন্যা মন দিলা না’, ‘পরান বন্ধুয়া’ ও ‘লাল শাড়ি’র মতো সুপার হিট গান। ক্যারিয়ারে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছালেও সোহাগের আছে আক্ষেপ। এখন পর্যন্ত কোনো গানের মেধাস্বত্ব থেকে কানাকড়িও পাননি বলে অভিযোগ এই গায়কের। সোহাগের ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত ও অজানা কথা শুনেছেন নাজমুল হক।


শূন্য দশক—বাংলা অডিও ইন্ডাস্ট্রির স্বর্ণালি সময়। এ দশকের শুরুতে অনেক নতুন গায়কের উত্থান হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। মিক্সড অ্যালবামে জনপ্রিয় গায়কদের সঙ্গে সুযোগ পেতে থাকেন নতুন শিল্পীরা। ২০০২ সালে নতুন মুখ হিসেবে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু সোহাগের। সেবার জনপ্রিয় চারটি মিক্সড অ্যালবামে সুযোগ পান তিনি। প্রতিটি অ্যালবাম পায় জনপ্রিয়তার সঙ্গে ব্যবসায়িক সফলতা। সোহাগ পৌঁছে যান শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায়।
২০০২ সালে ‘ফাটাফাটি প্রেম’ মিক্সড অ্যালবামে পান্থ কানাই ও বিপ্লবের সঙ্গে অভিষেক হয় সোহাগের। এরপর প্রকাশ পায় মিক্সড অ্যালবাম ‘পানি’, যেখানে বিপ্লব ও মাস্টার সোহেলের সঙ্গে গান করেন সোহাগ। তৃতীয় মিক্সড অ্যালবাম ‘নদী’তে সোহাগ গান করেন পথিক নবী ও মাস্টার সোহেলের সঙ্গে। প্রথম তিন অ্যালবামে বিপ্লব, পান্থ কানাই আর পথিক নবীদের আড়ালে থেকে গেলেও সোহাগ তাঁর সাফল্যের গল্পটা লেখেন চতুর্থ অ্যালবামে। সংগীতশিল্পী হাসানের সঙ্গে ‘ও কন্যা’ অ্যালবাম সোহাগের ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলে দেয়। অ্যালবামটির ‘ও কন্যা কাইন্দো না’ এই গায়কের জীবনের প্রথম জনপ্রিয়তা পাওয়া গান। এ ছাড়া অ্যালবামটির ‘পালকি করে’, ‘তুমি আসো না কেন রে’, ‘রাত তুমি’ ও ‘একটু একটু প্রেম’ সোহাগকে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।

‘ও কন্যা’ অ্যালবামের সাফল্যে পরের বছর হাসানের সঙ্গেই সোহাগ বাজারে আনেন তাঁর পঞ্চম অ্যালবাম ‘ও কন্যা মন দিলা না’। অ্যালবামের ‘কন্যা মন দিলা না’, ‘ও বন্ধুরে’, ‘কাইন্দ না ময়না’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই গায়কের তথ্যমতে, ৬৪ লাখের বেশি ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল অ্যালবামটির। স্মৃতি হাতড়ে সোহাগ বলেন, ‘হাসান ভাইয়ের সঙ্গে আমার চতুর্থ অ্যালবাম “ও কন্যা” ব্যাপক হিট হয়। রাস্তাঘাটে বের হলেই গানগুলো শুনতাম। তবে পঞ্চম অ্যালবাম “কন্যা মন দিলা না” আমার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ হিট। দোকান থেকে রাস্তাঘাট, গাড়ি, যেখানেই গেছি, অ্যালবাম দুটির গান শুনতে পেয়েছি।’
মিক্সড অ্যালবামের এ সাফল্যে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে সোহাগের। দেশব্যাপী কনসার্টের ডাক পেতে থাকেন এই গায়ক। তখন একটি ব্যান্ড গড়ার কথা চিন্তা করেন তিনি। ২০০৩ সালে ‘রক্ত আলতা পায়’ অ্যালবাম প্রকাশের মধ্য দিয়ে শ্রোতাদের পরিচিত করান ‘ভাটিয়াল’ ব্যান্ডের সঙ্গে। বাংলা অডিও ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় এ অ্যালবামের ‘লাল শাড়ি পরিয়া’, ‘ও পরান বন্ধুয়া’, ‘বন্ধু আমার চিঠি দিয়ো’, ‘রক্ত আলতা পায়ে’, ‘বেদনা’সহ সব কটি গানই শ্রোতাদের মুখে মুখে জায়গা করে নিয়েছিল। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও অ্যালবামটির গানগুলোর আবেগ এখনো কমেনি। একই বছর সোহাগের একক ‘প্রেম জুয়াড়ি’ ও হাসানের সঙ্গে তৃতীয় মিক্সড অ্যালবাম ‘সোহাগী কন্যা’ও ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। পরের কয়েক বছরে একক, মিক্সডসহ সোহাগ প্রকাশ করেন ৫০টির বেশি অ্যালবাম।

ইউটিউব আসার পর সবার মতো কমতে থাকে সোহাগের অ্যালবামের সংখ্যা। তাঁর পুরোনো গানগুলো ইউটিউবে প্রকাশ করতে থাকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি জোন। আর তা বর্তমান প্রজন্মের শ্রোতারা লুফে নিতে থাকেন। তবে সোহাগ দিলেন অবাক করা তথ্য। জানান, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গানগুলো প্রকাশ করে এ প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল এ মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। সোহাগ বলেন, ‘২০০২–০৭ সাল পর্যন্ত কে টি সিরিজের সঙ্গে আমার লিখিত চুক্তি হয়। কিন্তু ইউটিউব এলে অনুমতি ছাড়া সব গান সিডি জোনের কাছে তারা ডিজিটাল চুক্তিতে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু কে টির সঙ্গে কিন্তু আমার ডিজিটাল চুক্তি ছিল না। জালিয়াতি করে আমার স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়। এক টাকাও আমি পাইনি, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।’

সংগীতশিল্পী শরিফুজ্জামান সোহাগ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র জনপ র য় মন দ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতে ‘টর্চলাইট জ্বালিয়ে’ দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ইউএনও-ওসিসহ আহত ৩০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পূর্ববিরোধের জের ধরে দুটি গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার সদর ইউনিয়নের চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এ সময় বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশাররফ হোসাইন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হাসান আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে মুঠোফোনের চার্জার কেনাবেচা নিয়ে চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় চানমনিপাড়া গ্রামের প্রয়াত হেলাল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম (৪২) ও তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) গ্রামের অদূরে একটি চালকলে চাল ভাঙাতে যান। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মোঘলটুলা গ্রামের তৌহিদ মিয়া (২০) হালিমা বেগমকে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদ করেন তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম। এ নিয়ে সাইফুল ও তৌহিদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এর জের ধরে গতকাল রাত আটটার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে দুই গ্রামের মাঝখানের সড়কে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অন্ধকারে অনেকের হাতে ছিল টর্চলাইট।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ইউএনও মোশাররফ হোসাইন, ওসি রফিকুল হাসানসহ পুলিশের একটি দল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও এবং রাত ১০টার দিকে ওসি ইটের আঘাতে আহত হন। ইউএনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি ডান হাঁটুর নিচে আঘাত পেয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ওসি রফিকুল হাসান। তাঁর ডান চোখের ওপরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) তপন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সরাইল থানার ওসি রফিকুল হাসান ঘটনাস্থলে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

ইউএনও মোশাররফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরাইলে সংঘর্ষে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনা আমি মেনে নিতে পারিনি। সংঘর্ষের ঘটনা শুনে না গিয়ে পারলাম না। কথায় কথায় সংঘর্ষের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ