শেখ হাসিনাসহ ৪ মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, শিগগিরই প্রতিবেদন
Published: 10th, April 2025 GMT
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আশুলিয়া লাশ পোড়ানো, চানখারপুল হত্যাকাণ্ড, রামপুরা কার্নিশে ঝুলে থাকাকে গুলি ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এই চারটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে পারবো।
আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ, মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারের হালনাগাদ তথ্যের এক প্রতিবেদন তুলে ধরেন তিনি।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা ২২ মামলায় শেখ হাসিনাসহ সামরিক, বেসামরিক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬২ জন এবং ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত এক হাজারের অধিক ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। পরোয়ানা জারির পর ৫৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি ৮৭ জন আসামি পলাতক। ৩৯টি মামলার তদন্ত চলছে।
মতবিনিময়ের শুরুতে তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। সব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হবো এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা মাস্টারমাইন্ড, সুপিরিয়র কমান্ড, যাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং যাদের কারণে রাষ্ট্র এমন হয়েছে, তাদের আগে বিচার করতে চাই। ভিকটিমদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিচারকে দ্রুত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কিছু সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে হয়তো হয়ে যাবে। যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংগে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হবে।
কবে নাগাদ বিচার শুরু করা যাবে- এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, সময় বেধে দিয়ে বিচার করা যাবে না। সময় বেধে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।
টাইম বোমা উদ্ধার প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, আমিসহ গুমের মামলার তদন্তে যাওয়া দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে টাইমার বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত যেন ফাঁস না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।
তিনি বলেন, গুমের বিষয়ে আমরা উত্তরায় একটা বৃহৎ বন্দিশালায় তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে অনেক কিছু আমরা আবিস্কার করেছি। টাইমার বোমা দেখেছি। হয়তো এই টাইমবোমা সেট করা হয়েছিল তদন্তকারী দলকে হত্যার পরিকল্পনা করতে। আমরা আয়নাঘর পরিদর্শনের ঠিক দুইদিন পর প্রধান উপদেষ্টা ড.
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোনডেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট, রংপুরসহ ১৫টি জেলায় তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা পর্যায়ে চারটি গণশুনানি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পতিত সরকারের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। থানা, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দলিলপত্র পুড়িয়ে বা লুকিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
মতবিনিময় সভায় প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম, আবদুল্লাহ আল নোমান, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, সাইমুম রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তদন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫