খুলনায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় শুনে যৌথ বাহিনী বেশি মেরেছে বলে অভিযোগ করেছেন এক ছাত্র। ভুক্তভোগী তারেক মোল্লা আযম খান কমার্স কলেজের ছাত্র। ছিলেন জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক। বর্তমানে কমার্স কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি।
তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ৪ এপ্রিল রাতে যৌথ বাহিনী তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তখন এক পুলিশ সদস্য বলছিলেন, ‘৫ আগস্টের পর দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছিস। এখন আমরা মারব, আ’লীগ মারবে, বিএনপিও মারবে।’
গত দু’দিন শ্রমিক, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর ঘাট এলাকায় ওবায়দুল নামের এক শ্রমিকের মোটরসাইকেল চেক করা হচ্ছিল। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক হয়। পরে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে পুলিশ-শ্রমিক উভয় আহত হন।
গভীর রাতে ২১ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি তালেব মোল্লার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। তাঁকে না পেয়ে ছেলে তারেক, কিশোর নাতি হৃদয় হাওলাদার এবং ওবায়দুলের ভাই শহিদুল হাওলাদারকে আটক করে। এ ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক এবাদ আলী মামলা করেন। মামলায় তারেককে ১ নম্বর, নাতিকে ৩ নম্বর এবং তালেবকে ৫ নম্বর আসামি করা হয়। ৬ এপ্রিল জামিন পেয়েছেন তারেক ও হৃদয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৪ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে মামুর মাজারে মোটরসাইকেল চেক করা হচ্ছিল। অজ্ঞাতনামা তিন আসামি মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। পরে তারা অন্যান্য আসামিকে সঙ্গে নিয়ে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে চায়। বাধা দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। দেশি অস্ত্র নিয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেয়।
তারেক বলেন, ‘গভীর রাতে হঠাৎ আমাদের বাড়িতে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করে। আমাকে ও ছোট ভাগনেকে ঘুম থেকে তুলে মারধর শুরু করে। এর মধ্যে সেখানে প্রবেশ করেন সদর থানার দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা নান্নু মণ্ডল। তিনি অন্যদের বলেন, এ তো সমন্বয়ক। এর পর ভাগনেকে রেখে সবাই আমাকে পেটানো শুরু করেন।’
শরীরের এক পাশে দগদগে ক্ষত দেখিয়ে বলেন, ‘ঘাটে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় বাবাকে খুঁজতে এসেছিল পুলিশ। তাঁকে না পেয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যায়।’
গতকাল ঘাট এলাকায় গেলে শ্রমিকরা জানান, তালেব মোল্লার ছেলে-নাতি কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
সেই মোটরসাইকেলের মালিক ওবায়দুল হাওলাদার বলেন, ‘ওই দিন তারেক, হৃদয় কেউই মারামারিতে ছিল না।’
মামলার বাদী ও গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এবাদ আলী বলেন, ‘নৌবাহিনী সদস্যরা ধরার পর ওই সময় সে স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছে মারামারিতে ছিল। আমাদের দেশের নিয়ম তো এমনই, পরে অস্বীকার করে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর সভাপতি আল শাহরিয়ার বলেন, ‘এ নির্যাতনে জড়িত সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে উপপরিদর্শক নান্নু মণ্ডল বলেন, ‘অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিল নৌবাহিনী। মামলা করেছে ডিবি। আমি তারেককে চিনি না।’
সচেতন নাগরিক কমিটি খুলনার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, একজনের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা ফৌজদারি অপরাধ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমন বয়ক সমন বয়ক

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ