ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পুনর্বহালের জন্য ভারত সরকারের কাছে আপাতত অনুরোধ করবে না বাংলাদেশ। এ সুবিধা বাতিলের কারণে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর হয়ে এয়ার কার্গোর মাধ্যমে রপ্তানির জন্য তৈরি পোশাকের ট্রাক তাদের দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না ভারত। এতে উদ্বিগ্ন রপ্তানিকারকরা। এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য যায় ৩৬ দেশে।

এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কোনো আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়নি। তবে এ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এ ছাড়া বাণিজ্য সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। 

গতকাল সচিবালয়ে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, হঠাৎ ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করেছে ভারত। তবে এতে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। বুধবার বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে ক্রেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংকট কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নিজস্ব সক্ষমতায় প্রতিযোগিতায় যেন কোনো ঘাটতি না হয়, সেটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগাযোগে যেন কোনো ঘাটতি না হয়, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে– এ বিষয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সব বলা যাচ্ছে না। প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রতিবন্ধকতাগুলো বিশেষ করে কাঠামোগত ও খরচের বিষয়গুলো সমন্বয় করে সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে। 

এটা নিয়ে বাংলাদেশ ভারতকে কোনো চিঠি দেবে কিনা– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই মুহূর্তে বিবেচনা করছি না। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধায় কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়– জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমাদের এখান থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টনের মতো পণ্য সড়কপথে গিয়ে ভারতের বিভিন্ন বন্দর বিশেষ করে দিল্লি, কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি হতো। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ধরনের দাবি উঠেছে– বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাল্টা ট্রানজিট বাতিল করা যায় কিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমার বিষয় না। আমার বিষয় হচ্ছে ব্যবসায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান সমকালকে বলেন, যেসব দেশে বাংলাদেশি পণ্য বেশি রপ্তানি হয়, তার অনেক ক্ষেত্রেই ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট নেই। বিশেষ করে নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস বা জার্মানিতে সরাসরি ফ্লাইট নেই। এর বাইরে অনেক এলাকায় সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইট থাকলেও কোনো পণ্যবাহী কার্গো যাতায়াত করে না। তাই আমাদের নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে যাত্রীবাহী প্লেনের ওপর ভরসা করতে হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশি যাত্রীবাহী ফ্লাইটে পণ্য পাঠানোর সুযোগ অনেক কম। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের ভারত, দুবাইসহ অন্যান্য দেশের ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্যবাহী কার্গোতে জার্মানি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে পোশাক পাঠানো হয়। এ কারণে অন্য কোনো দেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নিতেই হয়। এর কোনো বিকল্প নেই।   

তিনি বলেন, ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে এসব গন্তব্যে প্রতিদিন প্রচুর যাত্রীবাহী ফ্লাইট রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের অনেক বিশেষ কার্গো ফ্লাইটও রয়েছে। অন্যান্য দেশের কার্গো বিমানও ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দর ব্যবহার করে। তাই বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশের পরিবর্তে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে কার্গোতে পণ্য পরিবর্তন তুলনামূলক সহজ ও ব্যয়সাশ্রয়ী। ট্রাকে স্থলবন্দর দিয়ে কলকাতা বা দিল্লি বিমানবন্দর পর্যন্ত পণ্য নিয়ে যাওয়া যায়। তাই সময় ও খরচ দুটিই কম হয়। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় আমাদের উদ্যোক্তাদের অপশন কমে গেল। এর ফলে বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সময়ও বেশি লাগবে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ অন্য দেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে। তা ছাড়া আমরা ভারতের বড় ক্রেতা দেশ। আশা করি, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবে দেশটির সরকার।  

পণ্যবাহী ট্রাক ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত

বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের পর বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। পেট্রাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কার্পাস (গেট পাস) না দেওয়ায় ভারতে প্রবেশ করতে পারেনি। 

কাস্টমস ও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা ডেনিমস, কারুনি নিট কম্পোজিট, গ্লোবাস গার্মেন্ট, বিজিএস লিমিটেড, ইউনিভার্সেল মিউজিক স্পেনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ট্রাক গত দু’দিনে ভারতে প্রবেশ করতে পারেনি। 

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের কার্গো সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাকিব বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার এসব পণ্য পেট্রাপোল বন্দর হয়ে কলকাতার দমদম এয়ারপোর্ট ব্যবহার করে স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছিল। এসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে রপ্তানি হলে পরিবহন ব্যয় বেশি পড়ে এবং ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় খরচ কম পড়ে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় পণ্য যায় ৩৬ দেশে

বিজিএমইএর হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরে জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় ৪৬ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। এ পদ্ধতিতে বিশ্বের ৩৬টি দেশে পণ্য রপ্তানি হয়। দেশগুলো হচ্ছে– যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, চিলি, চীন, কলম্বিয়া, জার্মানি, ডেনমার্ক, ইকুয়েডর, স্পেন, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, নেপাল, ভুটান, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সার্বিয়া, রাশিয়া, সুইডেন, তাইওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র ব যবহ র কর উপদ ষ ট ফ ল ইট আম দ র ব যবস কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

এসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ছয় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্য থেকে পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশের (৪৮১) বিয়ে হয়ে গেছে।

বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

উদ্বেগের বিষয় হলো অনুপস্থিত ওই সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের প্রায় ৫১ শতাংশ আর পড়াশোনা করবে না। বাকিরা বলেছে, পরবর্তী বছরে পরীক্ষা দেবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের অধীন বিদ্যালয়গুলো থেকে এসব তথ্য পেয়েছে। এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

সারা দেশে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় এক লাখ কম ছিল। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে।

বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

আবার এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসব পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।

প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু কারণ জানা হয় না। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা অনুপস্থিতির প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ জন্য অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। অনুপস্থিতির কারণ জানার জন্য পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকের সঙ্গে সশরীর বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা এবং কোন কোন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত, তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকা বোর্ড।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড। তার ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেও পরীক্ষা দেয়নি।

দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী তথ্য পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের। ২৩ শতাংশ মানবিক বিভাগের ও ১৭ শতাংশ বিজ্ঞান বিভাগের। সাধারণত বিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার কম।

অনুপস্থিত থাকাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। উল্লেখ্য, আগের বছর অকৃতকার্য বা দু–এককটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে যারা এবার পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের অনিয়মিত পরীক্ষার্থী বলা হয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড।

ঢাকা বোর্ডের তথ্য বলছে, গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরাই বেশি অনুপস্থিত থাকে। তথ্য প্রাপ্ত ১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থী। প্রায় ২৪ শতাংশ শহর এলাকার। সমতল এলাকায় মোট পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় অনুপস্থিতিও সেখানে বেশি।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন, যাতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

যেসব কারণে অনুপস্থিতি

যেসব কারণে পরীক্ষার্থীরা অনুপস্থিত ছিল, সেগুলোও জানার চেষ্টা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে (১ হাজার ২০৩ জন), তাদের প্রায় ৪০ শতাংশের বিয়ে হয়েছে।

দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কতজন মেয়ে এবং কতজন ছেলে, তা উল্লেখ করা হবে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২১ জন (প্রায় ২ শতাংশ) মেয়ে পরীক্ষার্থী গর্ভধারণের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।

আইনানুযায়ী, বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছরের নিচে বিয়ে হলে সেটিকে বাল্যবিবাহ বলা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স সাধারণত ১৮ বছরের নিচে হয়। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে।

নিজের অসুস্থতার জন্য ২৪ শতাংশের (১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে) বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আর প্রস্তুতি ভালো না থাকার কারণে অনুপস্থিত ছিল ১১ শতাংশের বেশি। দারিদ্র্যের কারণও উঠে এসেছে এ তথ্যে। ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা, মৃত্যুসহ অন্যান্য কারণে বাকিরা অনুপস্থিত ছিল।

এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে। এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণের কথা বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এখন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বড় অংশেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ার তথ্য পেল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী‘সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে’

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত বেশি বাল্যবিবাহ নেই।

জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা। গত মঙ্গলবার ইউএনএফপিএর বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫–বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’ তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের পেছনে অসচ্ছলতা একটি বড় কারণ। এখনো দেখা যায়, অনেক অভিভাবক মেয়েদের জন্য বেশি ব্যয় করার চেয়ে ছেলে সন্তানের পেছনে ব্যয় করাকে বেশি প্রাধান্য দেন। আবার নিরাপত্তাহীনতাও মেয়েদের বাল্যবিবাহের একটি অন্যতম কারণ।

বাল্যবিবাহ রোধে সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ