আশা জাগানো উদ্যোগ, বাধাগুলো দূর হোক
Published: 11th, April 2025 GMT
যখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘ঝোড়ো হাওয়া’ বইছে, তখন বিনিয়োগ সম্মেলনটি নতুন করে আশার আলো দেখানোর কথাই বলেছে। চার দিনব্যাপী সম্মেলনের তৃতীয় দিনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ীরা বিশ্বকে বদলে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেদের যুক্ত করতে পারেন।
গত সোমবার স্থানীয় একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন–২০২৫ শুরু হয় ও বৃহস্পতিবার শেষ হয়। এতে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ৫০টি দেশের ৫৫০ জন বিনিয়োগকারী যোগ দেন বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন। অতীতে বাংলাদেশে এ রকম সম্মেলন হলেও খুব বেশি সুফল পাওয়া যায়নি। এবারের সম্মেলনের ফল ভবিষ্যতেই জানা যাবে।
সম্মেলনে চারটি দেশি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে বিকাশ লিমিটেড, ফেব্রিক লাগবে লিমিটেড, ওয়ালটন ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসকে পুরস্কৃত করা হয়। এ ছাড়া কোরীয় বিনিয়োগকারী ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে দেওয়া হয় সম্মানসূচক নাগরিত্ব, যিনি বাংলাদেশে ৪৫ বছর ধরে ব্যবসা করছেন, তাঁর ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৭০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। এটি নিশ্চয়ই অন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
বাংলাদেশের মতো অস্থির রাজনীতির দেশে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ থাকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগ নীতিও পরিবর্তন হয়ে যায় কি না। এ কারণে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সম্মেলনে তিনটি রাজনৈতিক দল—বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এসব দলের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি ব্রশিউর, নথি ও উপহার দিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ সত্ত্বেও বিনিয়োগ বাড়ানো, পরিবেশ উন্নত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি একমত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনটি দলের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা মিটিং করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীরা অবিলম্বে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান, তঁারা এই অঞ্চল দেখে খুবই খুশি হয়েছেন। একটি সুইডিশ কোম্পানি জমি নিতে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীরা আশাবাদের পাশাপাশি কিছু বাধার কথাও তুলে ধরেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সরকারি সেবার মান, ইউটিলিটি সেবার অপ্রতুলতা, দুর্নীতি ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলোর বোঝাপড়ায় ঘাটতি। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) পরিদর্শনকালে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নীতি অপরিবর্তিত রাখা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার পাশাপাশি শুল্ক-কর ও গ্যাস-বিদ্যুতের মতো পরিষেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, অতীতের ইতিহাসের কারণে তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে যে নেতিবাচক ধারণা আছে, তা ভেঙে দেওয়াই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। একটি সম্মেলনের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে, সেটা ভাবা ঠিক নয়।
তাঁর বক্তব্য অযৌক্তিক নয়। একটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগের সব সমস্যা দূর হবে, তা–ও মনে করি না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, সেটা বহু পুরোনো। অতীতের সব সরকারই বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, নানা রকম উদ্যোগ আয়োজনের কথা শুনিয়েছেন। তারপরও সমস্যার সুরাহা হলো না কেন?
যদি আমরা ধরেও নিই যে সরকারের পরিবর্তনের পর বিনিয়োগ নীতির হেরফের হবে না। কিন্তু অবকাঠামোগত সমস্যা ও গ্যাস, বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনে সরকারের কী পরিকল্পনা আছে, সেটাও বিনিয়োগকারীরা জানতে চাইবেন। বিগত সরকারের আমলে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের আওয়াজ দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে উৎপাদনে গেছে সামান্য কয়েকটি। বাকিগুলো সচল করার বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।
উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।
ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।
এএএম//