রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামীকাল শুরু হচ্ছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত 'বি' ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এবারের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা রাবি ক্যাম্পাস ছাড়াও চারটি বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য হেল্প ডেস্ক, অভিভাবকদের বসার জন্য টেন্ট, প্রক্টরিয়াল বডি, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও প্রক্সিকাণ্ড এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি-পরীক্ষা 'এ', 'বি' ও 'সি' এই তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। 'এ' ইউনিটে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ২৭টি বিভাগসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত আছে। 'বি' ইউনিটে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ৬টি বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এবং 'সি' ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত আছে। আগামীকাল ১২ এপ্রিল 'বি' ইউনিট, ১৯ এপ্রিল 'এ' ইউনিট ও ২৬ এপ্রিল 'সি' ইউনিটের ভর্তি-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিভাগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুর অঞ্চলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দ্য মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
কোন কেন্দ্রে কতজন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষায় বসবেন?
মোট তিন ইউনিট মিলে রাবি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসবেন ৭২ হাজার ৩৫ জন ভর্তিচ্ছু; ঢাবি কেন্দ্রে ৮২ হাজার ৭৪১ জন; জবি কেন্দ্রে ১০ হাজার জন; বেরোবিসহ রংপুরের অন্য দুটি ভেন্যুতে ৩৫ হাজার ৬৩০ জন; খুবি কেন্দ্রে ২৩ হাজার ১৮ জন এবং চবি কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৯৯১ জন পরীক্ষায় বসবেন।
পরীক্ষার সময়সূচি
ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিন ১২ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত 'বি' ইউনিট, দ্বিতীয় দিন ১৯ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে ১২টা ও দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত 'এ' ইউনিট এবং তৃতীয় দিন ২৬ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে ১২টা ও দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত 'সি' ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি পরীক্ষা 'এমসিকিউ' পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে।
যেসব নির্দেশনা মানতে হবে
১) অনলাইনে প্রদত্ত দুই পৃষ্ঠার (প্রথম পৃষ্ঠা পরীক্ষার্থীর এবং দ্বিতীয় পৃষ্ঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের কপি হিসেবে নির্ধারিত) প্রবেশপত্র অবশ্যই A4 সাইজের দুটি পৃথক অফসেট কাগজে কালার প্রিন্ট করতে হবে। পরীক্ষার সময় এই দুই পৃষ্ঠার প্রবেশপত্র ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
২) পরীক্ষা চলাকালে কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবেন না। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে।
৩) পরীক্ষা কক্ষে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস (মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, হেডফোন, মেমোরিযুক্ত ঘড়ি ইত্যাদি) সঙ্গে রাখা যাবে না।
এ ছাড়া প্রবেশপত্রের গায়ে উল্লিখিত নির্দেশনাবলি পূর্বেই ভালোভাবে লক্ষ্য করে সেগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ
ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রশাসন ইতোমধ্যে অন্তত ১২টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহহলো- বিভিন্ন পয়েন্টে ৬টি হেল্প ডেস্ক, অভিভাবকদের বসার জন্য ১১টি টেন্ট, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ২টি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটসহ ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট স্থানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা, ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২৫০ জন সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জার গাইড ও স্টুডেন্টস কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ১০০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
ভর্তি পরীক্ষার তিনদিনে ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে টহল; ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল বক্স স্থাপন এবং ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রক্সিকাণ্ডের সাথে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্টর অফিস কর্তৃক চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ, খাবারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, অভিভাবকদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।
ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে ক্যাম্পাসে চলাচলকারী ও ভর্তিচ্ছুদের প্রতি নির্দেশনা
সকাল ১০টার ভেতর একাডেমিক ভবনগুলোর গেট খোলা হবে। কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করা যানবাহন প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল-বেগম খালেদা জিয়া হল-স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন-তুঁত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে, সকাল সাড়ে ৯টার পরে চারুকলা অনুষদ ফটক দিয়ে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। শারীরিক প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা সব রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন। সকাল সকাল সাড়ে ৯টার পর একাডেমিক ভবনগুলোর দিকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটর সাইকেল ও অটো রিকশাসহ কোনোপ্রকার যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। তবে, পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত গাড়িসমূহ এ নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র থ পর ক ষ য় ভর ত চ ছ র পর ক ষ ব যবস থ ইউন ট র পদক ষ প ট র পর র ভর ত র জন য সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।