মঞ্চ বাঁধা শেষ। রমনার বটমূলে পূর্ব–পশ্চিমে অর্ধবৃত্তাকারে ৭২ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মোট পাঁচটি ধাপ রয়েছে মঞ্চে। সেখানে প্রায় দেড় শ কণ্ঠ ও যন্ত্রশিল্পী উপবেশন করে সুরবাণীতে নতুন বছরকে আবাহন জানাবেন সোমবার পয়লা বৈশাখ প্রভাতে।

দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংস্থা ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার এই বটমূলে পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এবারেও ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করা হবে এখান থেকেই। সে জন্য গত তিন মাস থেকে ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে চলছে গানের মহড়া। আর ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে রমনার বটমূলে মঞ্চ তৈরির কাজ।

গতকাল শনিবার বিকেলে বটমূলে গিয়ে দেখা গেল লোহার পাইপের কাঠামোর ওপর পাটাতন বিছিয়ে পাঁচ ধাপের মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। কাজের তত্ত্বাবধান করছিলেন ছায়ানটের ভবন সমন্বয়ক মামুনুর রশীদ। তিনি জানালেন, ৮ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ চলছে। মঞ্চের সামনে দর্শকদের বসার জায়গাটি বাঁশ-কাঠ দিয়ে ঘেরাও করা হয়েছে। গতকাল থেকে মঞ্চের দুই পাশে সাউন্ডবক্স, মাইক্রোফোন, শব্দনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থাপন—এসবের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর কিছু রঙের কাজ করা হবে। এবার পুরুষ শিল্পীদের পোশাক হবে মেরুন রঙের পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা। নারীদের মেরুন পাড়ের অফ হোয়াইট শাড়ি। এই মেরুন রঙের সঙ্গেই মানানসই রং করা হবে মঞ্চের। প্রতিবছর মঞ্চের আকৃতি একই রকম থাকে, শুধু শিল্পীদের পোশাকের রঙের সঙ্গে মানিয়ে মঞ্চে রঙের পরিবর্তন করা হয়। গতবারের রং ছিল হালকা সবুজ।

আয়োজকেরা জানালেন, আজ রোববার দুপুরের মধ্যেই সব কাজ শেষ করে ফেলা হবে। বেলা তিনটায় শিল্পীরা মঞ্চে এসে বসবেন। শুরু হবে চূড়ান্ত মহড়া। গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে ছায়ানট জানিয়েছে, এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল বার্তা হবে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। আলো, প্রকৃতি, মানুষ ও দেশপ্রেমের গান দিয়ে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠান।

সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। এবার মোট ২৪টি পরিবেশনা হবে। এর মধ্যে ৯টি সম্মেলক গান, ১২টি একক কণ্ঠের গান ও ৩টি পাঠ থাকবে। নববর্ষের কথন পাঠ করবেন নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। শেষ হবে জাতীয় সংগীত দিয়ে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ছ য় নট বটম ল

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ