৩০ দিনের বেশি আমেরিকায় থাকলে নাম নথিভুক্ত না করলে জরিমানা
Published: 13th, April 2025 GMT
বৈধ ভিসা থাকলেও আমেরিকায় বাস করতে গেলে বিদেশি নাগরিকদের বিশেষ একটি নিয়ম মানতে হবে বলে জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনস্থ হোমল্যান্ড নিরাপত্তা বিভাগের হুঁশিয়ারি, যে বিদেশি নাগিরকেরা ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আমেরিকায় থাকছেন, তাদের অবশ্যই সরকারের কাছে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। না করলে দিতে হবে জরিমানা। এমনকি, জেলও হতে পারে তাদের। যারা এইচ-১বি বা পড়ুয়া ভিসায় আমেরিকায় রয়েছেন, তাদেরও এই নিয়ম মানতে হবে।
নিয়ম না মানলে সেই বিদেশি নাগরিককে দেশ থেকে বার করে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার আমেরিকায় ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হোমল্যান্ড নিরাপত্তা দপ্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পোস্ট দিয়ে লিখেছে, ‘যে বিদেশি নাগরিকেরা ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আমেরিকায় রয়েছেন, তাদের সরকারের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে। না করলে জরিমানা এমনকি জেলবাস বা দুইই হতে পারে।’ এই পোস্টে ট্রাম্পের দপ্তরকে ট্যাগ করেছে প্রশাসন। তাদের আরও হুঁশিয়ারি, এই নিয়ম না মেনে চললে দেশ থেকে বার করে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকায় ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ হতে পারে।
যারা আমেরিকায় এইচ-১বি ভিসা বা পড়ুয়া ভিসায় রয়েছেন, তাদের উপরও এই নিয়মের প্রভাব পড়বে। রিপোর্ট বলছে, আমেরিকায় অভিবাসীদের সন্তানের বয়স ১৪ পার হলে, তাদের নতুন করে সরকারি দফতরে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। নতুন করে আঙুলের ছাপ দিতে হবে। ১৪তম জন্মদিনের ৩০ দিনের মধ্যে এই কাজ করতে হবে তাদের। হোমল্যান্ড নিরাপত্তা বিভাগের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, অভিবাসীদের সন্তানের বয়স ১৮ পার হলে, তাদের সব সময় আমেরিকায় বসবাসের বৈধ নথি সঙ্গে রাখতে হবে।
হোমল্যান্ড নিরাপত্তা বিভাগের সচিব ক্রিস্টি নোয়েম বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমার একটি স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। যারা এ দেশে অবৈধ ভাবে রয়েছেন, তারা দেশে ছেড়ে চলে যান। এখনই দেশ ছেড়ে চলে গেলে আবার ফেরার সুযোগ পেতে পারেন। আমেরিকায় বাঁচার স্বপ্নপূরণ হতে পারে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম র ক ৩০ দ ন র আম র ক য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি