সুদের টাকার জন্য সালিসে নারীকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 13th, April 2025 GMT
কুমিল্লার দেবীদ্বারে সুদে নেওয়া টাকা সময়মতো ফেরত না দেওয়ায় এক নারীকে সালিস বৈঠকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় আজ রোববার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে উপজেলার ভানি ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামে ওই নারীকে মারধরের ঘটনা ঘটে। তবে রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্য, সুদে নেওয়া টাকার বদলে তাঁর বসতভিটা লিখে দিতে বলেন ওই বিএনপি নেতারা। এর প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর করা হয়েছে।
মামলায় ভানি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) আবদুল আউয়ালকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আউয়াল নিজেই ওই নারীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়া মামলায় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির ফরাজিসহ আরও ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। মনির ফরাজি কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি ওই সালিসে উপস্থিত ছিলেন।
এসব বিষয়ে জানতে ভানি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়ালের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, থানায় মামলা হওয়ার পর তাঁরা এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন।
রোববার রাতে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, নারীকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে রোববার সকালে ভুক্তভোগীকে থানায় ডেকে আনা হয়। পরে তিনি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা গ্রহণ করে আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলায় ওই নারী সুদের বিনিময়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। দিতে দেরি হওয়ায় সেই টাকার জন্য বসা সালিসে তাঁকে মারধর করা হয়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভানি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির ফরাজির উপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল ও তাঁর অনুসারীরা প্রথমে থাপ্পড় দেন ওই নারীকে। পরে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।
ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম হাসিনা আক্তার। তিনি ভানি ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের প্রয়াত আয়েব আলীর মেয়ে। হাসিনার স্বামীর বাড়ি চান্দিনা উপজেলায়। স্বামীর বাড়িতে জায়গা–সম্পত্তি না থাকায় স্বামী–সন্তানদের নিয়ে তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন।
ভুক্তভোগী ওই নারী প্রথম আলোকে বলেন, আলী আশ্রাফ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদে টাকা নেন তিনি। সেই টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তাঁরা সালিস বসান। ওই টাকার জন্য বসতভিটা লিখে দিতে মনির ফরাজি ও আবদুল আউয়াল চাপ দেন। শনিবার সকালে বাড়ি থেকে টানাহেঁচড়া করে তাঁকে দোকানের সামনে নিয়ে যান।
এর আগেও তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে হাসিনা আক্তার বলেন, ‘বসতভিটা লিখে দিতে বলায় সালিসের সময় আমি রাগ করে বলেছি, ‘‘আউয়াল মেম্বার ৫০ হাজার টাকা ঘুষ খেয়ে আমার সঙ্গে এমন করছে।’’ এ কথা বলতেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে মারতে শুরু করেন তাঁরা। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই।’
এ প্রসঙ্গে রোববার রাতে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, এটা দলীয় কোনো বিষয় নয়। টাকা নিয়ে স্থানীয় একটি সালিস বৈঠকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছেন। বিষয়টি নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে থানার ওসিকে ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করার জন্য বলেছেন। আবদুল আউয়াল স্থানীয় মেম্বার হিসেবে সালিসে ছিলেন। বিষয়টির খোঁজখবর রাখছেন তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল আউয় ল ম রধর র র জন য ওই ন র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।