কুমিল্লার দেবীদ্বারে সুদে নেওয়া টাকা সময়মতো ফেরত না দেওয়ায় এক নারীকে সালিস বৈঠকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় আজ রোববার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

এর আগে শনিবার সকালে উপজেলার ভানি ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামে ওই নারীকে মারধরের ঘটনা ঘটে। তবে রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্য, সুদে নেওয়া টাকার বদলে তাঁর বসতভিটা লিখে দিতে বলেন ওই বিএনপি নেতারা। এর প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর করা হয়েছে।

মামলায় ভানি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) আবদুল আউয়ালকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আউয়াল নিজেই ওই নারীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়া মামলায় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির ফরাজিসহ আরও ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। মনির ফরাজি কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি ওই সালিসে উপস্থিত ছিলেন।

এসব বিষয়ে জানতে ভানি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়ালের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, থানায় মামলা হওয়ার পর তাঁরা এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন।

রোববার রাতে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, নারীকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে রোববার সকালে ভুক্তভোগীকে থানায় ডেকে আনা হয়। পরে তিনি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা গ্রহণ করে আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলায় ওই নারী সুদের বিনিময়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। দিতে দেরি হওয়ায় সেই টাকার জন্য বসা সালিসে তাঁকে মারধর করা হয়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভানি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির ফরাজির উপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল ও তাঁর অনুসারীরা প্রথমে থাপ্পড় দেন ওই নারীকে। পরে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।

ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম হাসিনা আক্তার। তিনি ভানি ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের প্রয়াত আয়েব আলীর মেয়ে। হাসিনার স্বামীর বাড়ি চান্দিনা উপজেলায়। স্বামীর বাড়িতে জায়গা–সম্পত্তি না থাকায় স্বামী–সন্তানদের নিয়ে তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন।
ভুক্তভোগী ওই নারী প্রথম আলোকে বলেন, আলী আশ্রাফ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদে টাকা নেন তিনি। সেই টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তাঁরা সালিস বসান। ওই টাকার জন্য বসতভিটা লিখে দিতে মনির ফরাজি ও আবদুল আউয়াল চাপ দেন। শনিবার সকালে বাড়ি থেকে টানাহেঁচড়া করে তাঁকে দোকানের সামনে নিয়ে যান।

এর আগেও তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে হাসিনা আক্তার বলেন, ‘বসতভিটা লিখে দিতে বলায় সালিসের সময় আমি রাগ করে বলেছি, ‘‘আউয়াল মেম্বার ৫০ হাজার টাকা ঘুষ খেয়ে আমার সঙ্গে এমন করছে।’’ এ কথা বলতেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে মারতে শুরু করেন তাঁরা। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই।’

এ প্রসঙ্গে রোববার রাতে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, এটা দলীয় কোনো বিষয় নয়। টাকা নিয়ে স্থানীয় একটি সালিস বৈঠকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছেন। বিষয়টি নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে থানার ওসিকে ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করার জন্য বলেছেন। আবদুল আউয়াল স্থানীয় মেম্বার হিসেবে সালিসে ছিলেন। বিষয়টির খোঁজখবর রাখছেন তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল আউয় ল ম রধর র র জন য ওই ন র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।

আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।

রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।

কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?

কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।

রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।

রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।

এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।

রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ