যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে সমাবেশের আয়োজন করেন নির্দলীয় সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ এবং তাঁর প্রশাসনের অধীনে রাজনৈতিক ও করপোরেট অলিগার্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন হাজার হাজার মানুষ। স্যান্ডার্সের ‘অলিগার্কবিরোধী লড়াই’ নিয়ে সফরের অংশ হিসেবে শনিবার আয়োজিত এ সমাবেশে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ। স্যান্ডার্স বলেছেন, ট্রাম্প দেশকে একটি কর্তৃত্ববাদী সমাজের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আর এওসি নামে বেশি পরিচিত ওকাসিও-কর্টেজ ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিপর্যয়কর পরিকল্পনা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং বাজার কারসাজির জন্য করা হয়েছে। 

এদিকে চীনা পণ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা সম্পূরক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটনের ভুল শুধরে নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন চীনা কর্মকর্তারা। 

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, দুই মাস ধরে চলমান স্যান্ডার্সের ‘ফাইটিং অলিগার্ক’ সফরটি ট্রাম্প প্রশাসন এবং তাঁর নীতির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ। এই আন্দোলন প্রচুর জনসমাগম ঘটিয়েছে। দলটি তিন সপ্তাহ আগে অ্যারিজোনায় সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সমাবেশের রেকর্ড করেছিল। কলোরাডোর ডেনভারে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন, যা ৮৩ বছর বয়সী স্যান্ডার্সের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ জনসমাগম। শনিবার লস অ্যাঞ্জেলেসে জনসমাগমের আরেকটি রেকর্ড তৈরি হয়েছে। সেখানে কমপক্ষে ৩৬ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সস্তা ভোগ্যপণ্যের এক যুগের সমাপ্তি শেষ হতে যাচ্ছে। চার দশক ধরে মার্কিন নাগরিকরা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ক্রিসমাসের অলংকার পর্যন্ত সবকিছুর জন্য চীনা কারখানার ওপর নির্ভর করে আসছে। হঠাৎ দেশটির ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক চীনা পণ্যকে অনেক দামি করে তুলেছে। পাল্টা হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্য আমদানিতে ১২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। 

আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি মুডিস গতকাল জানিয়েছে, মার্কিন বাণিজ্যনীতি ঘিরে অনিশ্চয়তা ব্যবসায়িক আস্থা ও ভোক্তাদের মনোভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটি এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। 

ট্রাম্প চীন বাদে পাল্টা শুল্ক আরোপের মেয়াদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। যদিও ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক অব্যাহত রয়েছে।  

বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক্স ও চিপ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই দেওয়ার ঘোষণা আসার পর এক প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রোববার চীন শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের ওই আহ্বান জানিয়েছে। চীনা কর্মকর্তারা বলেন, শুল্ক প্রত্যাহার করে ওয়াশিংটনের উচিত ভুল শুধরে নেওয়া। 

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘সম্পূরক শুল্কের ভুল চর্চা পুরোপুরি বন্ধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার পথে ফিরে আসতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ 

এর আগে মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা কার্যালয় এক নোটিশে জানায়, ট্রাম্প যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন তা থেকে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, মেমোরি চিপ ও অন্যান্য কিছু পণ্যকে ছাড় দেওয়া হবে। গত শনিবার রাতে মিয়ামি সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এই ছাড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এসব পণ্যে ছাড় খুবই ছোট পদক্ষেপ। চীন এর প্রভাব পর্যালোচনা করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মৃত্যু যেখানে রমরমা ব্যবসা হয়ে উঠছে

দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দর নগরী বুসানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে কফিন। দেশটিতে ভবিষ্যতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালকদের প্রশিক্ষণের জন্য এগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ফলে মৃত্যুর ব্যবসায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক লোক কাজ খুঁজে পাচ্ছে। কারণ দেশটিতে জন্মহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ৫০ বা তার বেশি।

বুসান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাপড়ে সাবধানে একটি পুতুল জড়িয়ে, কাপড়টিকে আসল চামড়ার উপর মসৃণ করে, তারপর আলতো করে কফিনে নামিয়ে দিচ্ছিল।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রশাসনের শিক্ষার্থী ২৭ বছর বয়সী জ্যাং জিন-ইয়ং বলেন, “আমাদের সমাজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে, আমি ভেবেছিলাম এই ধরণের কাজের চাহিদা আরো বাড়বে।”

আরেক ছাত্র, ২৩ বছর বয়সী ইম সে-জিন তার দাদীর মৃত্যুর পর মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলেন, “তার (দাদীর) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমি দেখেছি পরিচালকরা তাকে শেষ বিদায়ের জন্য কতটা সুন্দরভাবে প্রস্তুত করেছেন। আমি গভীর কৃতজ্ঞ বোধ করছি।”

দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ক্রমশ একাকী জীবনযাপন করছে এবং নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যাচ্ছে। এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির প্রায় ৪২ শতাংশ এখন একাকী জীবনযাপন করে।

এই পরিসংখ্যান দেশটিতে একটি নতুন পেশার আবির্ভাবকে প্রতিফলিত করছে।

উন্নত দেশগুলির মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। এই ‘একাকী মৃত্যু’-তে সেইসব ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত যারা আত্মহত্যা করেছেন।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবসায়ের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি কিম ডু-নিয়ন বলেন, তার ২০ বছর বয়সী ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছে।

তিনি বলেন, “মানুষ যখন একসাথে থাকে, তখন তারা জিনিসপত্র ভাগ করে নেয়... এমনকি যদি একজন ব্যক্তি মারা যায়, সেই জিনিসপত্রগুলি থেকে যায়। কিন্তু যখন কেউ একা মারা যায়, তখন সবকিছু পরিষ্কার করতে হবে।”

তবে নিজের পেশা নিয়ে ভয়ও পান কিম।

তিনি বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছি। আপনি যতই প্রস্তুতি নিন না কেন, একজন মৃত ব্যক্তির মুখোমুখি হওয়া ভীতিকর।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৃত্যু যেখানে রমরমা ব্যবসা হয়ে উঠছে