ট্রাম্পকে ইউক্রেন সফরের আহ্বান জেলেনস্কির
Published: 14th, April 2025 GMT
যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো চুক্তির আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউক্রেন সফরের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইউক্রেনের সুমি শহরে গতকাল রোববার রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৪ জন নিহত হওয়ার আগে সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে।
সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্তের আগে, যেকোনো ধরনের সমঝোতার আগে অনুগ্রহ করে এখানের মানুষ, বেসামরিক লোকজন, যোদ্ধা, হাসপাতাল, গির্জা ও শিশুদের দেখে যান, যাঁদের হয় হত্যা করা হয়েছে, না হয় ধ্বংস করা হয়েছে।’
রোববারের হামলা বিষয়ে রাশিয়ার ভাষ্য, তারা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোয় হামলা চালিয়েছে। হামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ট্রাম্পের কাছেও। জবাবে তিনি ওই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ-ও বলেছেন, তাঁকে ‘জানানো হয়েছে-তারা (রাশিয়া) একটি ভুল করেছে।’ যদিও নিজের এ বক্তব্য নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে থেকেই সোচ্চার ছিলেন ট্রাম্প। গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পর এ নিয়ে আরও তৎপর হয়েছেন তিনি। যুদ্ধ থামানোর জন্য ইউক্রেনে বিশেষ দূত হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেইথ কেলগকে নিয়োগ দিয়েছেন। সুমি শহরে রাশিয়ার হামলার পর কেলগ বলেছেন, ওই হামলা ‘শিষ্টাচারের যেকোনো সীমা’ অতিক্রম করেছে।
এদিকে সুমিতে হামলার পর আজ সোমবার সকালে লুক্সেমবার্গে বৈঠকের কথা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের। ইউরোপীয় নেতারাও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এই হামলার মাধ্যমে ‘মানুষের জীবন, আন্তর্জাতিক আইন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে’ রাশিয়া অবজ্ঞা করেছে বলে উল্লেখ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
জার্মানির আসন্ন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘মারাত্মক যুদ্ধাপরাধের’ অভিযোগ এনেছেন। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, সুমিতে হামলা ‘যুদ্ধবিরতির রুশ সংস্করণকে তুলে ধরেছে।’ আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনৈতিক কাজা কালাস বলেছেন, এই হামলা রাশিয়ার ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের জন্য ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই পক্ষেই লাখো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য। এ ছাড়া জাতিসংঘের হিসাবে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী হিসেবে জীবন যাপন করছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।
গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।