মহাকাশ ভ্রমণ করে এলেন ছয় নারী। তাঁদের মধ্যে আছেন মার্কিন পপতারকা কেটি পেরি। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের তৈরি নিউ শেপার্ড মহাকাশযানে করে মহাকাশের নিম্ন কক্ষপথে ভ্রমণ করেন তাঁরা।

বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম টেক্সাসের ব্লু অরিজিনের উড্ডয়নক্ষেত্র থেকে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। কেটি পেরি ছাড়াও মহাকাশযানে ছিলেন জেফ বেজোসের বাগ্‌দত্তা লরেন সানচেজ, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের সাংবাদিক গেইল কিং, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশ প্রকৌশলী আয়েশা বোয়ে, নাগরিক অধিকারকর্মী আমান্ডা নুয়েন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান্ন ফ্লিন।

নিউ শেপার্ড মহাকাশযানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে প্রায় ১১ মিনিট সেখানে অবস্থান করে। এনএস-৩১ নামের এই মিশনকে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। কারণ, ১৯৬৩ সালে রাশিয়ার নারী নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভার একক মহাকাশযাত্রার পর এবারই প্রথম শুধু নারীদের নিয়ে মহাকাশে যায় কোনো মহাকাশযান। এরপর সফল অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরে আসেন তাঁরা।

ব্লু অরিজিন জানিয়েছে, মহাকাশ মিশনটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতসহ (স্টেম) গণমাধ্যমে নারীদের ক্যারিয়ার গঠনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে এই মিশন পরিচালনা করা হচ্ছে। এ যান ছিল স্বয়ংক্রিয়। এতে কোনো চালক ছিল না।

ব্লু অরিজিনের এই মহাকাশযান কারমান রেখায় নিয়ে যায় কেটি পেরিদের। কারমান রেখা হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মহাকাশের একটি সীমানা। মহাকাশে প্রায় ১১ মিনিট অবস্থানকালে ছয় নারী তাঁদের আসন থেকে উঠে চারপাশ দেখতে পারেন। এ ছাড়া ক্যাপসুলের বড় জানালা দিয়ে পৃথিবীর দৃশ্যও উপভোগ করেন তাঁরা।

মানুষ নিয়ে মহাকাশের নিম্ন কক্ষপথে এ নিয়ে ১১ বারের মতো মহাকাশযান পাঠাল ব্লু অরিজিন। মহাকাশে বাণিজ্যিকভাবে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিয়ে কয়েক বছর ধরেই কাজ করছে ব্লু অরিজিন। তবে এ ধরনের ভ্রমণে কত খরচ হয়, এটা নিয়ে প্রকাশ্যে এখনো কোনো তথ্য জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

মহাকাশ ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে কেটি পেরি বলেন, তিনি এখন জীবনের সঙ্গে অত্যন্ত সংযুক্ত এবং ভালোবাসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অনুভব করছেন। এ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি একটি গান লিখবেন। তিনি আরও বলেন, ‘এটি ছিল সর্বোচ্চ উচ্চতা। এটি অজানার কাছে আত্মসমর্পণ।’ এ যাত্রা অনেক বেশি উপভোগ করেছেন জানিয়ে কেটি পেরি আরও বলেন, এর চেয়ে ভালো কিছুর জন্য তিনি আর সুপারিশ করতে পারেন না।

এ যাত্রার অভিজ্ঞতা জানিয়ে লরেন সানচেজ বলেন, এত উচ্চতা থেকে পৃথিবীকে অনেক শান্ত দেখাচ্ছিল।

একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার নেতৃত্বের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত জ্যারেড আইজ্যাকম্যান ব্লু অরিজিন এবং ক্রুদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

‘অনুপ্রেরণা’

সম্প্রতি ফরাসি সাময়িকী অ্যালেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার কেটি পেরি বলেন, মেয়ে ডেইজির জন্য এই মহাকাশযাত্রার অংশ হয়েছেন তিনি। কেটি পেরি বলেন, ‘আমার মেয়ে যাতে কখনো মনে না করে যে স্বপ্নের কোনো সীমা আছে। তাকে এই অনুপ্রেরণা দিতেই আমি এই মহাকাশযাত্রার সঙ্গী হয়েছি।’

মহাকাশে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন মন্তব্য করে কেটি পেরি আরও বলেন, ‘যখন রকেটটি মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে, তখন তার (মেয়ে ডেইজি) চোখে কেমন অনুপ্রেরণা ও আলোর ঝলকানি তৈরি হয়, সেটা দেখার জন্য আমি ভীষণ উচ্ছ্বসিত।’

আরও পাঁচ নারীর সঙ্গে মহাকাশযাত্রা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পৃথক একটি ভিডিও পোস্ট করেন কেটি পেরি। সেখানে তিনি বলেন, মহাকাশে যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণে অংশ নিতে গিয়ে একটি বিষয় জেনে তিনি বিস্মিত হন। সেখানে কেটি পেরি জানতে পারেন, ক্যাপসুলটির নাম হবে টরটয়েস (কচ্ছপ)। এটির নকশা করা হয়েছে পাখার মতো করে। বিস্মিত হওয়ার কারণ বলতে গিয়ে কেটি পেরি জানান, জন্মের পর মা–বাবা তাঁর যে দুটি ডাকনাম রেখেছিলেন, তার একটি হলো টরটয়েস।

একই ভিডিওতে কেটি পেরি আরও বলেন, ‘এটা কোনো কাকতাল নয়। তবে এটা জানতে পেরে আমি ভীষণ উচ্ছ্বসিত হই। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন প র র জন য ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ