ইউএনওর সামনে কর্মচারীদের মারধর করলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা
Published: 15th, April 2025 GMT
দিনাজপুরের বিরামপুরে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান চলাকালে উপজেলা পরিষদের তিন কর্মচারীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের মুক্তমঞ্চে ঘটনাটি ঘটে। এসময় সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বিরামপুর থানার ওসি, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার বিষষটি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও নুজহাত তাসনীম আওন।
আরো পড়ুন:
শিশুকে ‘ধর্ষণ’, গণপিটুনি দিয়ে অভিযুক্তকে পুলিশে সোপর্দ
জামিন: জেল গেটে হামলার শিকার সাবেক এমপি আব্দুল আজিজ
আহতরা হলেন- উপজেলা পরিষদের অফিস সহায়ক এমদাদুল হক, আবু হোসেন, ইউএনও কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী মমিনুল ইসলাম ওরফে রনি। তাদের মধ্যে এমদাদুল হক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদের ভেতর মুক্তমঞ্চে চলছিল। উপজেলা পরিষদ ও ইউএনওর কয়েকজন কর্মচারী আমন্ত্রিত অতিথিদের পান্তা, মাছ, ভর্তা ও পানি বিতরণ করছিলেন। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের পৌর সদস্য সচিব আরিফুর রহমান রাসেল ও তার সহযোগীরা খাবার নিয়ে বাকবিতাণ্ড শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা সবার সামনে ওই তিন কর্মচারীকে মারধর করে আহত করেন।
ইউএনও কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী মমিনুল ইসলাম রনি বলেন, “সুন্দর পরিবেশে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছিল। অতিথিদের জন্য পান্তা উৎসব শুরু করার জন্য আমরা কয়েকজন নিয়োজিত ছিলাম। পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আরিফুর রহমান রাসেল নিজেই খাবার নিতে শুরু করেন। আমরা বাঁধা দিলে ওই নেতা ও তার সহযোগীরা আমাদের পিটিয়ে আহত করেন।”
অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আরিফুর রহমান রাসেল বলেন, “ভাই আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি। একটা চড় মেরেছি। খাবার বিতরণের অনিয়ম ও সিনিয়র নেতাদের অপমান করায় এমনটি হয়েছে। আমার ভুল হয়েছে।”
বিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর এলাহী চৌধুরী রুবেল বলেন, “এমন অনুষ্ঠানে এ ধরনের আচরণ করা মোটেও ঠিক হয়নি। এমন আচরণের পর আমি সেখান থেকে চলে আসি।”
জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিঞা মো.
বিরামপুর থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, “এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ দিলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিরামপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম আওন বলেন, “বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হাজার লোকের আয়োজন ছিল। এমন অনুষ্ঠানে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আহত তিন কর্মচারীকে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।”
ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর ইউএনও অন ষ ঠ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই ফেরত পেলো কর্তৃপক্ষ
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অভয়ারণ্য পাঠাগার থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া পাঁচ শতাধিক বই অবশেষে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাঠাগার থেকে লুট করা এসব বইয়ের মধ্যে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো বই পাওয়া যায়নি।
রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে বই লুট করা ব্যক্তিরা, পাঠাগার কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গণমাধ্যমে এসব নিয়ে আর কোনো খবর প্রচার করা যাবে না। সোমবার থেকে পাঠাগার যথারীতি খোলা থাকবে। ভুল বোঝাবুঝি থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে সবাই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন।
বৈঠকের বিষয়ে অভয়ারণ্য পাঠাগারের সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। যারা বই নিয়েছিল তারা আমাদের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। পাঠাগার একটি পবিত্র স্থান। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও ধর্মচর্চার জন্য পাঠাগারে সব ধরনের বইয়ের সমাহার থাকবে। তারা লুট হওয়া ৪ থেকে ৫ বস্তা বই ফেরত দিয়েছে।
বৈঠক শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহীন মাহমুদ বইগুলো পাঠাগারে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। এ সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পাঠাগারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও শাহিন মাহমুদ বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। সভায় উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে পাশাপাশি থেকে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পরে অভয়ারণ্য পাঠাগারে গিয়ে সকলের উপস্থিতিতে বইগুলো কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে ইউএনও মো. শাহীন মাহমুদ উভয় পক্ষকে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান। পরে পাঠাগারের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ কীভাবে বইগুলো পাঠাগার থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তার বর্ণনা তুলে ধরেন। পরে যেসব ব্যক্তি বই লুটে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের পক্ষ থেকে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের ধনবাড়ী উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন অভয়ারণ্য পাঠাগার নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোনো জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতিদ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন। অনেকদিন অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ভণ্ডামি করেছেন আপনারা। আর এই সুযোগ পাচ্ছেন না। কথা ক্লিয়ার।
তার ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার দিন রাত ৮টার দিকে খেলাফত মজলিসের যুব সংগঠনের ২০-২৫ জন নেতাকর্মীরা বাঁশহাটি এলাকায় অভয়ারণ্য পাঠাগারে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।
এ সময় পাঠাগারে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের পাঁচ শতাধিক বই বস্তায় ভরে নিয়ে যান।
এরপর খেলাফত নেতা গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, জয়বাংলা কর্মসূচি। বি. দ্র. যাদের বোঝা দরকার তারা বুঝতে পারছে।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে খেলাফত নেতাকর্মীরা বইগুলো ইউএনও কার্যালয়ে জমা দেন।