ছাত্রলীগ সন্দেহে যুবককে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে দিল ছাত্রদল
Published: 15th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক যুবককে মারধরের পর জুতার মালা গলায় পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার ওই যুবক পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে আটক করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। এরপর তাঁকে মারধর করেন তাঁরা। পরে তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ তাঁকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মারধর ও জুতার মালা পরানোর সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি শিকার করে ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী জানান, ওই যুবক ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিএফসির (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই উপপক্ষের নেতা–কর্মীরা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। ছাত্রদল কর্মীদের মারধরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ওই যুবক।
জানতে চাইলে ছাত্রদল কর্মীদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২২ সালের দিকে আমি গোপনে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এটি জানতে পেরে আমাকে শাহ আমানত হলের ৩০২ নম্বর কক্ষে নিয়ে তিনি মারধর ও নির্যাতন করেছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকে মারধরের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। তাই তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে মারধরের সঙ্গে ছাত্রদল কর্মীদের যুক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল নেতা–কর্মীসহ অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। তাই ছাত্রদল ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।
পুলিশে সোপর্দ করার সময় ওই যুবক বলেন, তিনি শাহ আমানত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না। তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে মারধর করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসা নেওয়া ওই শিক্ষার্থীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে প্রশাসনকে বিপাকে পড়তে হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ছ ত রদল র ম রধর র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।